ভাষাসংগ্রামের ৬৯ বছর পর আফসার উদ্দীনকে মরণোত্তর একুশে পদক

0

নড়াইল সংবাদদাতা॥ ভাষাসংগ্রামের ৬৯ বছর পর নড়াইলের কৃতি সন্তান ভাষাসংগ্রামী অ্যাডভোকেট মৌলভী আফসার উদ্দীন আহমেদ একুশে পদকে ২০২১ (মরণোত্তর) ভূষিত হয়েছেন। শনিবার (২০ ফেব্রয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রয়াত এই ভাষা সৈনিকের ছোট মেয়ে অধ্যাপক শারমিনা পারভীন হ্যাপী বাবার পক্ষে পদকটি গ্রহণ করবেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চয়ালি এ পদক প্রদান করবেন। ভাষা আন্দোলনের এত বছর পর রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়ায় তার পরিবার সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। এই ভাষা সৈনিকের বড় ছেলে শহীদ সাঈফ মিজানুর রহমান ২০১৪ সালে মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।
অ্যাডভোকেট আফসার উদ্দিনের মেজ ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সাঈফ হাফিজুর রহমান খোকন জানান, তার বাবা ছিলেন নড়াইল মহকুমা সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে তার বাবার নেতৃত্বে জেলা শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান অডিটোরিয়ামের সামনে এক স্তম্ভ বিশিষ্ট শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। শহীদ মিনার নির্মাণের কারণে ২১ ফেব্রুয়ারি রাতেই বাবাকে বাসা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হলেও তিনদিন পর আবার গ্রেফতার করা হয়। শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে একটি নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের কারণে ৮০ সালের দিকে প্রথম শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলা হয়। ভাষার প্রশ্নে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির কয়েকদিন পর ভাষা সংগ্রামীদের হত্যার প্রতিবাদে তিনি ১৪৪ ধারা ভেঙে নড়াইলে প্রথম প্রতিবাদ মিছিলে নেতৃত্ব দেন এবং জনসভায় সভাপতিত্ব করেন।
সাঈফ হাফিজুর রহমান খোকন আরও জানান, পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তার বাবা এই দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। এছাড়া তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক কমিটির সদস্যও নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৫৭ সালে তার বাবা নড়াইল মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ছিলেন এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধু ৭১-এর আগে কয়েকবার নড়াইলে এসেছেন এবং তাদের বাসায় থাকতেন। স্বাধীনতার পর ৭৩ সালে নড়াইল শহরে একটি জনসভায় নড়াইলে এসে তার বাবাকে মঞ্চের সামনে দেখে ভাই বলে জড়িয়ে ধরেন বঙ্গবন্ধু এবং মঞ্চে নিয়ে যান। তার বাবা মূলত বড় ছেলে মারা যাওয়ার পর রাজনীতি থেকে অবসরে চলে যান। আফসার উদ্দীন আহমেদের মেয়ে অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব আফরোজা পারভীন পপি বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাংলা ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার্থে তার বাবা নড়াইলের মানুষকে সংগঠিত করেন। ভাষা আন্দোলন সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রন্থে তার এসব ভূমিকার কথা উল্লেখ আছে। মহান স্বাধীনতা আন্দোলনে তার বাবার অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল সমুন্নত রাখতে তিনি গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে বেড়িয়েছেন। তিনি নড়াইল-তুলারামপুর-চাঁচড়া-চারখাদা-মাইজপাড়া-হবখালি-পাজারখালি এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি তুলারামপুর ইউনিয়নের চাঁচড়া গ্রামে মুক্তিযুদ্ধ প্রশিক্ষণ ক্যাম্প উদ্বোধন করেন। নড়াইল সদরের চাঁচড়া ও মির্জাপুরে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা তার নড়াইল শহরের বাসভবন এবং মালকানাধীন কয়েকটি বাড়িতে ব্যাপক লুটতরাজ ও ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেন। তার বাবাকে ভাষা সংগ্রামী হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান করায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং নিজেদের গর্বিত মনে করেন তিনি।