ঝিনাইদহে জ্বিনের বাদশার প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী

0

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহে কথিত জ্বিনের বাদশার কাছে সর্বশান্ত হচ্ছে মানুষ। মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গিয়ে ‘বড়লোক’ হওয়ার গল্প শোনায় জ্বিনের বাদশা। এ ভাবে গ্রামের সহজ সরল ১০ জন মানুষকে ফোন করলে অন্তত ২/৩ জন তাদের টার্গেটে পরিণত হয়। আবার মুসলিম হলে দুর্বল জায়গায় আঘাত করে ফায়দা লুটে নেয়। ফোন করে প্রথমে কোরআন শরিফ ও জায়নামাজ দাবি করে জি¦নের বাদশা সেজে প্রতারকরা। সেগুলো পেয়ে খুশি হয়ে একটি ‘স্বর্ণের পুতুল’ উপহার দেয়। এবার তাদের গড়া মসজিদে কোরবানির গরু কেনার টাকা দিলে রাতারাতি ধনী করে দেবে বলে জানালে প্রলোভনে পড়ে লাখ টাকা দেন কেউ কেউ। প্রতারণার শিকার মিনাজ উদ্দীন একজন ব্যবসায়ী। জি¦নের বাদশার ফাঁদে পড়ে যা হবার তাই হয়েছে। মিনাজ টাকা খুইয়ে এখন দিশেহারা। কথিত জ্বিনের বাদশা নিয়ে সমাজে এ রকম হাজারো গল্পের কথা সবারই জানা। প্রতারিত মিনাজ উদ্দীন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের গোপালপুর বাজারের ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী ও দুর্গাপুর গ্রামের আছমত মন্ডলের ছেলে।
মিনাজ উদ্দীন বলেন, ‘এক রাতে আমার মোবাইল ফোনে কল আসে। রিসিভ করার পর প্রথমে জি¦নের বাদশা পরিচয় দিয়ে বলে ‘তুই কি নামাজ পড়িস?’ উত্তরে আমি বলি নামাজ পড়ে আসলাম। তখন সে বলে ‘তুই এখনই দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নে।’ নামাজ শেষ হলে বলে ‘আমি জি¦নের বাদশা, দিনাজপুর সৌর মসজিদে থাকি। ইমামের কাছেই থাকি এবং তার মাধ্যমেই কথা বলছি। তোর কাছে বিশেষ আবেদন, আমাদের এখানে মসজিদে তিনটা কোরআন শরিফ এবং একটা জায়নামাজ দিতে হবে।’ রাত সাড়ে ১২ টার দিকে আমাকে ফোন দিয়ে বলে ‘তুই আমার শর্ত রাখিসনি। তোর সন্তানের মুখ দিয়ে রক্ত উঠে মারা যাবে, তুই কি তোর তি চাস?’ এ কথা শোনার পর ভয়ে আমি তাদের বিকাশ নম্বরে ১ হাজার ৫০ টাকা পাঠিয়ে দিই। এভাবে দিনের পর দিন নানা প্রলোভন দেখিয়ে আমার কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারক চক্রটি সর্বশেষ বলে ‘আমরা ৭০ হাজার সাহাবী এবং অলিআউলিয়া মিলে তোর জন্য দোয়া করছি। তুই নিকটস্থ আটলিয়া বাজারে আয়।’ সেখানে গিয়ে আমি কিছুই পাইনি। পরে জি¦নের বাদশা বলে ‘পাশেই দেখ টিউবওয়েল আছে সেখানে যা, ওখানে দেখ একটা বদনা আছে।’ বদনাটা উঁচু করে আমি স্বর্ণের রঙের পুতুল দেখে হতবাক হয়ে যাই। তখন আমার বিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। সে আমাকে বলে ‘তুই সোজা বাড়ি গিয়ে পুতুলটি ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখবি এবং এ কথা কাউকে বলবি না। জানাজানি হলে বড় তি হবে।’ এ ভাবে আমি প্রথমে ৪২ হাজার, তারপর ৪০ হাজার ও সর্বশেষ ২১ হাজার টাকা বিকাশ করে সর্বশান্ত হয়ে পড়ি। মধুহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, মিনাজ বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসা করে আসছে। সে একজন সহজ-সরল মানুষ। জি¦নের বাদশা সেজে প্রতারকরা তার সরলতাকে কাজে লাগিয়ে লাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রতারক চক্রটি এলাকার হতে পারে। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।