গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার ৪ ধর্ষক ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর-অর্জুন-রবিউল-রনি আটক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ শুক্রবার পর্যন্ত প্রবল প্রতাপ ছিল তাদের। করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে সরকারি ভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলেও তাদের কারণে কর্তৃপক্ষ খুলে রাখতে বাধ্য হয় মুরারি চাঁদ (এমসি) ছাত্রাবাস। এই কলেজের ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান যার দাপটে হোস্টেল সুপার ছেড়ে দিয়েছেন তার বাংলো। তার নেতৃত্বে ছাত্রাবাসে থাকা মানে আড্ডা, নেশা, দলবেঁধে ফুর্তি তো ছিলই, হাতে অস্ত্র থাকায় চাঁদাবাজিও ছিল কলেজ ও আশেপাশের এলাকায়। তবে এতেই কি আর প্রমাণ হয় নেতাগিরি? তার প্রমাণ রাখতে গত শুক্রবার কলেজ মাঠে ঘুরতে আসা এক দম্পতিকে ছাত্রাবাসে তুলে এনে স্বামীকে ব্যাপক মারধর আর স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে সাইফুর রহমান ও তার দল। তবে এ ঘটনা চাউর হওয়ায় প্রভাবশালী সবাই যখন মাথার ওপর থেকে আশীর্বাদের হাত তুলে নিলো তখন চোখে সর্ষেফুল দেখতে দেখতেই রাজত্ব ফেলে দীনভিখারির মতো পালিয়ে আত্মগোপন করার চেষ্টা চালায় পরম তেজি ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর ও মামলাভুক্ত তার অপর সহযোগীরা। যে শখের দাড়ি রেখে বীরদর্পে নিজের চেহারা দেখাতো ছাত্রলীগকর্মী সাইফুল, সেই দাড়ি কেটে এলাকা ছাড়ার ফন্দি করে সে। অন্যদিকে, আরেক ‘বীর’ ছাত্রলীগকর্মী অর্জুন লস্কর হবিগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায় পালিয়ে যায় সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যাওয়ার ধান্দায়। তবে দুজনের আশাতেই বালি ঢেলে তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এদিকে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার অন্যতম দুই আসামি ছাত্রলীগকর্মী শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি ও ছাত্রলীগকর্মী রবিউল ইসলামকেও গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে হবিগঞ্জের শহরের কোরেশনগর থেকে রনিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব আর নবীগঞ্জ থেকে রবিউলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি হবিগঞ্জ সদর থানার বাগুনীপাড়ার শাহ মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে আর রবিউল ইসলাম (২৫) সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানাধীন বড়নগদীপুর (জাগদল) গ্রামের বাসিন্দা।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা ধর্ষণ মামলার আসামি রবিউলকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ডিবি পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে হবিগঞ্জ শহরের কোরেশনগর থেকে রাত সাড়ে আটটার দিকে রনিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৯। স্থানীয়রা জানান, গ্রেফতারকৃত রনি আদালতে আত্মসমর্পণের জন্য রাতে শহরের এক আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে আসে। তবে তার দেখা পাওয়ার আগেই রনিকে র‌্যাব-৯-এর একটি টিম গ্র্রেফতার করে সিলেটে নিয়ে যায়। হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, আটক রবিউলকে রাতেই সিলেটের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর আগে, একইদিন সকালে এ ঘটনার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান (২৮) ও ৪র্থ আসামি অর্জুন লস্করকে (২৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। সাইফুরকে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলা থেকে এবং হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা থেকে অর্জুন লস্করকেও গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত সাইফুর রহমান বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তাহমিদ মিয়ার ছেলে আর অর্জুন জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রাম গ্রামের কানু লস্করের ছেলে।


এদিকে সিলেট পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণ ও অস্ত্র মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমান গ্রেফতার এড়াতে দাড়ি কেটে চেহারা পাল্টে ফেলার চেষ্টা করে। তবুও তার রক্ষা হয়নি। রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানাধীন সীমান্তবর্তী এলাকা খেয়াঘাট থেকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত সাইফুর রহমান লাগঞ্জের চান্দাইপাড়া গ্রামের তাহিদ মিয়ার ছেলে। তাকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মহানগরের শাহপরাণ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সাইফুর গ্রেফতার এড়াতে বাঁচতে তার মুখের দাড়ি কেটে ফেলে। সে সীমান্ত পথ ব্যবহার করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। গ্রেফতারের পর সাইফুর পুলিশের কাছে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। এমসি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সাইফুর এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে। তার ইভটিজিং ও হয়রানির কারণে এমসি কলেজ থেকে অনেক মেয়ে অন্য কলেজে চলে যায়। এমনকি কলেজে ছাত্রলীগকর্মী সাইফুরসহ তার সহযোগীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে চাঁদাবাজিও করে আসছে। এদিকে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার অন্যতম আসামি ছাত্রলীগকর্মী অর্জুন লস্করকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে হবিগঞ্জের মাধবপুর সীমান্তের কাছের একটি গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার ভোর ৬টার দিকে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার মনতলা এলাকার দুর্বলপুর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে সিলেট জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন। মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন তাকে গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অর্জুন মাধবপুর উপজেলার মনতলা সীমান্ত দিয়ে ভারত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। গ্রেফতারের পর তাকে সিলেটে নিয়ে গেছে সিলেট জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।