শ্রমিক সংকটে বোরো ঘরে তুলতে ব্যয় বেড়েছে কৃষকের

0

আকরামুজ্জামান॥ লকডাউনের কারণে বোরো আবাদ নিয়ে শ্রমিক সঙ্কট দূর করতে যশোরের বাইরের জেলা থেকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে শ্রমিক সরবরাহে কৃষককে সহযোগিতার কথা বলা হলেও যশোরে আশানুরুপ শ্রমিক আসেনি বলে জানিয়েছেন চাষিরা। চাহিদার তুলনায় শ্রমিক কম হওয়ায় স্থানীয় শ্রমিকদের বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে তাদের। জেলার বিস্তীর্ণ মাঠে এখন বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত চাষি। তবে ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কায় উৎকণ্ঠিত তারা।
বোরো চাষিরা জানান, যশোর জেলার আট উপজেলার বোরো আবাদ ঘরে তুলতে মূলত স্থানীয় চাষিদের পাশাপাশি পাশের সাতক্ষীরা ও খুলনার কয়রা থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক ব্যবহার হয়। তবে এ বছর করোনার কারণে লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকায় বাইরের জেলার শ্রমিক আসেনি বললে চলে। যেকারণে স্থানীয় চাষিরাই এখন বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন । তবে এসব শ্রমিকদের গতবারের চেয়ে বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। চৌগাছা উপজেলায় কৃষকরাই জোট বেধে এক এক জনের ক্ষেতের ধান কাটছেন পালা করে।
জেলার সদর উপজেলার ইছালী এলাকার চাষি হাদিউজ্জামান মিলন জানান, এবছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে ধানকাটা শুরু হয়েছে। অন্যান্য বছর সাতক্ষীরা ও কয়রা এলাকা থেকে শ্রমিক এসে তাদের ক্ষেতের ধান কাটলেও এবার স্থানীয় চাষিদের দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই করা হচ্ছে।
একই এলাকার চাষি আকবর আলী বলেন, গত বছর এক বিঘা জমির ধান কাটা ও মাড়াই করতে কৃষকরা ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা নিলেও এবার সেখানে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। করোনার কারণে শ্রমিক স্বল্পতায় মজুরি বেড়ে গেছে। যেকারণে বিঘাপ্রতি তাদের তিন থেকে চার হাজার টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে।
বাঘারপাড়ার মহিরন গ্রামের আরিফ বিল্লাহ বলেন, এবছর বোরো ধান ঘরে তুলতে মহাবিপদে আছেন তারা। একদিকে শ্রমিক সঙ্কট, অন্যদিকে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু অপুষ্ট ধান কাটতেও পারছিনা। পাশাপাশি শ্রমিকরা সময় দিতে পারছেনা। যেকারণে নিজেরাই এখন ধান কাটতে শুরু করেছি।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র সরকার বলেন, এবছর করোনার কারণে যশোরের বাইরের জেলার শ্রমিক কম এসেছে। অন্যান্য বছরে ২৫ থেকে ৩০ হাজার শ্রমিক আসলেও এবার ১০ হাজার মতো শ্রমিক এসেছে বলে আমরা ধারণা করছি। এসব শ্রমিকরা যাতে নির্বিঘেœ যশোরে আসতে পারেন সে ব্যাপারে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাহী অফিসাররা তাদের প্রত্যয়ন দিয়েছে।
তিনি বলেন, এবছর জেলায় বোরো আবাদ ঘরে তুলতে কৃষকদের কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিন দিয়ে সহযোগিতা করেছি। তবে জেলার জন্য ২০ টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার বরাদ্দ থাকলেও আমরা আপাতত ৬ টি পেয়েছি। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে জেলার ৮ উপজেলার ৬০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। বাকি ৪০ শতাংশ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটা হবে বলে আশা করছি। কারণ ঝড়-বৃষ্টির আগেই কৃষককে ধান কেটে ঘরে তুলতে আমরা উৎসাহিত করছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে যশোরে ১ লাখ ৫৮ হাজা ৮৮০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। সম্প্রতি হিট শকে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬০ হেক্টর জমির আবাদ নষ্ট হয়েছে। বাকি যে ধান আছে তার ফলন ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মন ধান হবে বলে কৃষি বিভাগ আশা করছে। সময়মত ধান কেটে ঘরে তুলতে পারলে কৃষক বোরো আবাদে এবার ভালো লাভ করবে বলে আশা করছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিসের সূত্রে জানা গেছে, এবছর যশোরাঞ্চলে একটু বিলম্বে বৃষ্টিপাত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও আবহাওয়া সদর দপ্তরের এক আগাম বার্তায় আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে এ অঞ্চলে ঝড় ও মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পূবালি ও পশ্চিমা লঘুচাপের সংমিশ্রণের বিলম্বের কারণে এবার দেরিতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে। যেকারণে এবছর যশোরের চাষিরা কোনো ঝামেলা ছাড়াই ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবে বলে কৃষি বিভাগ আশা করছে।