যশোর সদর উপজেলা উপনির্বাচন ; ধানের শীষের পক্ষে সর্বত্র গণজোয়ার সুস্থ নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের সংশয়

0

আকরামুজ্জামান ॥ যশোর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদের উপ নির্বাচনে ধানের শীষের পে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ধানের শীষের প্রার্থী প্রচারণার জন্য রাস্তা দিয়ে হাঁটলে শ শ লোক তার পিছু নিচ্ছে, পথসভা আহ্বান করলে তা জনসভায় রূপ নিচ্ছে। নির্বাচন সুস্থ ও অংশগ্রহণমূলক হলে নির্বাচনে বিএনপির এই প্রার্থী সুস্পষ্ট ব্যবধানে জয়লাভ করবেন বলে সাধারণ ভোটারদের ধারণা। ২০ অক্টোবর যশোর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। এই উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার পদত্যাগ করে কেশবপুর-৬ সংসদীয় আসন থেকে উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ায় নির্বাচন কমিশন চেয়ারম্যান পদটি শূন্য ঘোষণা করেন। শূন্য ওই পদেই আগামী ২০ অক্টোবর উপনির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা মহিলা লীগের সাবেক সভানেত্রী নূরজাহান আলী নীরা নৌকা প্রতীকে ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও যশোর পৌরসভার সাবেক কমিশনার নূর-উন-নবী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় দুই প্রার্থীর সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিদিন মিছিল-সমাবেশ আরও প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে পুরো সদর উপজেলার তৃণমূল এলাকা। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থী লড়াই করলেও ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে সর্বত্র সাড়া লেগেছে অভূতপূর্ব। দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের প্রাণের প্রতীকের পক্ষে ভোটের মাঠে এক হয়ে নেমে পড়েছেন। সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সফর করে এবং বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নূর-উন-নবী এবং নৌকা প্রতীক নিয়ে নূরজাহান আলী নীরাসহ দলটির কেন্দ্রীয়, জেলা ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অবিরাম গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে দলের কিছু নেতাকর্মী অংশ নিলেও ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগে সর্বত্র সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে গণসংযোগে যশোরের গণমানুষের নেতা বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী মরহুম তরিকুল ইসলামের তনয় দলের খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের সরব উপস্থিতিতে ভোটের মাঠে নেতাকর্মীরা নতুন প্রাণ সঞ্চার খুঁজে পেয়েছেন। অনিন্দ্য ইসলাম অমিত নির্বাচনী প্রচারণা শুরু থেকেই দলের মনোনীত প্রার্থীকে নিয়ে প্রতিনিয়ত ছুঁটছেন তৃণমূলে। তিনি ও ধানের শীষের প্রার্থী যেখানে যাচ্ছেন সেখানে দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ছে। মানুষ দলে দলে ছুঁটে আসছেন তাদের নেতৃত্বে ধানের শীষের গণসংযোগে। এছাড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক নার্গিস বেগমসহ দলের অন্য সিনিয়র নেতারাও নির্বাচনে গণসংযোগে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। ভোটের মাঠে ধানের শীষের কর্মীরা বলেন, মানুষ আওয়ামী লীগের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে মানুষ এবার সদর উপজেলার নেতৃত্বের পরিবর্তন আনার জন্য মুখিয়ে আছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শাসক দল মানুষকে ভোট দিতে দেবে কি-না সে বিষয়ে সবার মাঝে সংশয় রয়েছে।
যশোর সদর উপজেলার ইছালী এলাকার ভোটার হাদিউজ্জামান বলেন, নির্বাচনের মাঠে ধানের শীষের যে সাড়া দেখছি তাতে নূর-উন-নবীর বিজয় নিশ্চিত বলা যায়। গ্রাম এলাকার গুটি কয়েক লোক শুধু নৌকার পক্ষে কথা বলছে। যেখানে যাচ্ছি সেখানেই ধানের শীষের কর্মীদের গণসংযোগ ও প্রচারণা করতে দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ধানের শীষের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার পুলেরহাট এলাকার নির্বাচনী পথসভা ছিলো ধানের শীষ প্রতীকের। ওই পথসভায় ধানের শীষের প্রার্থী নূর-উন-নবী ছাড়াও দলের জেলা শাখার আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমসহ অন্যান্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে দেখা যায় সামান্য পথসভা হলেও সেটি মূলত জনসভায় রূপ নেয়। সভা শেষে বাজারে গণসংযোগে প্রার্থীর সঙ্গে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী-সমর্থক ছিলেন। এ সময় ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, নির্বাচনের এবার ধানের শীষের পে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া আমার জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস ২০ অক্টোবর নির্বাচনে প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখবে। তারা অতীতের মতো কোনো নোঙরামি করবে না। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক নার্গিস বেগম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ মানুষ আজ রাজপথে নামতে শুরু করেছে। সরকারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতিও ও দুঃশাসনের কবলে থাকা মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ আজ প্রকাশ হতে শুরু হয়েছে। সদর উপজেলার উপনির্বাচনে গ্রাম-গঞ্জে ইতোমধ্যে তার ইঙ্গিত মিলছে। তিনি বলেন, মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। তারা সরকারকে ইতোমধ্যে তা জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সরকার বাহাদুর তা বুঝেও না বুঝার ভান করছে। অধ্যাপক নার্গিস বেগম বলেন, নির্বাচনে আমরা তৃণমূলে গণসংযোগে গিয়ে দেখেছি সর্বত্র ধানের শীষের গণজোয়ার। আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখানে মানুষের ঢল নামছে। আমাদের দলীয় কর্মীতো বটেই, সাধারণ মানুষও ধানের শীষের পক্ষে একাট্টা। নির্বাচন সুস্থ ও সবার অংশগ্রহণমূলক হলে আমাদের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। তিনি প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নূর-উন-নবীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, নির্বাচন এখন আমাদের অনুকুলে। বিষয়টি বুঝতে পেরে শাসকদলের লোকজন আমাদের ভোটারদের বিভিন্ন এলাকায় ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তারা আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তারপরও আমাদের কর্মীরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তাদের বিজয় নিশ্চিতে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।