যশোরে কৃষকের মাঠে মড়ক প্রতিরোধী উচ্চ ফলনশীল আলুবীজের সফল চাষ

0

আকরামুজ্জামান ॥ মানসম্মত আলুবীজ সংকটে প্রতিবছর কৃষকেরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় কৃষদের মাঝে মড়কপ্রতিরোধী উচ্চ ফলনশীল আলুবীজ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। এরই অংশ হিসেবে যশোরে চলতি মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে উন্নতজাতের উচ্চ ফলনশীল মড়কপ্রতিরোধী আলুর ২০টি জাতের পরীক্ষামূলক চাষ হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কৃষকেরা এই ২০টি আলুর জাতের মধ্যে অন্তত ৬টি জাতকে খুবই মানসম্মত ও উৎপাদনমুখী হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
বিএডিসি যশোরের আলুবীজ জোন সূত্রে জানা গেছে, আলু বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইতোমধ্যে আলু রফতানি কার্যক্রম সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে। তবে রোগমুক্ত এবং রফতানি উপযোগী জাতের বীজ আলুর অভাব, প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণের অপ্রতুলতা, অপর্যাপ্ত হিমাগার সুবিধা, প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের অভাব এবং দেশের অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা আলু চাষাবাদে প্রধান সমস্যা হয়ে দেখা দেওয়ায় চাষিরা তুলনামূলকভাবে কম লাভবান হয়ে থাকেন। এ অবস্থায় সরকার মানসম্মত বীজ আলু উৎপাদন ও সংরণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরে যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নে বালিয়াঘাটা মাঠে চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের মাধ্যমে আলুর ২০টি জাতের পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়। আলুর জাতগুলো হলো আল্ট্রা, প্রাড্,া ক্যারোলাস, সানসাইন, সান্তানা, অ্যালুইটি, কুইনএনি, এডিসন, ৭৭৪, কেসিএ১০০৮১, বারি আলু ৩৭, বারি আলু ৩৫, বারি আলু ৪০, বারি আলু ৪১, এস্টারিক্স, ডায়মাট, ইলোভেটর ও অ্যালকেন্ডার। আলুর এ জাতগুলো বালিয়াঘাট মাঠে ওই এলাকার চাষি লুৎফর রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমানের ২ একর জমিতে চাষ করা হয়। শুক্রবার মাঠে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের আয়োজনে এ উপলক্ষে এক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। এসময় কৃষি বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কৃষকেরা তাদের ক্ষেতের আলু উত্তোলন করেন। বালাইঘাট মাঠে কথা হয় কৃষক লুৎফর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, ‘আলুর ২০টি পরীক্ষামূলক চাষে আমরা অন্তত ৬টি জাতের উজ্জল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। এরমধ্যে অ্যালুইটি, কুইনএনি, সানসাইন ও এডিসন খুবই ভালো মানের আলু। এই চারটি জাত সম্পূর্ণ রোগবালাইমুক্ত ও উচ্চ ফলনশীল। পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদী জাত।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা ভালো মানের আলু বীজের অভাবে নানা সমস্যায় পড়ি। এখন আমাদের ক্ষেতের উৎপাদিত আলু বীজ দিয়েই আগামীতে আলু চাষ করতে পারবো।’ একই কথা বলেন কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আধুনিক পদ্ধতিতে চাষের মাধ্যমে আমরা সহজেই আলুর ভালো জাত বেছে নিতে পারছি। এটি খুবই ভালো দিক। আমরা এখন থেকে আর আলু বীজের সঙ্কটে পড়বো না। এখন থেকে আমরা নিজেরাই আলু বীজ সংরক্ষণ করে লাভবান হতে পারবো।’ কৃষকের ক্ষেতে উৎপাদিত এ আলু চাষ সরেজমিনে দেখতে আসেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (বীজ) প্রকাশ কান্তি মন্ডল। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের দেশে আলু ও পাট বীজসহ বিভিন্ন ফসলের উন্নত বীজের সংকট রয়েছে। ফলে এসব কারণে আমাদের কৃষক অনেক সমস্যায় পড়েন। এসব দিক বিবেচনায় ‘মানসম্মত বীজ আলু উৎপাদন ও সংরণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল মানসম্মত জাত আবিষ্কার করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যশোরের এ মাঠ থেকে বাছাই করা এ আলুর জাত আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করবেন বলে তিনি আশা করেন। বিএডিসি আলু জোন যশোর অঞ্চলের উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের মধ্যমে আলু বীজ উৎপাদন করে আমরা বেশ সফল হয়েছি। এর ফলে কৃষক যেমন শিখতে পারছেন, তেমনি তারা নিজেদের জন্য উন্নত বীজ তৈরির পাশাপাশি ব্যবসায়িক ভিত্তিতে বীজ উৎপাদনে সম হচ্ছেন। কেননা বিএডিসির পে সব কৃষককে বীজ দেয়া সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘যশোরের বালাইঘাটের এ মাঠের ২০টি জাতের মধ্যে অধিকতর মানসম্মত ও রোগবালাইমুক্ত আলুর জাত বাছাই করে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হবে।’