কনেকনে ঠাণ্ডায় জবথুবু অবস্থা বোরো বীজতলা নিয়ে শঙ্কা

0

আকরামুজ্জামান ॥ যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শীতের তীব্রতা আরও বাড়ার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। রোববার থেকে এ অঞ্চলে মৃদ্যু শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে। এদিন যশোরে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর পার্শ্ববর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড হয়েছে ৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা। আজ ২১ ডিসেম্বর সোমবার থেকে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । তীব্র শীতের কারণে এ অঞ্চলের জনজীবনে নেমে এসেছে চরম স্থবিরতা। ঠান্ডায় শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। সকাল ও রাতের বেলায় তীব্র ঠান্ডায় অচলাবস্থা তৈরি হয় সড়ক পরিবহন চলাচলে। তবে কুয়াশা না থাকায় গতকাল বিমান চলাচল স্বাভাবিক ছিলো বলে যশোর বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক জানান।
যশোর বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমান বিমান ঘাটির আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রোববার থেকে যশোরাঞ্চলে মৃদ্যু শৈতপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এদিন যশোরে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এসময়ে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে। সেখানে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস জানায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল কুয়াশা একটু কম ছিলো। তবে মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ থাকায় শীত অনুভূত হয় বেশি। তাপমাত্রা যতটা কম তার চেয়ে শীত অনুভুত হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত। একেবারেই হাঁড়কাপানো শীত। যেকারণে যশোর শহরে অন্যান্য দিনের চেয়ে গতকাল জনসমাগম ছিলো তুলনামূলক কম। সকালের দিক নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। যারা বের হয়েছেন তাদেরকে তীব্র শীতের কবলে পড়তে হয়। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হাসপাতালে শীত জনিত রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। যশোর মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সুদেশ রক্ষিত বলেন, শীতের কারণে শ্বাসতন্ত্র প্রদাহজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। প্রতিদিন এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কোনো পরিবহণ ফেরি পার হতে পারেনি। যেকারণে এসব যানবাহনের অধিকাংশই দুপুরের পর যশোরে এসে পৌছে। শহরের খাজুরা বাস স্ট্যান্ডে ঈগল পরিবহনের বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, নদীতে ঘন কুয়াশা আর শীতের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে রাতের বেলায় বাস চলাচলে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। যে কারণে রাতের বেলায় বাসে যাত্রী কমেছে। তবে সড়ক পরিবহন চলাচলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলেও বিমান চলাচলে রোববার স্বাভাবিক ছিলো। যদিও বিমান বাহিনীর একটি রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামের কারণে গতকাল সকালের দিকে যশোর বিমান বন্দরে কোনো বিমান উঠানামা করেনি। তবে বিকেলের দিকে যথারীতি বিমান চলাচল করে বলে বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক বলেন।
মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে যশোরের বিভিন্ন মাঠে বোরোর বীজতলা নিয়ে আতঙ্কে আছেন চাষিরা। কিছু বীজতলা কুঁয়াশা ও ঠান্ডার কারণে হলুদ হয়ে গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপরিচালক (শস্য) দীপঙ্কর দাস বলেন, চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় ১ লাখ ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরীর প্রস্তুতি অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশ বীজতলা তৈরী হয়েছে। তবে তীব্র শীত এসব বীজতলা কোল্ড ইনজুুরির কবলে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, শীতের পাশাপাশি কুয়াশার তীব্রতা বাড়লে নিশ্চিত এসব বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এজন্য কৃষকদের আমরা বীজতলা ঢেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছি। পাশপাশি জমি থেকে ঠান্ডা পানি বের করে বেশি বেশি সেচ দেয়ারও কথা বলেছি। এদিকে কনকনে শীতের কারণে যশোরের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে অন্যান্য দিনের মতো ক্রেতাদের ভিড়ে ঠাসা ছিলো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নানা বয়সী লোক দোকানগুলোতে এসে ভিড় জমান। তারা সাধ্যমত গরম কাপড় কিনে নিয়ে যান। তবে ক্রেতারা বলেন, শীতকে পুঁজি করে বিক্রেতারা প্রতিটি কাপড়ের দাম লাগামছাড়া নিচ্ছে। তবে বিক্রেতারা বলেন, শীত মৌসুমে গরম কাপড়ের দাম একটু বেশি নেয়া হলেও তা মাত্রাতিরিক্ত নয়। যে মানের কাপড় ক্রেতারা যে দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তা ভালো মানের দোকানে এর চেয়ে দুই থেকে তিনগুন বেশি দিয়ে কিনতে হবে বলে তারা জানান।