মনিরামপুরে ধইঞ্চা ক্ষেতে শিম চাষে লাভবান কৃষক

0

এস.এম মজনুর রহমান, মনিরামপুর (যশোর) ॥ যশোরের মনিরামপুরে বিগত কয়েকবছর ধানের বাজার মূল্যের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় চাষিরা উদ্বিগ্ন। আর যে কারণে লোকসান কিছুটা হলেও পুশিয়ে নিতে এবার চাষিদের একটি অংশ ধান চাষের বিকল্প হিসেবে ধইঞ্চা গাছের ওপর গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ করেছেন। এর মধ্যে মনিরামপুর উপজেলার চালুয়াহটি ও মশ্বিমনগর ইউনিয়নে গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ করা হয়েছে ৭৫০ বিঘা জমিতে। এই ইউনিয়ন দুটির চাষিরা শিমের ফলন ও বাজারমূল্য ভাল পাওয়ায় বেশ খুশি। ফলে অন্য এলাকার চাষিরা বর্তমান গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
সরেজমিন গিয়ে কথা হয় চালুয়াহাটি ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের চাষি জাকির হোসেনের সাথে। তিনি জানান, কয়েক বছর যাবত ধান চাষে লোকসান হওয়ায় চাষাবাদ প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কৃষি বিভাগের পরামর্শে জুন মাসে আউশ ধানের মৌসুমে শাহপুর মাঠে মোট ৪৮ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ করেন। তিনি জানান, জমিতে প্রথম তিনি ধইঞ্চা বীজ বপন করেন। এরপর ধইঞ্চা গাছ একটু বড় হলে গাছের গোড়ায় শিমের বীজ বপন করেন। মাসখানেক পর শিমের গাছ উঠিয়ে দেন ধঞ্চইা গাছে। পরবর্তীতে ধইঞ্চা গাছেই শিম গাছের পরিধি ছড়িয়ে পড়ে। আগস্ট মাসেই পুরো ৪৮ শতক জমিতে ধইঞ্চার ওপর শিমগাছের বিস্তৃতি ঘটে এবং তাতে ফুল আসে। আগস্টের শেষের দিকে শিম তুলে তিনি বিক্রি শুরু করেন। প্রথম দিকে তিনি প্রতিকেজি শিম পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন ১৬০ টাকা হারে। এরপর দিন যত যাচ্ছে, ততই বিক্রি দাম কমে আসছে। বর্তমানে তিনি প্রতিকেজি শিম বিক্রি করছেন ১১০ টাকা। তিনি জানান, ৪৮ শতক জমিতে বীজসহ সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ক্ষেত থেকে মোট ৬০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করার টার্গেট রয়েছে চাষি জাকির হোসেনের। হাকিমপুর গ্রামের চাষি বাশারত হোসেন জানান, তিনি ৩৩ শতক জমিতে একই পন্থায় গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ করেছেন। ফলনও বেশ ভাল হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে তিনি ক্ষেত থেকে এক থেকে দেড় মণ শিম তুলে এলাকার পাইকারদের কাছে প্রতিকেজি বিক্রি করেন ১১০ থেকে ১৩০ টাকায়। তিনি জানান, ধান চাষের চেয়ে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে অধিক মুনাফা হচ্ছে। এ জন্য তিনি খুবই খুশি। শুধু জাকির হোসেন অথবা বাশারত হোসেন নয়, তাদের মতো শিমের আবাদ করেছেন ওবায়দুর রহমান, আমিন গাজী, মফিজুর রহমান, আমিন গাজীসহ এলাকার শতাধিক চাষি। ওবায়দুর রহমান নামের আরেক চাষি জানান, ধইঞ্চা গাছের কারণে অধিক খরচ করে মাচা তৈরি করা লাগে না। ৩৩ শতক জমিতে এক কেজি ধইঞ্চা বীজ বপন করলে চলে। এক কেজি বীজের মূল্য মাত্র ৬০ টাকা। এছাড়াও ধইঞ্চার পাতা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার জমিতে পাতা পড়ে তা পচে জৈব সার হয়। অন্যদিকে মৌসুম শেষে ধইঞ্চা গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যে কারণে বর্তমান গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে এলাকার অধিকাংশ চাষির মাঝে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। মশ্বিমনগর ও চালুয়াহাটি ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান জানান, ধইঞ্চা গাছের ওপর শিম চাষ একটি লাভজনক ফসল। ফলে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার জানান, চলতি মৌসুমে ওই দুটি ইউনিয়নে ১১০ হেক্টর (৭৫০ বিঘা) জমিতে চাষিরা পরিবেশবান্ধব ধইঞ্চা গাছের ওপর গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করেছেন। আর এ চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বেশ উদ্দীপনা।