যশোরে টাউন হল মাঠের কাপড়ের মার্কেটে আগুন, ১৫ দোকান ভষ্মীভূত

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বুধবার মধ্যরাতে যশোর টাউন হল মাঠের কাপড়ের মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে ১৫ টি কাপড়ের দোকান মালামালসহ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুনে ব্যবসায়ের সর্বস্ব হারিয়েছেন বলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান। বৈদুতিক শর্টসার্কিটের কারণে এ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও ব্যবসায়ীরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন।
জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, রাত সাড়ে ১১ টার দিকে মার্কেটের পূর্ব পাশে কালু মিয়া ও শাহিনের দোকানে হঠাৎ স্থানীয় লোকজন আগুন জ্বলতে দেখেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন পাশের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে ফায়ার সার্ভিস অফিসে খবর দেন তারা। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে সক্ষম হন। তবে তার আগেই আশপাশের ১৫ টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তারিক হাসান বিপুল বলেন, রোজা ও ঈদ উপলক্ষে এসব দোকানগুলোতে ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই বিক্রির জন্য পোশাক এনে মজুদ রেখে ছিলেন। লকডাউন শেষে এসব কাপড় সাজিয়ে দোকানগুলো জমিয়ে তোলার অপেক্ষায় ছিলেন তারা। প্রতিটি দোকানে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মালামাল ছিলো। কিন্তু আগুনে তা সব শেষ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, মার্কেটের পূর্ব পাশের কালু মিয়া, শাহিনুর রহমান, পলাশ, মকবুল হোসেন, আব্দুল গফুর, বাবু, আমির হোসেনসহ ১৫ জন ব্যবসায়ীর দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ১৫ টি দোকানে প্রায় কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন।
যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক কামালউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বুধবার রাতে আমাদের কাছে খবর আসে কালেক্টরেট সুপার মার্কেটে আগুন ধরেছে। এর পর খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি টিম আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত পৌনে একটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তিনি বলেন, মার্কেটের পেছনে জেলা পরিষদের পাশ থেকে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন ধরেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারনা করছি। তবে এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হবে। ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ কত হয়েছে তা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জেনে নিরুপণ করা হবে বলে তিনি জানান।
এ দিকে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীরা জানান ঈদ উপলক্ষে তারা ধার-দেনা করে মালামাল তুলেছিলেন। কিন্তু আগুন লেগে সব শেষ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ী আকবর মোল্যা বলেন, আমার দোকানে ছাই ছাড়া আর কিছুই নেই । লোন করে পাঁচ লাখ টাকার জামা-কাপড় তুলেছিলাম। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেছে। এখন কী করে বেচে থাকবো সে চিন্তা করছি।
নিউ চয়ন বিতানের মালিক আশিকুর রহমান বলেন, ‘তিনটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ঈদের মালামাল তুলেছিলাম। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একই কথা বলেন পলাশ গার্মেন্টসের মালিক পলাশ মাহমুদ। তার দোকানে থাকা চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার বিভিন্ন পোশাক পুড়ে ছাই হয়েছে। ঋণ করে আনা টাকা দিয়ে মাল তুলেছিলাম। এখন সেই ঋণ শোধ করার উপায় দেখছি না। কপালে কী আছে আল্লাহই জানেন বলে তিনি কাঁদতে থাকেন।
এ দিকে অগ্নিকাণ্ডের পর প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সকালে জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান ঘটনাস্থলে যান। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সান্তনা দেন। এর আগে অগ্নিকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ছিলেন।
দুপুরে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন ঘটনাস্থলে যান। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেন এবং সহানুভূতি প্রকাশ করেন।
এদিকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ ব্যবসায়ীকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে তিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলামের হাতে ১৫ টি দোকানের প্রত্যেকের জন্য ৫ হাজার করে ৭৫ হাজার টাকা তুলে দেন। এসময় সেখানে ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তারিক হাসান বিপুলসহ আরও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।