প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দরকার

0

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও উচ্ছেদের ঘটনা বন্ধ করা যায়নি। সর্বশেষ আমরা দেখলাম সুনামগঞ্জের শাল্লার একটি গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা। দেশে বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনার কিছু সাধারণ লণ রয়েছে। একশ্রেণীর কথিত সচেতন সমাজ ও এর সাথে সংবাদমাধ্যমের একটি উৎসাহী অংশ এ জন্য ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান না করে ইসলাম ধর্মীয় সংগঠন ও তার নেতাদের ওপর এর দায় চাপিয়ে দিতে চায়। অন্য দিকে দেখা যায়, এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রশাসনের নির্লিপ্ততা। শাল্লার ঘটনায়ও আমরা এই লণ দেখতে পেলাম। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনাগুলোর প্রতিকার হচ্ছে না। কিন্তু এগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের একটি অংশকে যেনতেন প্রকারে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কাজে। এর পেছনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অদৃশ্য যোগসাজশ আছে বলে অনেকের ধারণা। এতে ভুক্তভোগী হিন্দুরা কোনোভাবেই উপকৃত হয় না।
শাল্লার ঘটনা ঘটার সাথে সাথে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই অভিযুক্ত করা হলো স্থানীয় হেফাজতে ইসলামকে। এক হিন্দু যুবকের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হলো। তিনি হেফাজতের নেতা মামুনুল হককে কটূূক্তি করেছেন, তাই হেফাজতের লোকেরা একজোট হয়ে হিন্দু বসতিতে আক্রমণ করেছে। সংবাদমাধ্যম এমনভাবে সংবাদ পরিবেশন করল, ধর্মীয় গোষ্ঠীটি অভিযুক্ত হয়ে গেল। অন্য দিকে কয়েকটি সাম্প্রদায়িক সংগঠন এর সাথে মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে গতানুগতিক অভিযোগ আনে। ঘটনার দু’দিন পর দেখা গেল, এই হামলার কারণ স্থানীয় মতাসীন দলের নেতার সাথে স্বার্থের দ্বন্দ্ব। তিনি যুবলীগের নেতা ও ইউপি মেম্বার। স্থানীয় হিন্দু পল্লীর কৃষিকাজের তি করছিলেন। ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করে পাম্প ব্যবহার করে পানি সেচ করায় পানির সঙ্কট দেখা দেয়। এ নিয়ে হিন্দু যুবক ফেসবুক লাইভে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। তখন এই যুবলীগ নেতা তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। মামুনুল হকের বিরুদ্ধে কটূক্তির ঘটনাটি সুকৌশলে কাজে লাগিয়ে তিনি প্রতিশোধ নিতে হিন্দু গ্রামে হামলার উসকানি দেন। এর সাথে ধর্মীয় সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ কটূক্তি করার জন্য আগেই আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সংশ্লিষ্ট যুবককে গ্রেফতার করেছে। এ দিকে যুবলীগের এই মতাশালী ব্যক্তি এ ধরনের হামলার ঘটনার যে আয়োজন করছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা সেটি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। তারা স্থানীয় পুলিশের কাছে আগেভাগে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপর্যুপরি আবেদন জানান। কোনো ধরনের হামলা হবে না বলে পুলিশ তাদের আশ্বস্ত করে। বাস্তবে পুলিশ যদি অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ব্যবস্থা নিত তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারত না।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনাগুলোর বেশির ভাগ সম্পত্তিকেন্দ্রিক শত্রুতার জেরে ঘটে থাকে। এগুলো সাধারণত করে থাকে মতাসীন দলের লোকেরা। হয় তার সম্পত্তি দখল করার দুরভিসন্ধি নিয়ে ঘোঁট পাকাতে থাকে, না হয় অন্য কোনো অর্থনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য তা ঘটায়। যেমনটা সর্বশেষ শাল্লায় ঘটতে দেখা গেল। এ ধরনের ঘটনা বন্ধ না হওয়ার কারণ ঘটনার নিরপে তদন্ত না হওয়া ও প্রকৃত দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা না করা। রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা, নাসিরনগর ও ভোলার হামলা সংখ্যালঘুদের ওপর বড় হামলার উদাহরণ। এসব ঘটনার পূর্বাপার যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাবো, ঘটনাগুলোর যথাযথ তদন্ত হয়নি। প্রকৃত দোষীরা শাস্তির আওতায় আসেনি। কিন্তু ঘটনাগুলোকে যুৎসইভাবে ব্যবহার করা হয়েছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের দৃষ্টান্ত হিসেবে। এর দায়দায়িত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ওপর তুলে দেয়ার প্রচারণা অব্যাহত আছে। যারা সংখ্যালঘুদের নিয়ে আন্দোলন করেন তারা প্রকৃতপে এ দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ চান কি না সেই প্রশ্ন বহু আগেই উঠেছে। কারণ তারা প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে এর দায়ভার একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দিয়ে ফায়দা নিতে বেশি উৎসাহী। অন্য দিকে এ দেশের মিডিয়াও ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের চেয়ে ‘চিলে কান নিয়ে গেছে’ বলে প্রচারণার অংশ হয়ে থাকে। এ থেকে মুক্ত হতে হলে প্রতিটি ঘটনার স্বাধীন নিরপে তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।