চলতি বছরেও কয়লা ব্যবহার বাড়িয়ে যাচ্ছে শীর্ষ ৩ দেশ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥জীবাশ্ম জ্বালানি কয়লার সবচেয়ে বড় ভোক্তা হলো যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত। বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনকাজে এসব দেশে কয়লা ব্যবহার করা হয়। ফলে কার্বন নিঃসরণের দিক থেকেও দেশ তিনটি শীর্ষে। করোনা মহামারীর শুরুতে যখন কল-কারখানা বন্ধ ছিল, স্থবির ছিল জনজীবন তখন বিশ্বজুড়ে অবিশ্বাস্য হারে কমে গিয়েছিল কার্বন নিঃসরণ। কারণ তখন কমে গিয়েছিল কয়লা পোড়ানোর পরিমাণ। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতেই দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। এ তিন দেশ যে পরিমাণ কয়লা পোড়ানোর পরিকল্পনা করেছে, তাতে মহামারীর কারণে কিছুদিন যে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমেছিল সেটাই আর মনে হবে না। খবর ব্লুমবার্গ।
২০২০ সালের চেয়ে এ বছর ১৬ শতাংশ বেশি কয়লা পোড়াবে মার্কিন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। ২০২২ সালে তা বাড়বে আরো ৩ শতাংশ। গত সপ্তাহেই দেশটির শক্তি তথ্য কেন্দ্র এ পরিসংখ্যান জানিয়েছে। এর পরের দেশ ভারত ও চীন। তাদেরও এ বছর কয়লা পোড়ানোর পরিমাণ কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। যত বেশি কয়লা পুড়বে, তত বাড়বে কার্বন নিঃসরণ। ফলে গ্রিনহাউজ গ্যাস কমাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলোর যে উদ্যোগ তা এ বছরও বাধাগ্রস্ত হবে।
নিউইয়র্কভিত্তিক ন্যাশনাল রিসোর্সেস ডিফেন্স কাউন্সিলের বিশ্লেষক আমান্ডা লেভিন বলেন, এ বছর কার্বন নিঃসরণ লক্ষণীয় হারে বাড়বে। তবে যদি জো বাইডেন গ্রিন এনার্জি পলিসির প্রয়োগ করেন, তাহলে হয়তো পরিবর্তনটা দেখা যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রে কয়লার ব্যবহার বৃদ্ধির কারণ মহামারীর প্রভাব হিসেবে বেড়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম। আর ভারত ও চীনের বিষয়টা হলো দেশ দুটিতে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে মূল উপাদান কয়লার ব্যবহার বাড়ায় সেখানে বেড়েছে কার্বন নিঃসরণ।
যদিও বাইডেনের কভিড-১৯ প্রণোদনা প্যাকেজে গ্রিন এনার্জির বিষয়ে কিছু বলা নেই, তবে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত একটি অবকাঠামো বিল অপেক্ষমাণ আছে, যেটির প্রয়োগ হলে যুক্তরাষ্ট্রে কার্বন নিঃসরণ কমার ক্ষেত্রে দারুণ অগ্রগতি হবে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে তার দেশ কার্বন নিরপেক্ষতা লক্ষ্য অর্জন করবে। সেই সঙ্গে এপ্রিলে চীন ও ভারতের সঙ্গে বাইডেনের একটি বৈঠকও হওয়ার কথা রয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার প্রত্যয় জানিয়েছেন। গত বছর তার এ ঘোষণায় বিশ্ববাসী কিছুটা অবাকই হয়েছিল। ভারতের পক্ষ থেকে এখনো এমন কোনো আশ্বাসের ঘোষণা আসেনি।
সম্প্রতি চীনের যে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে অবশ্য কার্বন নিঃসরণ কমানো-সংক্রান্ত কোনো বিষয় নেই। কারণ দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল কাঁচামালই হলো কয়লা। ধারণা করা হচ্ছে, সামনে বিস্তারিত শক্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে, যেখানে কার্বন নিঃসরণ কমাতে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে তার স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান কোল ইন্ডিয়া আশা করছে, এ বছর কয়লার ব্যবহার বাড়বে। কারণে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও সিমেন্ট শিল্পে সুদিন ফিরছে। অর্থাৎ মহামারীর আগে যেমন উৎপাদন ছিল, এ বছরও তেমন বা তার চেয়ে বেশি হবে। ফলে এসব কারখানায় জ্বালানি হিসেবে প্রয়োজন হবে কয়লার। তাই এ মাসেই নতুন খনি খনন ও সম্প্রসারণের জন্য ৬০০ কোটি ডলার অনুমোদন দিয়েছে তারা।
কোল ইন্ডিয়ার টেকনিক্যাল ডিরেক্টর বিনয় দয়াল বলেন, কয়লার সঙ্গে কার্বন নিঃসরণ ও জলবায়ুতে এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে তারা জানেন। কিন্তু এখনই এ জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের মতো অবস্থা ভারতের নেই।