চাল রফতানির লক্ষ্যপূরণে চ্যালেঞ্জের মুখে কম্বোডিয়া

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যেও কম্বোডিয়ার চাল রফতানিতে চাঙ্গা ভাব বজায় রয়েছে। বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যটির রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেড়ে সোয়া পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। এর পরও চলতি বছর কম্বোডিয়া থেকে চাল রফতানির বার্ষিক লক্ষ্য পূরণ কঠিন হবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। কম্বোডিয়া রাইস ফেডারেশন ও মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ সম্ভাবনার ইঙ্গিত মিলেছে। খবর সিনহুয়া ও বিজনেস রেকর্ডার।
চাল উৎপাদনকারী দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় কম্বোডিয়ার অবস্থান ১৩তম। তবে খাদ্যপণ্যটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় দেশটি অষ্টম শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। কম্বোডিয়া রাইস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩০৫ টন চাল রফতানি হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটি থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কম্বোডিয়া থেকে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে সবচেয়ে বেশি চাল রফতানি হয়েছে। জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে কম্বোডিয়া থেকে চীনের বাজারে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৫১ টন চাল রফতানি হয়েছে, যা দেশটি থেকে রফতানি হওয়া চালের ৩৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে কম্বোডিয়া থেকে চীনে খাদ্যপণ্যটির রফতানি বেড়েছে ৫ শতাংশ।
একই সময়ে কম্বোডিয়া থেকে ইইউর বাজারে রফতানি হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৩৯১ টন চাল, যা চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে দেশটি থেকে রফতানি হওয়া চালের ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। আগের বছরের প্রথম ১০ মাসের তুলনায় গত জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে কম্বোডিয়া থেকে ইইউর বাজারে চাল রফতানি বেড়েছে ১২ শতাংশ। গত জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে কম্বোডিয়া থেকে ৬০টি দেশ ও অঞ্চলে চাল রফতানি হয়েছে।
কম্বোডিয়ার মিনিস্ট্রি অব এগ্রিকালচার, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফিশারিজের কৃষি বিভাগের মহাপরিচালক এনগিন চে বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে চীন ও ইইউর বাজারে কম্বোডিয়ার চাল রফতানি চাহিদা বেড়েছে। মূলত এ কারণে খাদ্যপণ্যটির রফতানিতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ২০১৯ সালে কম্বোডিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৬ লাখ ২০ হাজার ১০৬ টন চাল রফতানি হয়েছে। চলতি বছর দেশটি থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি বেড়ে আট লাখ টনে উন্নীত হতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি।
তবে কম্বোডিয়ার চাল রফতানিতে সরকারি এ প্রাক্কলন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বার্ষিক রফতানি লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বছরের বাকি দুই মাসে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) কম্বোডিয়া থেকে আরো প্রায় পৌনে তিন লাখ টন চাল রফতানি করতে হবে। এটা দেশটির চাল রফতানিকারকদের জন্য কঠিন হতে পারে।
অনেকটা একই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে ইউএসডিএ। প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম্বোডিয়ার ইতিহাসে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি চাল রফতানির রেকর্ড হয়েছিল। ওই দুই বছর দেশটি থেকে ১৩ লাখ টন করে চাল রফতানি হয়েছিল। গত বছর কম্বোডিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যটির রফতানি আগের বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ১১ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১২ লাখ টনে।
চলতি বছর কম্বোডিয়া থেকে সব মিলিয়ে ১৩ লাখ টন চাল রফতানি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। তবে বছরের প্রথম ১০ মাসে রফতানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ লক্ষ্যপূরণ প্রায় অসম্ভব। কেননা কম্বোডিয়ার রফতানিকারকরা যেখানে ১০ মাসে সোয়া পাঁচ লাখ টনের কিছু বেশি চাল রফতানি করেছেন, সেখানে বছরের বাকি দুই মাসে তাদের আরো সাড়ে সাত লাখ টনের বেশি চাল রফতানি করতে হবে।