স্বাস্থ্যবিধি ছুটিতে!

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে মানুষকে মাস্ক পরাতে অভিযান চলছে সারা দেশে। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ কর্মসূচি আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। শীতে করোনা বাড়বে এমন শঙ্কার মধ্যেই সংক্রমণ এবং প্রাণহানির ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন মাস্ক পরাসহ কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ভ্যাকসিন পাওয়ার আগ পর্যন্ত এটিই এখন ‘বিকল্প ভ্যাকসিন’। কিন্তু আদতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে মানুষের চরম গাফিলতি দেখা যাচ্ছে। উন্মুক্ত স্থানে শুধু মাস্ক ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া হলেও মানুষের ভিড়, গাদাগাদি ঠেকাতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর সব ধরনের সভা সমাবেশ ও জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
সরকারিভাবে এই নিষেধাজ্ঞা তোলা না হলেও এখন আলামত দেখে মনে হচ্ছে এ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা বলবৎ নেই। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নামে চলছে মিছিল, মিটিং, সমাবেশ, মানববন্ধন। এসব কর্মসূচিতে হাজারো মানুষের সমাগম হচ্ছে। মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব। মাস্ক ব্যবহারেও রয়েছে অবহেলা। শুধু সভা-সমাবেশই নয়। মার্কেটে-যানবাহনে যেন মানুষ ভুলতে বসেছে স্বাস্থ্যবিধির কথা। দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি ছুটিতে গেছে। গতকাল দুপুরে মিরপুর থেকে কমলাপুরগামী আয়াত পরিবহনের একটি বাস আগারগাঁও পার হওয়ার সময় দেখা গেছে বাসটিতে সিটে বসা যাত্রীর সমান যাত্রী দাঁড়িয়ে। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সামনে আসার পর বাসটিতে আরো কয়েকজন যাত্রী গাদাগাদি করে উঠলেন। যাত্রীর চাপে বাস চালকের সহকারী দরজার হাত ধরে ঝুলে ছিলেন। ফার্মগেটে দেখা গেল বিকল্প পরিবহনের একটি বাসে একইভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করতে। ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়েই এই বাসগুলো এভাবে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। শুধু আয়াত বা বিকল্প পরিবহনই নয় সড়কে চলাচল করছে বাসগুলোতেও এখন আর স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন গণপরিবহন অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে চলাচল করেছে। তখন যাত্রীদের হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া, বাসে জীবাণুনাশক ছিটানোর শর্ত ছিল। পরে অবশ্য শুধুমাত্র আসনের সমান যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেয়া হয়। তবে এক্ষেত্রেও যাত্রী, চালক এবং চালকের সহকারীকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা, যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া এবং বাসে জীবাণুনাশক স্প্রে করার শর্ত ছিল। মাঝে করোনা সংক্রমণ যখন কিছুটা কম ছিল তখন থেকেই স্বাস্থ্যবিধি শিথিল হতে শুরু করে। এখন মাস্ক ব্যবহার ছাড়া অন্য কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না গণপরিবহনে। দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া হচ্ছে অহরহ। জীবাণুনাশক দেয়া হচ্ছে না কোনো বাসেই। বাসে মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত যাত্রীদের মাস্ক পরাতে অভিযান চালালেও দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়ার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। একই চিত্র দেখা যাচ্ছে মার্কেট এবং বিপণিবিতানগুলোতে। মানুষের ভিড়ে পা ফেলা যায় না অনেক মার্কেটে। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। শুক্রবার নিউ মার্কেটে কেনাকাটা করতে যাওয়া একজন বলেন, করোনার মধ্যে এতো মানুষ মার্কেটে আসে এটা জানলে এখানে আসতাম না। পা ফেলার জায়গা নেই। একজন আরেক জনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে। এই অবস্থায় অনেকের মুখে মাস্ক নেই। কী ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ। এভাবে জনসমাগম হলে করোনা সংক্রমণ কীভাবে থামানো যাবে? রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের দোকানের সামনে স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা দেয়া থাকলেও ক্রেতা বিক্রেতাদের অনেকেই তা মানছেন না। রাজধানীর হোটেল রেস্তরাঁগুলোতেও এখন আর দূরত্ব মানার বালাই নেই। খাবার খেতে ভিড় করছে মানুষ। খাবারের সময় তো আর মাস্ক পরে না কেউ। তাই ঝুঁকিটাও বেশি। এই ঝুঁকি নিয়ে মানুষ ছুটছে হোটেল রেস্তরাঁয়। করোনাভাইরাসের কারণে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে সরকারের তরফে। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো নির্দেশনাই মানা হচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীতে বিভিন্ন সভা সমাবেশ হতে দেখা যাচ্ছে। এতে হাজারো মানুষের সমাগম হচ্ছে। ধর্মীয় সংগঠনের সমাবেশগুলোতে কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি হচ্ছে। এসব সমাবেশে বেশির ভাগই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। এমন অবস্থায় গতকাল পূর্বানুমতি ছাড়া রাজধানীতে রাজনৈতিক, সামাজিক বাম সাংস্কৃতি সংগঠনের সভা সমাবেশ এর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এক বিজ্ঞপ্তিতে ডিএমপি জানিয়েছে, নগরবাসীর জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।