অনুমোদনহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগ!

0

নড়াইল সংবাদদাতা॥ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুরে আশার আলো মহাবিদ্যালয়ের পাশে ২০১৯ সালে স্থাপিত মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নামে সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে। সেখানেই আবার পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে শুরু হয়েছে নিয়োগ বাণিজ্য। এ নিয়োগ বাণিজ্য সম্পর্কে জানতে পেরে স্থানীয় এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজা ডিও লেটার দিলেও পরবর্তীতে ওই ডিও লেটার বাতিল করার জন্য নতুন করে ডিও লেটার দেন। মো. রওশন আলম নিজে প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্য সেজে মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহাসীন আলীকে সভাপতি করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত, মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে একটি সাইনবোর্ড সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তুলারামপুর আশার আলো মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ রওশন আলম খানের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হতে বসেছে। অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদকে লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। ইতিমধ্যে কলেজের অধ্যক্ষের নিয়োগ-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনসহ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অনিয়ম-দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়েছে।
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন অধ্যক্ষ রওশন আলম। তুলারামপুর আশার আলো মহাবিদ্যালয়ের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন জে আর খান অটিজম ও প্রতিবন্ধী স্কুল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, রওশান আলম একজন দুর্নীতিবাজ ও রাজাকার পরিবারের সন্তান। তার বিরুদ্ধে নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলায় নাশকতাসহ প্রায় ১১টি মামলা রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ-বাণিজ্য করার জন্য এলাকায় একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে দুর্নীতি চালিয়ে আসছেন। অনিয়ম-দুর্নীতি সহজে বা বাধাহীনভাবে করার জন্য তার ভাইদেরসহ আত্মীয়-স্বজনদের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসিয়েছেন।
আশার আলো মহাবিদ্যালয়ে চাকরি দেয়ার নামে সদরের পেড়লী গ্রামের মঞ্জুর সরদার, হাতিয়াড়ার ইভা রানী সরকার, বাকলীর মৃনাল অধিকারীর কাছ থেকে টাকা নিলেও তাদের চাকরি দেননি বলে তারা অভিযোগ রয়েছে। তুলারামপুরের মালেক মোল্যার ছেলে নুর আলী মোল্যাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে তাদের ১৬ শতক জমি মহাবিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়ালের মধ্যে নিয়েছেন। পরবর্তীতে ওই ছেলের চাকরি না দেয়ায় মনের কষ্টে বাবা মালেক মোল্যা আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া উল্টো নিজের মেজ ভাইকে জমির দাতা দেখিয়ে কলেজের সভাপতি বানিয়েছেন রওশন আলম। প্রতিষ্ঠান প্রধান অধ্যক্ষ মো. রওশন আলম বলেন আ. মান্নান সরকার, নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বগুড়ার পরামর্শে আমরা এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছি। বিধি মেনেই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কোনো নিয়োগ বাণিজ্য হয়নি। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান বলেন, আমরা শুনেছি তারা পত্রিকায় সার্কুলার দিয়ে জনবল নিয়োগ করেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে নিয়ম আছে তা তারা অনুসরণ করেনি। শুধুমাত্র পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আর একটা রেজুলেশন করে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত’ যে কথাটি লিখেছেন সেটা সঠিক নয়। নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ আমাদের নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুরে পাশাপাশি দুইটি দেখতে পাচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং আশার আলো মহাবিদ্যালয় প্রায় একই প্রাঙ্গণে অবস্থিত। এটির ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার ও অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। আমরা এর বিরুদ্ধে অ্যাকশান নেব।