আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আয় কমেছে, বেড়েছে ব্যয়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় বেড়েছে, কিন্তু আয় বাড়েনি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় এমন অবস্থা হয়েছে। গত আট মাসে (মার্চ থেকে নভেম্বর) বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে লেনদেন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ছাড় দেওয়ায় খেলাপি ঋণ আদায় প্রক্রিয়া প্রায় স্থবির। এসব কারণে ঝুঁকি মোকাবিলায় আর্থিক খাতের দক্ষতা কমেছে, যা ব্যাংক খাতকে দিন দিন দুর্বল করছে।
‘বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন’এ দেশের আর্থিক পরিস্থিতির এসব চিত্র ফুটে উঠেছে। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
প্রতি তিন মাস পর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। জুন পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বিশ্ব অর্থনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশের বাণিজ্য ও এর ওপর করোনা মহামারির বিরূপ প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, করোনভাইরাস মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক গতি স্থবির হয়ে পড়েছিল। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আর্থিক খাতে লেনদেনও বাড়ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনভাইরাস মহামারির মধ্যে আমদানি কমলেও সামগ্রিক রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার দাম বেড়েছে। করোনভাইরাসের কারণে ব্যাংকিং কার্যক্রম গত মার্চ মাস থেকে স্থবির হয়ে পড়ে। সরকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত আকারে চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে মে মাস থেকে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় খেলাপিদের সংখ্যা না বাড়ানোর পরামর্শ দিলেও তবু খেলাপি ঋণ বেড়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের হার ৯.০৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯.১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত জুনে দেশের শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৫.৫ শতাংশ, যা মার্চ মাসে ছিল ৪৪.৩ শতাংশ। ওই তিন মাসে শীর্ষ ৫টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ শতাংশের বেশি বেড়েছে। শীর্ষ ১০টি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে গত জুন মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৩.৪ শতাংশ আর মার্চ মাসে ছিল ৬৩.১ শতাংশ। নন-পারফরমিং লোন বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর সম্পদের গুণগত মান কমছে, যা ঘুরে-ফিরে মূলধন ঘাটতি বাড়িয়ে তুলছে। দেশের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৩৬টিতে পর্যাপ্ত মূলধন থাকলেও বাকি ২১টি ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণ করতে পারেনি।
ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের ম‌ধ‌্যে ৮ শতাংশ নন-পারফরমিং, ৪.৫ শতাংশ সন্দেহজনক এবং ৬.৫ শতাংশ নিম্নমানের ঋণে পরিণত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ আদায় স্থগিত করা হয়েছে। এ কারণে ভবিষ্যতে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির পাশাপাশি খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকির আশঙ্কাও বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আট মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও খারাপ অবস্থায় পড়েছে। ৩৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮টি প্রতিষ্ঠানে তারল্য বেড়েছে এবং ২৫টি প্রতিষ্ঠানের কমেছে। আয় বেড়েছে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের এবং কমেছে ২০টির। ২০টি প্রতিষ্ঠানে সম্পদ কমেছে এবং ১৩টি প্রতিষ্ঠানে বেড়েছে। মোট সম্পদ বেড়েছে ১০টি প্রতিষ্ঠানের এবং ২৩টি প্রতিষ্ঠানে কমেছে। ২০২০ সালে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের দায় বেড়েছে, কমেছে ২০টি প্রতিষ্ঠানের। আমানত কমেছে ২৮টি প্রতিষ্ঠানে, বেড়েছে ৫টিতে। মূলধন বেড়েছে ২৫টি প্রতিষ্ঠানের এবং কমেছে ৮টির।