৮ পলাতকের ৫ জন উদ্ধার : যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নানান সংকটে দুর্বল হয়ে পড়েছে ব্যবস্থাপনা

0

শিকদার খালিদ ॥ বিপথগামী অথবা স্বাভাবিক পথ থেকে বিচ্যুত শিশু কিশোরদের সংশোধন ও মানসিক উন্নয়নের জন্য নির্মিত যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র নানান সংকটে ব্যবস্থাপনায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। যেমন রয়েছে লোকবল সংকট, তেমন রয়েছে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ শিশু কিশোর বন্দি। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। এছাড়া রয়েছে ১৮ বছর বয়স পেরিয়ে যাওয়া বেশ কিছু অপরাধী। এদিকে এ কেন্দ্র থেকে গত রোববার দিবাগত রাতে পালিয়ে যাওয়া আট কিশোরের মধ্যে ৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। পলাতক শিশুর পরিবার ও স্থানীয়দের সহায়তায় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে কেন্দ্রে ফিরিয়ে এনেছেন বলে জানিয়েছেন সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন।
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন জানান, রোববার দিবাগত রাতে পালিয়ে যাওয়া আট কিশোরের মধ্যে যশোরের হৃদয় (১৭), ফারদিন দুর্জয় (১৫) ও আব্দুল কাদের (১৪), খুলনার রোহান গাজী (১৪) এবং নড়াইলের মুন্না গাজী (১৫) কে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে দুর্জয় ও হৃদয় যশোর শহরের পুরাতন কসবায় অবস্থানকালে স্থানীয়দের সহায়তায় ফিরিয়ে আনা হয়। কাদের, রোহান গাজী ও মুন্না বাড়িতে গেলে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে তাদেরকে কেন্দ্রে আনা হয়। এখনও পলাতক রয়েছে খুলনার সোহাগ শেখ (১৭), গোপালগঞ্জের শাহ আলম (১৮) ও বরিশালের মাইনুর রহমান সাকিব (১৫)। তাদের মধ্যে এক জনের সাথে কথা হচ্ছে। তবে ফিরে না আসা পর্র্যন্ত তার নাম জানানো যাচ্ছে না বলে জাকির হোসেন জানান। অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের মানসিক উন্নয়ন ও সংশোধনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র। দেশে বালকদের জন্য দুটি ও বালিকাদের জন্য একটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র সংকটে ব্যবস্থাপনায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। সংকটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য লোকবল ও ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত শিশু-কিশোর। কেন্দ্রের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন জানান, যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩২ জেলার জন্য নির্ধারিত হলেও ৩৭ জেলা থেকে শিশু-কিশোর পাঠানো হয় এখানে। এ কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা ১৫০ জন। কিন্তু বর্তমানে অবস্থান করছে তিন’শ বন্দি। যার মধ্যে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত প্রায় একশ’ এবং ধর্ষণ ও নারী-শিশু নির্যাতন মামলার অভিযুক্তের সংখ্যা ৭০ জন। বাকিরা বিভিন্ন মামলায় অভিযুুক্ত। এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী জানান, ১৫০ বন্দির জন্য যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ১২ জন নিরাপত্তা কর্মীর পদ রয়েছে। কিন্তু আছেন মাত্র ৩ জন। এ কেন্দ্রে সাধারণত যে শিশু-কিশোররা অবস্থান করে তারা অপরাধ প্রবণ অথবা পারিবারিক শৃঙ্খলার বাইরের মানসিকতার। সে ক্ষেত্রে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত এই শিশু-কিশোরদের মাত্র তিন জন নিরাপত্তা কর্মী দিয়ে সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া রয়েছে শিশু বয়স পেরিয়ে যাওয়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বন্দি। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে গত ১৩ অগাস্ট তিন কিশোর হত্যাকান্ডের পর সেখানে গত ১৭ আগস্ট নতুন সহকারী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগ দেন জাকির হোসেন। যোগদানের পর তিনি কাগজপত্র ঘেটে কেন্দ্রে ২৪ জন বন্দির ১৮ বছর পার হয়ে গেছে বলে প্রমাণ পান। এ বিষয়ে জাকির হোসেন জানান, নিয়ম হলো যাদের ১৮ বছর পার হয়ে যাবে তাদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আদালতকে তারা লিখিতভাবে অবহিত করবেন। এরপর আদালত থেকে যে নির্দেশনা পাওয়া যাবে সেই অনুযায়ী ১৮ বছর পার হওয়া বন্দিদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন তারা। এ বিষয়টি দেখভালের জন্য তাদের একজন প্রবেশন অফিসার রয়েছেন। তিনি বলেন, ওই ২৪ জন বন্দির মধ্যে ১২ জনকে ইতোমধ্যে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি ১২ জনের বিষয়ে প্রবেশন অফিসার কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত তাদেরও কারাগারে পাঠাতে পারবেন। একই কথা বলেন তিন কিশোর হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যশোরের চাঁচড়া ফাঁড়ি পুলিশের পরিদর্শক রোকিবুজ্জামান। তিনি জানান, তদন্তে দেখা গেছে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সাথে যে আট জন কিশোর জড়িত তাদের সকলের বয়স ১৮ বছর পেরিয়ে গেছে। এদের কারো বয়স এখন ১৯ বছর।