যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ ওয়ার্ডে তিনটি বেড চালু হলো ব্যক্তি সহায়তায়

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে ও ব্যক্তি সহায়তায় ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ওয়ার্ডের ৩টি বেড চালু হলো। সরকারিভাবে আইসিইউ ওয়ার্ডে ১১টি বেড দেওয়া হলেও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে এত দিন চালু করা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন যশোরে করোনা রোগী বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে আইসিইউ সেবা জরুরি হয়ে পড়েছে। অবশ্য এই বেড প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা যায়, যশোরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইসিইউ সুবিধা না থাকায় শতকরা দশমিক ৫ ভাগ রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলার বাইরে চলে যান। অনেক সময় চিকিৎসকরাও তাদের ঢাকা কিংবা খুলনায় স্থানান্তর করেন। এ পরিস্থিতি বিবেচনা করে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি গত ১৭ এপ্রিল এক সভায় ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তায় জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডের ১১টি বেডের ভেতর ৩টি বেড আপাতত চালু করার উদ্যোগ নেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই তিনটি বেড চালু করার মধ্য দিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আইসিইউ চিকিৎসাসেবা চালু হয়েছে। তবে কোভিড-১৯ রোগীর তুলনায় আইসিইউ ৩টি বেড চালু যথেষ্ঠ নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য জেলা পরিষদ থেকে আরও ৫টি বেড চালু করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাতেও প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না।
কারণ গতকাল পর্যন্ত যশোরে ৬ হাজার ৬৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শতকরা দশমিক ৫ ভাগ লোকের আইসিইউ চিকিৎসার প্রয়োজন হলে যশোরে শতাধিক করোনা রোগীর জন্য দরকার আইসিইউ বেড যা নেই যশোরে। এ অসুবিধার কারণে অনেক রোগী করোনায় আক্রান্ত হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য আগেই যশোর ছেড়েছেন। তারা ঢাকা কিংবা খুলনায় গিয়েছেন। আবার অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসকরা রোগী অন্যত্র স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছেন। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়ের সাথে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, শতকরা ৮০ ভাগ করোনা রোগী হোম আইসোলেশনে আরোগ্য লাভ করেন। শতকরা ১ ভাগ রোগী আসেন হাসপাতালে। আক্রান্তের মধ্যে দশমিক ৫ ভাগের নিচে মানুষ মারা যায়। তারও কম হতে পারে। এ পর্যন্ত ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে যশোরে। ৫ হাজার ১৬৩ জন সুস্থ হয়েছেন। সেই মোতাবেক আপাতত ১১টি বেড চালু হলে কোনরকম চলবে। জেলা পরিষদ ৫টি দিলে ৮ বেড চালু হবে আগামী ১৫ দিনে। তত্ত্বাবধায়ক আরও বলেন, আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেনসহ যে সাপোর্ট লাগে তা দিতে পারবেন বলে জানান তিনি।
গতকাল দুপুর ২টার দিকে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুজ্জামান পিকুল, করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ডা. শেখ আবু শাহীন, প্রেস ক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে যান। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় অতিথিদের সাথে নিয়ে আইসিইউ ওয়ার্ডে যান। ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনেসথেসিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এবিএম আহসান হাবীব। তাদেরকে আইসিইউ-এর চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ ও গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করেন।
২০২০ সালের জুনে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ ওয়ার্ড তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ১১টি আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেটর, পালস অক্সিমিটার, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ডিপোসহ অন্যান্য জিনিসপত্র সরবরাহ করা হয়েছিল। তবে, চিকিৎসাসেবা চালু করার জন্য মনিটর, সিরিঞ্জ পাম্পসহ কিছু জিনিসের অভাব থাকার কারণে চালু করা যাচ্ছিল না। এদিকে, করোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় আইসিইউ-এর প্রয়োজনীয়তার বৃদ্ধি পায়। তখন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি ব্যক্তি সহযোগিতায় আপাতত আইসিইউ চালু করার উদ্যোগ নেয়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, এটি সরকারি হাসপাতাল। আইসিইউ চিকিৎসা নিতে কোনো টাকা-পয়সা বা খরচ লাগবে না। তবে এ চিকিৎসায় ওষুধের মূল্য অনেক। রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনে চিকিৎসা নিতে হবে। আর হাসপাতালে সরকারিভাবে যা থাকবে তা রোগীদের বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে।