বরাদ্দ পাওয়ার পরেও শিশু হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে আসেনি জরুরি মেশিন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ঢাকা শিশু হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু হয় গত ১৩ জুলাই। তখন ওয়ার্ড স্থাপন ও সেবা কার্যক্রম চালুর জন্য হাসপাতালের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ছয় কোটি টাকা চাওয়া হয়। সরকার দিয়েছিল ছয় কোটি দুই লাখ টাকা। কিন্তু সেই টাকায় শিশুদের জন্য একটি হাইফ্লো ন্যাজাল বা অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পর্যন্ত কেনা হয়নি। ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকা-খাওয়া, বেতন, এসি; এসবেই খরচ করে চলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সুশীল কুমার পাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ছয় কোটি দুই লাখ টাকার মধ্যে অন্যান্য ভবন ও স্থাপনার জন্য এক কোটি টাকা, কম্পিউটার সামগ্রীর জন্য ৫০ হাজার টাকা, অন্যান্য মনিহারির জন্য এক কোটি ৫০ লাখ টাকা আর সহায়তা ও অন্যান্য (হোটেল, রেস্ট হাউজ ভাড়া, পরিবহন ভাড়া, খাদ্য, ইউটিলিটি বিল, ক্লিনিং ইত্যাদি) এর জন্য দেওয়া হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। মোট ছয় কোটি দুই লাখ টাকা।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যান্য ভবন ও স্থাপনার ভেতরে রয়েছে করোনা রোগীদের এক্সরে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম, হাইফ্লো ন্যাজাল কেনোলাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় মেশিনপত্র। অথচ টাকা পাবার পাঁচ মাস পরেও এসব কেনা হয়নি শিশু হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মেশিন কেনার জন্য তারা আবেদন করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, টাকা পাওয়ার পরও এখন যদি আবার আলাদা করে আবেদন করতে হয়, তবে সেটা এতদিন পর কেন? হাসপাতালের একাধিক সূত্র বলছে, কেনাকাটা না হওয়ার পেছনে হাসপাতালের কর্মকর্তাদের গাফিলতিই দায়ী। তারা একজন আরেকজনের কাঁধে দায়িত্ব চাপায়। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছে শিশুরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের প্রকিউরমেন্ট বিশেষজ্ঞ বলেন, সরকারের টাকা বরাদ্দের চিঠি আসার পর বাজারদর যাচাই কমিটি হয়। মহামারির সময় তারা তিনদিন সময় পাবে বিভিন্ন মেশিনের দাম যাচাইয়ের জন্য। যাচাইয়ের পর হাসপাতালের পরিচালককে সেটা দিলে তিনি টেন্ডার আহ্বান করবেন সাত দিনের ভেতর। পরবর্তী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে মূল্যায়ন হবে এবং সাত কর্মদিবসের মধ্যে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ পিপিআর অনুযায়ী মোট কাজ শেষ করতে দরকার হবে ১৫ দিন।
চিকিৎসকরা বলছেন, শিশু হাসপাতালে ‘হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা’ বলে কিছু নেই। শিশু হাসপাতাল ঠিক করতে প্রয়োজন শক্ত প্রশাসন। এখানে প্রশাসনেই গলদ। যে যার মতো করে চালাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শিশু হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর দিয়েছে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সরকার যে টাকা দিয়েছে, সে টাকা দিয়ে কিছুই কেনা হয়নি। এদিকে, ছয় কোটি টাকার ভেতর এক কোটি টাকাই দেওয়া হয়েছিল অন্যান্য ভবন ও স্থাপনার জন্য। মন্ত্রণালয় কখনও একটি আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন বা এক্সরে মেশিন কেনার জন্য টাকা নির্ধারিত করে দেয় না। এটা অর্থনৈতিক কোডের মাধ্যমে দেওয়া হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোডে এই টাকা ছাড় হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, কোভিড ইউনিটে বসানোর জন্য একটি আলট্রাসনোগ্রাম এবং এক্সরে মেশিন ম্যানেজ করা হয়েছে, কিন্তু সেটা নতুন কেনা নয়। জানতে চাইলে ঢাকা শিশু হাসপাতালের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহীদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নানা জটিলতায় শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে আগাতে পারেনি। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফী আহমেদ বলেন, ‘সরকারের দেওয়া বরাদ্দ থেকে আমাদের কোড দেওয়া হয়নি মেশিন কেনার জন্য। বেতন খাতে টাকা দেওয়া হয়েছে। আমরা বেতন দিচ্ছি। ডাক্তাররা হোস্টেলে থাকছেন। সেগুলোর খরচ আছে।’ এক কোটি টাকা ভবন স্থাপনা এবং অন্যান্য খরচের জন্য দেওয়া হয়েছে জানালে তিনি বলেন, ‘এটা আপনি ভুল জানেন। ভবন স্থাপনের জন্য দেয়নি।’ এ প্রতিবেদকের হাতে চিঠির কপি রয়েছে এবং এক নম্বরেই ভবন স্থাপনার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে জানালে মূল বিষয়টি এড়িয়ে অন্যান্য খরচ নিয়ে কথা বলতে থাকেন ডা. শফী। এক কোটি টাকা ভবন স্থাপনের জন্য দেওয়া হয়েছে বললে তিনি আবার বলেন, ‘ডাক্তার-সিস্টার্সরা থাকছেন, খাচ্ছেন। এদের পেছনেইতো ৬০-৭০ লাখ টাকা চলে গেছে। মেশিন কিনতে গেলেতো ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা চলে যাবে। তাহলে ডাক্তারদের খাওয়াবো কী দিয়ে।‘ এসব খরচের জন্য চিকিৎসকসহ অন্যদের আলাদা করে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। এমনটা জানালে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়মিত বেতন-ভাতা সহায়তার জন্য দেওয়া হয়েছে।’ অথচ চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে করোনার পরিস্থিতির কারণেই ওই বরাদ্দ হয়েছে। এমনটা জানালে তিনি এ প্রতিবেদককে তার অফিসে ‘দেখা’ করতে বলেন। পরে তিনি আবার বলেন, হাসপাতালের ফান্ড থেকে আজ (২৩ নভেম্বর) একটি মেশিন কেনা হয়েছে। নিজস্ব তহবিল থেকেই যদি কিনে থাকেন তাহলে সেটা পাঁচ মাস পরে কেন? এমন প্রশ্ন করলে উত্তর দেননি পরিচালক ডা. শফী আহমেদ। আবার স্থাপনা থেকে যদি এসি কেনা যায়, তাহলে রোগ নির্ণয়ের মেশিন কেন কেনা যাবে না, এমন প্রশ্নও এড়িয়ে যান তিনি।