আজ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকী

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরের কৃতি সন্তান সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইয়ের নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল হাই ২০১২ সালের আজকের দিনে ঢাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখানেই মৃত্যু হয় তার। এ উপলক্ষে আজ মরহুমের পারিবারের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। তার জন্য সকলের কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।
তিনি যশোর শহরের মুসলিম একাডেমি স্কুলে লেখাপড়া শুরু। পরে ইসলামিয়া স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। স্কুল জীবন থেকেই তিনি ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগে যোগদান করেন এবং ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গোপনে গড়ে ওঠা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ (স্বাধীন বাংলা নিউকিয়াস) এর সদস্য হন এবং বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সপক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৯-৭১ সালে তিনি যশোর জেলা ছাত্রলীগের পাঠচক্র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি সেই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যূত্থানে তিনি যশোরের অন্যতম ছাত্রনেতা ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে যশোরের যে কয়জন ছাত্রনেতা সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, তিনি তাদের একজন। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ আন্দোলন চলাকালীন অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে তিনি যশোর কালেক্টরেট ভবন থেকে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন এবং সেখানে স্বাধীন বাংলার প্রতীকী পতাকা টাঙিয়ে দেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে যখন সেনানিবাস থেকে আর্মি শহরে অগ্রসর হয়, তখন তাদের নেতৃত্বে যশোরের পালবাড়ি অঞ্চলে প্রথম প্রতিরোধ করেন। পরে ৪ এপ্রিল তিনি ভারতে যান এবং উত্তর প্রদেশের দেরাদুন জেলায় অবস্থিত চাকতারা ক্যান্টনমেন্টের অধীনে তানডাওয়াতে প্রথম ব্যাচে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল হাই বিএলএফ (মুজিব বাহিনী) ঝিকরগাছা ও চৌগাছা থানার কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ঝিকরগাছা ও চৌগাছা অঞ্চলে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক সশস্ত্র লড়াইয়ে অংশ নেন। ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠিত হলে গাজী আব্দুল হাই ঐ দলে যোগদান করেন এবং ৮০ র দশকে বিভিন্ন সময়ে জাসদের যশোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক কারণে গাজী আব্দুল হাই ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ এর শেষভাগ পর্যন্ত কারাভোগ করেন। গাজী আব্দুল হাই ১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাসদ থেকে যশোর-৩ (সদর) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৯০এর দশকে তিনি জাসদ ত্যাগ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল হাই ১৯৯৯ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ শাসনামলে যশোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।