চৌগাছায় ভেজাল সার-কীটনাশকের রমরমা ব্যবসা,ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষি

0

এম. এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় নকল সার ও ভেজাল কীটনাশকের রমরমা ব্যবসা চলছে। এই সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে ঠকছেন সাধারণ কৃষক। চৌগাছা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সরকারি নীতিমালা তোয়াক্কা না করে অসাধু খুচরা সার দোকানিরা এসব ভেজাল সার এবং কীটনাশকের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, ইরি-বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা রাতের আঁধারে হাজার হাজার বস্তা নকল দস্তা সার ও ভেজাল কীটনাশক গুদামজাত করছেন। এরপর নানা নামে এগুলো প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। ভেজাল এই সার ও কীটনাশক ব্যবহারে ফসল উৎপাদন ব্যাহত ও জমির উর্বরা শক্তি কমে যাচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে কৃষিখাত। চৌগাছা উপজেলা সদরের নামিদামি দোকানগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল সার ও কীটনাশক। লাইসেন্সপ্রাপ্ত সার ডিলারদের চেয়ে অপোকৃত কম দামে পেয়ে ্ই সার ও কীটনাশক কিনছেন কৃষকরা। যার দায় পড়ছে ডিলারদের ওপর। এ সব সার-কীটনাশক চৌগাছার সলুয়া, সিংহঝুলী, পাশাপোল, ধুলিয়ানী, দশপাকিয়া, কাবিলপুর, মাশিলা, আন্দুুলিয়া, খড়িঞ্চা, পুড়াপাড়া, ফাঁসতলা, চাঁদপাড়া, পাতিবিলা, দেবীপুর, নারায়নপুর ও হাকিমপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের ছোট ছোট দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এতে অসাধু দোকানিরা অধিক লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্রেতা সাধারণ।
প্রকাশে অনিচ্ছুক সার ডিলার সমিতির এক নেতা জানান, চৌগাছার বিভিন্ন বাজারে লাইসেন্সবিহীন ও বিশেষ পন্থায় অসাধু দোকানিরা অবাধে ভেজাল সার ও কীটনাশক বিক্রি করে অধিক মুনাফা লুটছেন। কোন কোন েেত্র বিএসটিআই অনুমোদনবিহীন কীটনাশকও বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সার ও কীটনাশক বিক্রেতাদের প্রত্যেকের স্টক, সেলস রেজিস্ট্রেশন থাকার পাশাপাশি কীটনাশক আর্ডিন্যান্স ৭১ অনুযায়ী পরিদর্শন বই থাকতে হয়। এছাড়া ক্রেতাদের বিক্রি রশিদও দিতে হয়। এ েেত্র অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কোম্পানির ইনট্যাক্ট কীটনাশকের বোতল খুলে তা খুচরা বিক্রি করে থাকেন। যা কীটনাশক বিক্রি আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। চাঁদপাড়া গ্রামের মো. সলেমান, ইউনুছ হাজরাখানা গ্রামের আবুল হোসেন, আন্দারকোটা গ্রামের কৃষক নুরনবী, টেংগুরপুর গ্রামের খোকনসহ অনেক কৃষকের অভিযোগ, ভেজাল ও নিষিদ্ধ কীটনাশক জমিতে ব্যবহারের ফলে ফসল ও জমির ক্ষতি হচ্ছে। ভেজাল কীটনাশকে পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রা করা যাচ্ছে না।
এদিকে ২১ জানুয়ারি চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকৌশলী এনামুল হক এর নেতৃত্বে এ সব নকল ভেজাল ও নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় দামোদর বটতলার মেজবাহ ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী আশিকুর রহমানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দিন বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি চৌগাছা বাজারে অভিযান চালিয়ে মেসার্স অপু ট্রেডার্সে থাকা দেড়’শ কেজি নকল দস্তা সার ধ্বংস করা হয়। এ সময় নকল সন্দেহে সার ব্যবস্থাপনা আইন ২০০৬ এর আওতায় দামোদর বটতলার মেসার্স মেজবার ট্রেডার্সের গুদামে থাকা ৫ হাজার কেজি দস্তা সার এবং উপজেলা সদরের কামাল এন্টারপ্রাইজে থাকা ৫ হাজার কেজি দস্তা সার আগামী ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বিক্রি বন্ধ রাখতে বলা হয়। এ সময় ওই সার পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ল্যাবে পরীক্ষার পর এই সার বিক্রি বা ধ্বংসের সিদ্ধান্ত দেয়া হবে বলে তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে ২০ জানুয়ারি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গিয়ে দেখতে পান মেসার্স মেজবার ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী ল্যাব টেস্টের রেজাল্ট আসার আগেই ওই সার তার গুদাম থেকে সরিয়ে ফেলেছেন। যা সার ব্যবস্থাপনা নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এরই প্রেক্ষিতে পরদিন ২১ জানুয়ারি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ওই ব্যবসায়ীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ব্যাপারে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, ভেজাল ও নকল সার-কীটনাশক উৎপাদন ও বিক্রি করে যারা দেশের কৃষক ও জনগণের ক্ষতি করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। অপরাধীরা কোনভাবেই ছাড় পাবে না।