তেলের বাজারে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত দেখছে আইইএ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ তেলের বাজারে নভেল করোনাভাইরাসের আঘাতে সৃষ্ট ক্ষতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেই মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)। সংস্থাটি মনে করছে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার খুব ধীরগতিতে হবে, যা হুমকিতে ফেলবে তেলের বাজারকে। তাদের মতে, বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা স্বাভাবিক হবে ২০২৩ সালে, যদিও এতে ২০২৫ সালও লেগে যেতে পারে। খবর ব্লুমবার্গ।
মহামারীর কারণে এ বছর তেলের চাহিদা ৮ শতাংশ পড়ে গেছে। প্যারিসভিত্তিক সংস্থাটি বলছে, কভিড-১৯ আগামী বছর নাগাদ নিয়ন্ত্রণে আসার পর ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা স্বাভাবিক হতে পারে।
করোনাভাইরাসের কারণে ভ্যাকসিন ও প্রতিষেধক বাজারে আসার পথে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরের শুরুর দিকে বাজারে আসবে ভ্যাকসিন। এর মধ্য দিয়ে কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবে এবং তেলের বাজার ২০২৩ সাল নাগাদ স্বাভাবিক হবে।
মহামারীর থাকবে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব। এর পরও ২০২৩ সালের মধ্যে তেলের বাজার স্বাভাবিক হওয়াটা এ শিল্পের জন্য সুখবরই। আইইএর আরেকটি পূর্বাভাস বলছিল, ২০৩০ সাল নাগাদ তেলের চাহিদার প্রবৃদ্ধির সমাপ্তি ঘটবে এবং তখন চাহিদা নির্দিষ্ট মাত্রায় স্থিতিশীল থাকবে। সংস্থাটির এর নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল বলেন, ‘বৈশ্বিক তেল চাহিদার প্রবৃদ্ধির শেষ হবে পরের দশকে।’
আইইএ বলছে, মহামারীর ক্ষত থেকে সেরে ওঠার প্রক্রিয়া যদি ধীরগতির হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধন হয়, তবে তেলের চাহিদায় প্রবৃদ্ধি আসতে বেশ কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
বিপি পিএলসি, রয়্যাল ডাচ শেল পিএলসির মতো শীর্ষ তেল কোম্পানি স্বীকার করেছে, কভিড-১৯ মহামারী ও জলবায়ু সংকট এড়াতে দ্রুতগতিতে পরিবর্তন আনতে তাদের সম্পদ ও ব্যবসায়িক মডেলের ওপর সুগভীর প্রভাব পড়তে পারে। আইইএর পর্যবেক্ষণে এসব কোম্পানির আশঙ্কার বিষয়টি স্থান পেয়েছে।
মহামারীর বিদায়ের পর তেলের বাজার তো স্বাভাবিক হওয়ার কথা। তবে কেন পরের দশক শেষে এর প্রবৃদ্ধি কমে যাবে? আইইএর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আরো বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রচলন হলে তেলের চাহিদা কমে যাবে। ২০৩০ সাল নাগাদ দিনে ১০ কোটি ৩২ লাখ ব্যারেলের চাহিদায় পৌঁছতে এখন থেকেই প্রতি বছর ৭ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল বাড়াতে হবে। গত বছরের পূর্বাভাসে অবশ্য এর চেয়ে ২০ লাখ ব্যারেল বেশি বলা হয়েছিল।
আরো খারাপ হতে পারে: দীর্ঘস্থায়ী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যদি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করে, তবে বর্তমান পূর্বাভাসের চেয়েও ১০ শতাংশ সংকুচিত হবে বৈশ্বিক অর্থনীতি। তাতে তেলের বাজারের চিত্রটা আরো করুণ দশায় পতিত হতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে চলতি বছরের শেষ ভাগে তেলের ব্যবহার করোনাভাইরাসের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না এবং এর পর পরই তেলের চাহিদা দিনে ১০ কোটি ব্যারেলের নিচে নেমে যাবে এবং সেখানে স্থিতিশীল অবস্থায় থাকতে পারে।
আইইএ ও আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির শঙ্কার সঙ্গে অবশ্য তেল রফতানিকারক দেশগুলোর ভাবনা মিলছে না, যারা বলছে, দুই দশক ধরেই তেলের চাহিদা প্রবৃদ্ধির ধারায় থাকবে। আবার দ্য কার্টেল বলছে, ২০২২ সালের মধ্যে তেলের চাহিদা আগের জায়গায় ফিরে আসবে, যা আইইএ বলছে ২০২৩ সাল।
বড় বিনিয়োগ: আইইএ বলছে, তেলের চাহিদায় প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস না থাকলেও বৈশ্বিক তেল শিল্প প্রাক্কলিত চাহিদা পূরণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এমনকি ২০৩০ সালের পর নতুন ভাণ্ডার খুঁজে পেতে প্রতি বছর ৩৯০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। কেননা ততদিনে বর্তমান তেলক্ষেত্রগুলোর উৎপাদনক্ষমতা অনেক কমে যাবে।
দশক শেষে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম হতে পারে ৭৫ ডলার, বর্তমানে যা ৪০ ডলারের একটু বেশি। তেলের দাম বেশি পেলে তেল খনি ড্রিলাররা বেশি উৎসাহ নিয়ে কাজ করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শিলা শিল্প ২০২২ সালে কভিড-পূর্ব অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। তাতে ২০৪০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী হিসেবে টিকে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও শিলা শিল্প যদি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয় কিংবা ঋণের ওপর বেশি নির্ভর হয়ে পড়ে, তবে তেলের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ পারফরম্যান্স চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘পুঁজিবাজার এখন বেশ ভালো অবস্থায় নেই এবং পরের ঝড় যাবে ব্যাংক খাতের ওপর দিয়ে। এটা পরিষ্কার নয়, এ বিনিয়াগ হবে কিনা।’
ওপেক সদস্যরাও কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে চলেছে। কেননা হ্রাসপ্রাপ্ত রাজস্ব জাতীয় বাজেটের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং নাইজেরিয়া, ইরাক ও অ্যাঙ্গোলায় যে প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছিল তাও হারানোর পথে।