ট্রাম্পের কাছে চিকিৎসকদের প্রশ্ন, ভ্যাকসিন কোথায়?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউজের উপদেষ্টারা কয়েক মাস ধরে বলে আসছিলেন ভোটের দিনে আগেই কয়েক কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রস্তুত থাকবে। কিন্তু ভোটের মাত্র তিন দিন বাকি থাকতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে এটি ছিল ট্রাম্পের আরেকটি অনিশ্চিত প্রতিশ্রুতি। ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউজের করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের প্রধান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে বলে আসছিলেন, শিগগিরই পাওয়া যাবে করোনার ভ্যাকসিন। কিন্তু শুক্রবার, ভোটের তিন দিন আগে এবং প্রেসিডেন্টের আশ্বাসের পরও করোনায় দৈনিক আক্রান্তের বিশ্বরেকর্ড গড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নিউ ইয়র্কের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক থেকে শুরু করে মলিকিউলার মেডিসিনের অধ্যাপক এরিক টপল, এমনকি ড. অ্যান্থনি ফাউচি বলছেন, ভোটের দিনের আগে করোনার ভ্যাকসিন সরবরাহে ব্যর্থতা প্রত্যাশিত ছিল।
৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এফডিএ ও সিডিসি’র স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বিরুদ্ধে ভোটের দিনের লক্ষ্যমাত্রা রাজনীতি করার অভিযোগ তুলে ধরেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমরা দ্রুতই ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছি। হয়তো সেই বিশেষ দিনের আগেই পেয়ে যাবো। আপনারা জানেন কোন দিনের কথা আমি বলছি। সেপ্টেম্বরের শুরুতে টপল মার্কিনিদের সতর্ক করে বলেছিলেন, ভোটের দিনের আগে করোনার ভ্যাকসিন সরবরাহে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি কার্যত সম্ভব। ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরীক্ষাও মন্থরগতিতে আগাচ্ছে। যেমনটি অপারেশন ওয়ার্প স্পিডে দেখানো হয়েছে তেমনটি নয়। এছাড়া মার্কিন ফার্মা জায়ান্ট ফাইজার জানিয়েছে, নভেম্বরের শেষের দিক ছাড়া তাদের ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে না।
৩ নভেম্বরের আগে ভ্যাকসিন সরবরাহে ব্যর্থতার জন্য ট্রাম্প নিজের প্রশাসনের অনেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে দায়ী করছেন। এদের মধ্যে রয়েছে ‘রাষ্ট্রের ভেতর রাষ্ট্র’ ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এবং ‘বিভ্রান্ত’ সিডিসি পরিচালক। শুক্রবার মিশিগানে নির্বাচনি প্রচার সমাবেশে চিকিৎসকরা অর্থ কামাই করতে করোনায় মৃত্যু বেশি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিক্যাল সেন্টার থেকে যেদিন ট্রাম্প ছাড়া পেয়েছিলেন, সেদিন তিনি বলেছিলেন, আমি মনে করি নির্বাচনের আগেই ভ্যাকসিন পাওয়া উচিত। কিন্তু সত্যি কথা হলো রাজনীতি জড়িয়ে গেছে। ঠিক আছে, তারা খেলতে চায়। নির্বাচনের পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। সিডিসি’র সাবেক পরিচালক ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. টম ফ্রেইডমেন কঠোর সমালোচনা করেছেন ট্রাম্পের। বিশেষ করে ভোটের দিনের আগে ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা বারবার বলার কারণে প্রেসিডেন্টের ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত তিনি। বলেছেন, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হ্যালোইন। একটি জিনিস আছে যা কোভিড থামাতে পারে। কয়েক মাস ধরে আমি বলে আসছিলাম নেই। কিন্তু একটি জিনিস আছে। সেটি মাস্ক নয়। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নয়। বাসায় থাকা নয়। পরীক্ষা করা নয়। আক্রান্তের সংস্পর্শে আসাদের চিহ্নিত করা নয়। আইসোলেশন নয়। কোয়ারেন্টিন নয়। এমনকি ভ্যাকসিন নয়। এটি হলো আশা।
ড. স্কট অ্যাটলাসকে ট্রাম্প প্রশাসনে নিয়ে আসার সমালোচনাকারীদের মধ্যে অন্যতম হলেন ফ্রেইডম্যান ও স্পেনসার। অ্যাটলাস মহামারিকে নেতিবাচকভাবে দেখার জন্য মিডিয়া হিস্টেরিয়াকে দায়ী করে আসছিলেন। ভ্যাকসিন পেতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে বলে ফাউচির মন্তব্যের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলেছেন। তিনি প্রাকৃতিক ইমিউনিটিতে মনোযোগ দিয়েছেন। সিডিসি জানিয়েছে, ১৫ নভেম্বর অঙ্গরাজ্যগুলো করোনার ভ্যাকসিন সরবরাহে প্রস্তুত হতে পারবে। কিন্তু স্বাধীন চিকিৎসা উপদেষ্টারা বলছেন, এটিই খুব আশাব্যঞ্জক তারিখ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনপিআর শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যেকোনও ভ্যাকসিন বিতরণের জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়ার এখতিয়ার এফডিএ’র রয়েছে। কিন্তু ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকা কোনও মার্কিন কোম্পানিই অনুমোদনের জন্য আবেদন করেনি। শুক্রবার মিশিগানে ট্রাম্পের অভিযোগের বিষয়ে দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, এমন কিছু বলা একেবারে আক্রোশপূর্ণ, আপত্তিকর এবং বিভ্রান্তিকর অভিযোগ। ওই দিন সন্ধ্যায় মিনেসোটায় এক সমাবেশেও ট্রাম্প বলেছেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এক নিরাপদ ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে। তার এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ডেইলি বিস্টের এডিটর মলি জং-ফাস্ট টুইটারে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন ভোটের দিনের আগে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। সেটির কী হলো? শনিবার সকালে চিকিৎসক ডন উইনস্লো লিখেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প আপনি বলেছিলেন ভোটের আগে ভ্যাকসিন পাবো। তাই আমরা রবি বা সোমবার তা কি পাবো? ভ্যাকসিন কোথায়? সূত্র: নিউজ উইক।