কোল্ড স্টোরেজ সিন্ডিকেটের দখলে, আলু সংরক্ষণে সুযোগ না পাওয়ার আশঙ্কা যশোরে চাষিদের

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এ বছরও আলু সংরক্ষণ নিয়ে বিপাকে পড়ার শঙ্কায় যশোরের চাষিরা। কোল্ড স্টোরোজেগুলো ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দখলে চলে যাওয়ায় কৃষক আলু রাখার কোনো সুযোগ না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন। এ পরিস্থিতিতে কৃষক পর্যায়ে নিজস্ব কায়দায় আলু সংরক্ষণের বিষয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, সবজিসহ আলু চাষের জন্য যশোরাঞ্চল বিখ্যাত। চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় দুই হাজার ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে। এবছর প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হওয়ায় আলুর ফলন ভালো হওয়ার আশা করছেন কৃষকরা। জেলার বিস্তীর্ণ মাঠে এখন আলু ক্ষেতে ব্যাপক ফলন হওয়ার ব্যাপারে কৃষি বিভাগও আশাবাদী। কৃষি বিভাগের হিসেব মতে ইতিমধ্যে জেলার আট উপজেলার প্রায় ২৫ শতাংশ জমির আলু জমি থেকে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে যশোর-মাগুরা সড়কের পাশে নোঙরপুরের বিস্তীর্ণ মাঠের দিকে তাকালেই দেখা যাবে কৃষক মাঠকে মাঠ ক্ষেতের আলু তুলে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। যশোরের মাটি আলু চাষের উপযোগী হওয়ায় এবছর জেলার আট উপজেলাতেই ব্যাপক আলুর চাষ হয়েছে। তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে অন্যান্য বছরে আলু ক্ষেতে নানা রোগ দেখা দিলেও এবছর তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। ফলে উৎপাদনও হয়েছে বেশি। তবে আলু সংরক্ষণ নিয়ে কৃষক চিন্তায় পড়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোরাঞ্চলে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪টি কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। এরমধ্যে যশোরে ৯টি, খুলনায় ৩টি ও সাতক্ষীরায় ২টি কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। এই কোল্ডস্টোরেজগুলোতে আলুর ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৮০ হাজার টন। অথচ এসব কোল্ডস্টোরেজগুলোতে ইতিমধ্যে আলু রাখার জায়গা দখল হয়ে গেছে। একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা আগেভাগে কোল্ডস্টোরেজ বুকিং দেওয়ায় প্রান্তিক চাষিরা কোনো সুযোগ পাচ্ছেনা। ফলে কৃষককে নিজ উদ্যোগেই আলু সংরক্ষণের চিন্তা করতে হচ্ছে। যশোরের সদর উপজেলার নোঙরপুর এলাকার আলু চাষি আলমগীর হোসেন জানান, এ বছর আলু চাষের জন্য উপযুক্ত মৌসুম থাকায় ভালো ফলন পাবেন বলে আশা করছেন। বাজার দরও মুটামুটি ভালো। আর কয়েকদিন পর ক্ষেতের আলু তুলবেন তারা। তবে এসব আলু সংরক্ষণ করে বিক্রি করতে পারলে ভালো দাম পেয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। কিন্তু জেলার কোল্ডস্টোরেজগুলোতে জায়গা না থাকায় উৎপাদিত আলু কোথায় রাখবেন তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তারা।
একই কথা বলেন, লেবুতলা মাঠের আলু চাষি আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, যশোরাঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণ কোল্ডস্টোরেজ না থাকায় এ অঞ্চলের আলু চাষিরা প্রতিবছরই লোকসান গুনে আসছে। আলু চাষের ভরা মৌসুমে একশ্রেণির সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা আগেভাগে কোল্ড স্টোরেজ দখল করে রাখে। তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে আলু কিনে সংরক্ষণ করে রাখে। দাম বাড়লেই পরে তা বিক্রি করে দেয়। তিনি বলেন, কৃষক যদি তাদের উৎপাদিত আলু সংরক্ষণ করতে পারতো তাহলে আলু বিক্রি করে যেমন লাভ হতো তেমনি, এ অঞ্চলের আলু চাষির সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়তো। কিন্তু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারনে প্রান্তিক চাষিরা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। কোল্ডস্টোরেজগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, আগামী মার্চ থেকে সেখানে আলু রাখা শুরু হবে। তবে অধিকাংশ কোল্ডস্টোরেজে আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছে ব্যবসায়ীরা। ইকবাল হোসেন নামে একজ আলু ব্যবসায়ী জানান, তিনি ইতিমধ্যে যশোরের দুটি কোল্ডস্টোরেজে দুইশো বিশ মন আলু রাখার জন্য বুকিং দিয়েছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে আলুর বাজারদর কম থাকায় কোল্ডস্টোরেজগুলোতে আরও ভিড় থাকে বেশি। তবে এবছর আলু উৎপাদনের উপযুক্ত সময়ে বাজারে আলুর দাম ভালো পাওয়ায় কৃষক লাভবান হচ্ছেন। ফলে আমরা এখন অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই আলু কিনে কোল্ড স্টোরেজে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) দীপঙ্কর দাস বলেন, এবছর আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। ইতিমধ্যে কিছু কিছু জমির আলু ক্ষেত থেকে তুলতে শুরু করেছেন কৃষক। বাকি জমির আলু কয়েকদিনের মধ্যে তোলা হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, আলুর ভালো দাম পাওয়ায় কৃষক বাজারে আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। তবে উৎপাদন বেশি হওয়ায় কিছু কিছু কৃষক বাড়িতেই বালু বা কাটের ঘরে বিশেষ ব্যবস্থায় আলু সংরক্ষণ করে রাখার চিন্তা করছেন। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।