অভিনন্দন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় : ঝুঁলে থাকা ইস্যুগুলোর মীমাংসা হোক

0

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছে। নন্দীগ্রামে নিজের আসনে মমতা হোঁচট খেলেও ২১৪ আসনে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে তাঁর দল। বলতে গেলে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে একাই লড়াই করেছেন তিনি। অভিনন্দন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৭৪ আসন নিয়ে বিজেপি এবার বিরোধী দলে। গত বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে মাত্র তিন আসন পেয়েছিল বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখলে বিধানসভা নির্বাচনকে নিজেদের জন্য লড়াই হিসেবে নিয়েছিল বিজেপি। ভোটের প্রচারে ১২ বার পশ্চিমবঙ্গে এসে ১৮টি জনসভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জনসভা করেছেন ৬২টি। কেন্দ্রীয় অন্য নেতারাও ছুটে বেড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ। তৃণমূল থেকে মমতার ডানহাত সুবেন্দু এবং সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তীকে দলে নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। কেন্দ্রে শাসকদলের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দলগুলোকে জোটবদ্ধ করতে সক্রিয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার বিজেপিবিরোধী জোটের নেতৃত্বে চলে আসেন কি না সেটাও এখন দেখার বিষয় হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ আছে। সীমান্ত লাগোয়া ভারতের পাঁচটি রাজ্যের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক আছে বাংলাদেশের। এ ছাড়া ওই রাজ্যগুলোর মধ্যে তিনটিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনও আছে। আন্তঃসীমান্ত অনেক ইস্যুতে ওই রাজ্যগুলোর সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অনেক মানুষের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। একই ভাষা ও সংস্কৃতির বন্ধনে বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সম্পর্ক। স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের দিকে বাংলাদেশের পর্যবেক্ষকমহলের দৃষ্টি ছিল। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের বিষয়ে আগ্রহের অনেক বিষয় ছিল, ছিল বাধভাঙ্গা আগ্রহ। বাংলাদেশের মানুষের প্রধান আগ্রহ ছিল মমতা ব্যানার্জী অর্থাৎ তৃণমূল জিতেছে কি-না। মানুষের ফেইসবুক থেকে স্পষ্ট ছিল তারা চাচ্ছিলেন না পশ্চিম বাংলায় উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিজেপির শাসন প্রতিষ্ঠা হোক। মানুষের শঙ্কা ছিল বিজেপির জয়ে এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবনতি ঘটতে পারে। তারা চাচ্ছিলেন নানা কারণে যেটুকু ক্ষতি হয়েছে তা যেন আর না বাড়ে। মমতার সংখ্যালঘু প্রেম, সব ধর্মের সমান মর্যাদা ও উদার গণতন্ত্র প্রত্যাশাই ছিল মানুষের। এই নির্বাচনে আরেকটি বিষয় বেশ স্পষ্ট ছিল। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ক্রমান্বয়ে যেন নির্বাচনটি তাদের নির্বাচন গণ্য করতে শুরু করেছিল। তাদের মন্তব্য ছিল এমন যে সুযোগ থাকলে তারা ভোটে অংশ নেবে। বিশ্লেষকদের মতে এর প্রধান কারণ দীর্ঘ ১৪ বছর ভোটাধিকার বঞ্চনার যন্ত্রণা। ভোট পাগল মানুষ পাশের বাড়ি ভোটের উৎসব আমেজ দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। আরও একটি কারণও লক্ষণীয় ছিল তাদের লেখায়, মনে হয়েছে তারা যে ভোট বঞ্চিত তার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াই চলছে। যা হোক শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও ফল দেখে সবাই সন্তষ্ট হয়েছে।
অপরদিকে, আমাদের শাসন ও রাজনীতিকদের ভাবনা ছিল দেশের স্বার্থ। এর মধ্যে প্রধান বিষয় তিস্তার পানিচুক্তি। ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকার পশ্চিমবঙ্গের সম্মতি সাপেক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ভারতের বিভিন্ন পর্যায় থেকে ইঙ্গিত ছিল, পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে নির্বাচনের পর তারা দ্রুত তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিবণ্টন ইস্যু সুরাহা করতে চায়। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সম্পৃক্ত নদ-নদীগুলোর পানি ইস্যুর সুরাহা করতে হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তাঁর আগের অবস্থান বদলান কি না সে বিষয়েও সবার দৃষ্টি থাকবে। অন্যদিকে, বিজেপি তার নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিল, ক্ষমতায় এলে রাজ্যের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে তারা আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকপঞ্জি করার সিদ্ধান্ত নেবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বিজয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে পারে তিস্তার পানিচুক্তি নিয়ে। সত্যিকার অর্থেই ভালো নেই তিস্তাপারের মানুষ। মরুকরণের দিকে যাচ্ছে একটি বড় অঞ্চল। অনেকের মতে, মমতার কারণে আটকে আছে তিস্তাচুক্তি। তিস্তা ইস্যু নিয়ে মমতার অবস্থান আছে। অন্যদিকে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, ভারত সরকারের উচিত পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি সিকিমকেও তিস্তা নিয়ে আলোচনায় যুক্ত করা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরা আশা করতে পারি, নিকট-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝুঁলে থাকা ইস্যু মীমাংসায় সম্মত করতে সক্ষম হবেন। আমরা তাদের সাফল্য কামনা করি।