খুবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শাস্তি বাতিল চায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ সব অভিযোগ তদন্তের দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক খুবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শাস্তি বাতিল চেয়েছে। খুবিতে প্রতিহিংসামূলকভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বরখাস্ত ও বহিষ্কারের প্রতিবাদে সোমবার শিক্ষক নেটওয়ার্ক এ বিষয়ে অনলাইন সংবাদ সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলন তারা চারটি দাবি জানিয়েছে। সেগুলো হলো- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শাস্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ সব অভিযোগের তদন্ত করতে হবে, অযোগ্য-দুর্নীতিবাজ ভিসি নিয়োগ বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা বিধিতে গণতন্ত্রায়ণ ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং শিার্থীদের পে দাঁড়ানোর ‘শাস্তি’ হিসেবে শিক্ষকদের ভয় দেখানো বন্ধ করতে হবে।
এক বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, মাত্র তিন দিন আগে আমরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতিহিংসামূলক আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। আমরা একইসঙ্গে অপেক্ষা করছিলাম যে, ২৩ জানুয়ারি সিন্ডিকেটের সভায় প্রশাসনের শুভবুদ্ধির উদয় হবে কিংবা সভাসদের কেউ কেউ এই গুরুতর অন্যায় ও হিংস্রতার প্রতিবাদ করে শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিরত রাখতে সমর্থ হবেন। আবার আমরা গত মাসগুলোতে এই কর্তৃপরে তৎপরতা থেকে আশঙ্কা বোধও করছিলাম যে, শায়েস্তা করবার ও ভয় দেখানোর যে সংস্কৃতি তারা জারি রেখেছেন, তাতে হয়তো প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার সিদ্ধান্তই জানানো হবে। পরিশেষে আমাদের আশঙ্কা সত্যি হলো।
শিার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করার কারণ দেখিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল ফজলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত, ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুকা কাবেরী এবং বাংলা বিভাগের প্রভাষক শাকিলা আলমকে চাকরি থেকে অপসারণ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার ‘খুবির এক শিক বরখাস্ত, দুজনকে অপসারণ’ শীর্ষক সংবাদ থেকে জানা যায়, ‘শনিবার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২১২তম সভায় এ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’ তবে এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর এক কর্মদিবস পার হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত ভুক্তভোগী শিকদের হাতে চূড়ান্ত চিঠি পৌঁছায়নি। ভুক্তভোগী শিক আবুল ফজল এ বিষয়ে জানার জন্য রেজিস্ট্রারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, রেজ্যুলেশন তৈরি না হওয়ায় চিঠি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক নেটওয়ার্ক মনে করে, রেজ্যুলেশনের দোহাই দিয়ে সময়পেণ করে তাদেরকে আবারও হয়রানি করা হচ্ছে, যেমনটা করা হয়েছে গত তিনমাস ধরে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তার সহচরদের নিয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে শিকদেরকে এরূপ হেনস্তা করছেন। তাদেরকে যে অযৌক্তিক অভিযোগ দিয়ে নাটকীয় শাস্তি প্রদান করা হলো, সে শাস্তির উদ্দেশ্যে গঠিত হওয়া তদন্ত কমিটি ধোঁয়াটে এবং সিন্ডিকেটের ভূমিকাও পূর্বপরিকল্পিত বলে প্রতীয়মান হয়ে এসেছে। উপরন্তু, তদন্ত কমিটির একজন শিক নিজেই সিন্ডিকেট সদস্য। আবার অভিযুক্ত শিকদের বিরুদ্ধে থাকা একজন সাীও সিন্ডিকেট সদস্য। কেবল সাংগঠনিক-প্রশাসনিক বিধিবিধানের দিক থেকে দেখলেও এই অবস্থাকে প্রহসন ছাড়া আর কিছু বলার উপায় নেই। বিবৃতিতে বলা হয়, এসব কিছুর সূচনা ঘটেছিল শিার্থীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে কিছু শিকের সংহতি জানানোর মাধ্যমে। শিার্থীদের ৫ দফা দাবির মধ্যে আবাসিক সঙ্কট সমাধানের মতো দাবি ছিল। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ শিার্থীদের আবাসিক সমস্যার সমাধান চান না। কারণ তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আবাসনের দায়মুক্ত করার যে সর্বাত্মক চক্রান্ত চলছে, সেই চক্রান্তের একটা প। আমরা এটাও মনে রেখেছি যে, আবুল ফজল, হৈমন্তী শুকা কাবেরী এবং শাকিলা আলম আরও কিছু শিকসমেত এই আন্দোলনে সংহতি জানানোর মাধ্যমে শিকের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য পালন করেছিলেন। কর্তৃপ তখন থেকেই সংহতি জানানো শিকদের মধ্য থেকে টার্গেট বাছাই করে ফেলে। কারণ তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জনদায়িত্বমূলক ভূমিকা বজায় রাখতে দিতে চান না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক নেটওয়ার্ক নিশ্চিত হয়েছে যে, শিার্থীদের পাঁচ দফা দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করার জন্য শিক এবং শিার্থীদের বহিষ্কার করে বর্তমান প্রশাসন তার সব স্বেচ্ছাচারিতার ইতিহাস চাপা দিতে চেয়েছে। এই শাস্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল সার্বভৌম শিকদেরকে একটা ভয় প্রদানের সঙ্কেত দিচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ। বাংলাদেশের শিায়তনগুলোকে আরও য়তির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এইসব অর্থলোভী, অগণতন্ত্রী, প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্যক্তিদেরকে শিা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক দায়িত্ব না দিতে দাবি জানাচ্ছি। বাংলাদেশের উচ্চশিা প্রতিষ্ঠানসমূহের ভবিষ্যৎ আপনাদের হাতে। আমরা সবাইকে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আহ্বান জানাই। পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে আগামী ২৮ জানুয়ারি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে দুপুর ১২টা থেকে শিার্থী-শিক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক নেটওয়ার্ক।