৬ শ্রমিককে সাক্ষি করার কথা বলে ডেকে নিয়ে আসামি বানিয়েছে পুলিশ : পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দের অভিযোগ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে বাসের মধ্যে নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা ও মারপিটের অভিযোগে আটক ৬ পরিবহন শ্রমিকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেছেন জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, এই শ্রমিকেরা অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগে ওই নারীসহ বাসের হেলপার মনিরুল ইসলাম মনিকে ধরে এনেছিলেন। অথচ পুলিশ তাদেরকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে মামলার আসামি বানিয়েছে। পুলিশ নিরীহ শ্রমিকদের সাথে অন্যায় করেছে। গতকাল রোববার বেলা ১১টায় সংগঠন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এ অভিযোগ করেন। তবে কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. মনিরুজ্জামানের ভাষ্য, ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই ৬ শ্রমিকসহ বাসের হেলপার মনিরুল ইসলাম মনিকে আসামি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, মনিরুল ইসলাম মনি এমকে পরিবহনের বাসের হেলপার হলেও তাদের সংগঠনের সদস্য নয়। অপর ৬ শ্রমিক তাদের সংগঠনের সদস্য। মনিরুল ইসলাম মনি ওই নারীর পূর্ব পরিচিত। কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. মনিরুজ্জামানও তাদেরকে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন মোবাইল ফোনে মনিরুল ইসলাম মনির সাথে নারীর ১১ বার কথা হয়েছে। ওইদিন রাতে কাউকে কোনোকিছু না জানিয়ে ঢাকা রোডের আরএস কোম্পানির সামনে থেকে মনিরুল ইসলাম মনি বাস নিয়ে গিয়েছিলেন। চোর নিয়ে গেছে ভেবে এই ৬ শ্রমিক বাসের অনুসন্ধানে বের হন। তারা রাতে বকচর হুশতলায় বাসটি দেখতে পান। এ সময় তারা মনিরুল ইসলাম মনি এবং ওই নারীর অনৈতিক কর্মকান্ড ধরে ফেলেন। যে বাস রুটি রুজির উৎস তারই মধ্যে অনৈতিক কর্মকান্ড দেখে উত্তেজিত হয়ে শ্রমিকরা দুজনকে মারধর করতেই পারেন। কিন্তু তারা ধর্ষণের চেষ্টার মতো কোনো জঘন্য কাজ করতে পারেন না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সদর পুুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলতাফ ওই নারীসহ হেলপার মনিরুল ইসলাম মনিকে আরএস কোম্পানির অফিসের সামনে থেকে নিয়ে যান। অথচ পুলিশ এখন মিথ্যাচার করছে। পুলিশ বলছে, তাদেরকে বকচর হুশতলা থেকে নিয়ে গেছে। নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, যেহেতু ওই ৬ শ্রমিক দুজনকে বকচর হুশতলায় পেয়ে ধরে এনেছিলেন সেই কারণে তাদেরকে এ বিষয়ে সাক্ষী বানানোর কথা বলে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে নেতৃবৃন্দ থানায় ছুটে গিয়েছিলেন। প্রথমে ওসি তাদের সাথে কথা বলতে চাননি। পরে দেনদরবার চালানোর পর ওসি তাদের সাথে কথা বলেন। এ সময় তিনি নেতৃবৃন্দকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, নিরীহ শ্রমিকদের কোনো ক্ষতি হবে না। অথচ ওই শ্রমিকদেরকে পরে ধর্ষণের চেষ্টা ও মারধরের আসামি বানানো হয় মামলায়। তারা বলেন, পুলিশ নিজেরা এজাহার লিখে এনে ওই নারীকে দিয়ে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসকের কাছে আগামী ৭ দিনের মধ্যে আটক ৬ শ্রমিকের মুক্তিসহ ৪ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহবান জানানো হয়। শ্রমিকদের মুক্তি না দেয়া হলে কর্মবিরতি পালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন নেতৃবৃন্দ।
যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাহেদ হোসেন জনির সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক মো. মোর্তজা হোসেন। উপস্থিত ছিলেন আবু হাসান, রবিউল ইসলাম লবিন, আজিজুল আলম মিন্টু, মিন্টু গাজী, হারুন অর রশিদ ফুলু, টিপু সুলতান, রতন অধিকারী, মিজানুর রহমান মিজু প্রমুখ।
এদিকে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের অভিযোগ বিষয়ে কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ওই নারীর সাথে সিনিয়র পুলিশ অফিসাররা কথা বলেছেন। তিনি এ সময় তাদের কাছে অভিযোগ করেন মনিরুল ইসলাম মনি তাকে আশ্রয় দেওয়ার নামে ধর্ষণ করেছেন। আর ৬ শ্রমিকের ছবি দেখানো হলে এর মধ্যে ৪ জনকে শনাক্ত করে বলেন, এরা ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে তার জামা ছিঁড়ে ফেলেছিলো। তিনি বাধা দেওয়ায় ৬ শ্রমিকই মারধর করেন। এ কারণে ওই নারীর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মনিরুল ইসলাম মনিকে ধর্ষণে অভিযুক্ত এবং ৩ জনকে ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্তসহ ৬ শ্রমিককে মামলায় মারপিটের অভিযোগে আসামি করা হয়েছে।