গত বছরের মতো অবস্থা এবারেও উৎসবে ব্যবসা করতে না পেরে শঙ্কিত যশোরের ব্যবসায়ীরা

0

আকরামুজ্জামান ॥ করোনা প্রভাবের কারণে সর্বাত্মক লকডাউনে বন্ধ রয়েছে যশোরের সব বিপনিবিতান ও দোকানগুলো। থমকে আছে চিরচেনা বাজারগুলো। এ অবস্থায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে এ পেশার সাথে যুক্ত কয়েক লাখ মানুষ। তাদের বুকে এখন রাজ্যের হতাশা এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে কীভাবে সংসার চালাবেন। তাই এ পরিস্থিতিতে সীমিত সময়ের জন্য হলেও দোকান খুলে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রতিবছর রোজার শুরুর আগ থেকেই যশোর এইচএম রোড, মুজিব সড়ক, কালেক্টরেট মার্কেট এলাকায় মানুষের ভিড়ে পা ফেলার কোনো উপায় থাকতো না। থাকতো না দর্জির দোকান-মালিক ও কর্মচারীদের দম ফেলার সময়। অথচ আজ সেখানকার চিত্র একেবারেই উল্টো। করোনায় ভিন্ন যশোরের রমজানের চিরাচারিত রূপ। বন্ধ ঘরে আবদ্ধ এখন ঈদের প্রস্তুতি। অথচ সামনে আদৌ ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠান খুলতে পারবেন কীনা তা নিয়ে চরম সংশয়ে আছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, শুধুমাত্র যশোর শহরেই রয়েছে প্রায় তিন হাজার ছোটবড় পোশাকের দোকান। রয়েছে ৫ শতাধিক দর্জির দোকান। বছরের দুটি ঈদ ও বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মূলত এসব দোকানগুলোতে বেচাকেনার ধূম পড়ে।
যশোর এইচএম রোডস্থ পাদুকা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মফিজুল হক বলেন, করোনার কারণে গত বাংলা নতুন বছরেও তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারেননি। এবছর ইচ্ছা ছিলো পহেলা বৈশাখে ভালো ব্যবসা করবেন। অথচ লকডাউনের কারণে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আগেভাগে প্রস্তুত রাখা পণ্যগুলো পড়ে রয়েছে। যেকারণে প্রায় ৫০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে এ পেশার ব্যবসায়ীদের। তিনি বলেন, আশা ছিলো রোজার ঈদ উপলক্ষে এসব মালামাল বিক্রি করবো। কিন্তু তার কোনো আলামত পাওয়া যাচ্ছে না। ৬ রোজা পেরিয়ে গেলেও এখনও তার কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ জানাবো আমরা যাতে সীমিত পরিসরে হলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে রাখতে পারি।
শহরের এইচএমএম রোডের প্রসিদ্ধ বিপনী বিতান এইচএম ক্লথ স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী আবু হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছরের করোনার কারণে চরম লোকসান করেছি। এ বছর ব্যবসার উপযুক্ত সময়ে এখন আমরা হাত গুটিয়ে ঘরে বসে আছি। আমাদের সাথে আমাদের কর্মচারীরাও চরম বিপাকে আছেন। তারা কীভাবে সংসার চালাবে সেটিই ভেবে পারছেনা। তিনি বলেন, গত বছর রোজার মাঝামাঝি সময়ে আমরা ব্যবসায়ীরা নিজস্ব উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলে রাখার ব্যাপারে প্রশাসনের সাথে প্রতিশ্রুতবদ্ধ ছিলাম। এবছরও একই নিয়মে প্রয়োজনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায় কীনা সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
একই কথা বলেন, যশোর সিটিপ্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এসআর আজাদ। তিনি বলেন, সরকার দেশের অর্থনীতির কথা ভেবে পোশাক কারখানা খুলে রেখেছে। এ কারণে ঈদ উপলক্ষে কাপড়ের দোকানসহ অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে খুলে দেয়া উচিত। অন্যান্য বছরে এই সময়ে ছিট কাপড়ের দোকানে পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়। দর্জির দোকানগুলোতে অর্ডার প্রায় শেষ হয়ে যায়। অথচ এখন আমরা ঘরবন্দী হয়ে আছে। তাই আমাদের দাবি সীমিত পরিসরে হলেও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে দোকানপাট খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আলহাজ মিজানুর রহমান খান বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যুক্ত কর্মচারীদের সংসার জীবনে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ অবস্থায় সরকারের উচিৎ এসব কর্মচারীদের তালিকা নিয়ে তাদের বিশেষ প্রণোদনার আওতায় আনা। একই সাথে সবজি ও মুদি দোকান যেভাবে খুলে রাখা হয়েছে সেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব দোকানপাট সীমিত পরিসরে হলেও খুলে রাখার ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিৎ।
ঈদ উপলক্ষে দ্রুত যশোরের এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে কীনা ? এমন প্রশ্নের জবাবে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, এটি পুরোপুরি নির্ভর করছে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর। আপাতত আমাদের কোনো কিছু করার নেই। তবে আমি যতটুকু জানি ঈদের আগেই লকডাউন শিথিল করা হবে। ইতিমধ্যে সড়ক ও সেতু মন্ত্রী এ ধরনের আভাস দিয়েছেন বলে তিনি জানান।