অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের ৫ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ অর্পিত সম্পত্তি প্রকৃত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে চিহ্নিত করা পাঁচটি সমস্যা এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১’-এর অধিকতর সংশোধনে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান। ভূমি সচিব বলেন, ‘অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক চিহ্নিত সমস্যাগুলোর যথাযথ সংশোধন প্রস্তাব দেয়া হবে যেন পরবর্তীতে আর এ বিষয়ে সমস্যা সৃষ্টি না হয়। এ ব্যাপারে ভূমিমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে।’ ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১’ বাস্তবায়নে চিহ্নিত সমস্যাগুলো তুলে ধরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজের দেয়া কিছু সিদ্ধান্ত বা রায় আইনগত কারণে পরবর্তী আপিলের সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। প্রকাশিত প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির (ক-তফসিল) তালিকায় কিছু ভুল হওয়া এবং কিছু সম্পত্তি বাদ পড়ে যাওয়ায় প্রকাশিত তালিকার সংশোধনী ও বাদ পড়া সম্পত্তির তালিকা প্রকাশের প্রয়োজন রয়েছে। এমন সংশোধন ও তালিকা প্রকাশের সময়সীমা ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে।
প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির দাবিদারদের দাবির আইনগত সময়সীমা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং সংশোধনী তালিকার ক্ষেত্রে ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক দাবিদার দাবি করতে পারছেন না। আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত বা রায় দেয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে আপিলের বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে বিলম্বে রায় দেয়ায় বা আদেশের সার্টিফায়েড কপি বিলম্বে দেয়ায় আইন অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে আপিল করা সম্ভব হয় না। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী অদাবিকৃত এবং দাবি অপ্রমাণিত সম্পত্তিকে সরকারি সম্পত্তি বলা হয়েছে। কিন্তু এই সরকারি সম্পত্তির রেকর্ড সংশোধন ও নিষ্পত্তির বিষয়ে স্পষ্ট বিধান নেই। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ সালেহউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. হেলাল মাহমুদ শরীফসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সহকারী কমিশনার (ভূমি), ভিপি কৌঁসুলি, অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। ১৯ জন অংশগ্রহণকারী চারটি পৃথক দলে ভাগ হয়ে অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক এই পাঁচটি সমস্যার সমাধান প্রস্তাব তৈরি ও উপস্থাপনা করা হয়।
১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে যেসব লোক পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে গিয়ে বসবাস করছিল তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার শত্রু সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭৪ সাল থেকে শত্রু সম্পত্তির নতুন নাম দেয়া হয় অর্পিত সম্পত্তি। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে আরও জানানো হয়, অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত সম্পত্তি বৈধ মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার (প্রত্যর্পণ) মাধ্যমে দীর্ঘদিনের জটিলতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম মেয়াদে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১’ প্রণয়ন করা হয়। পরে অর্পিত সম্পত্তি আইনানুগভাবে প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন অর্পিত সম্পত্তি ‘ক’ তালিকার গেজেটে এবং অন্যান্য অর্পিত সম্পত্তি ‘খ’ তালিকার গেজেটে প্রকাশ করা হয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে এ বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করতে গিয়ে প্রকাশিত গেজেটে কিছু ভুল-ত্রুটি থেকে যায় এবং ক্ষেত্রভেদে কিছু প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তি প্রকাশিত গেজেটে বাদ পড়ে যায়। প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির বাদ পড়া ও সংশোধিত তালিকার গেজেট প্রকাশের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা একাধিকবার আইন সংশোধনের মাধ্যমে বৃদ্ধি করে একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। আইন সংশোধনের মাধ্যমে বাড়ানো সময়সীমার (২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে কিছু প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তি বাদ পড়া ও সংশোধন তালিকার গেজেট প্রকাশের বহির্ভূত থাকে। একাধিকার বাদ পড়া ও সংশোধনী তালিকার গেজেট প্রকাশের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা বাড়ানো হলেও প্রায়ই ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট সেবা গ্রহীতা ও বৈধ মালিকরা যেন অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক সমস্যায় দ্রুত সমাধান পেতে পারেন সেজন্য আইনে আরও কিছু সংশোধনী আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।