বৃষ্টিতে নিমজ্জিত ক্ষেত, সবজির বাজারে নিয়ন্ত্রণহীন দাম

0

আকরামুজ্জামান ॥ বৃষ্টিতে ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় যশোরে সবজির উৎপাদন কমে গেছে। এ কারণে সকল ধরনের সবজির দাম বেড়েই চলেছে। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে বাজারে প্রতিকেজি সবজির দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা করে। পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন চাহিদার চেয়ে আমদানি কম হওয়ায় সবজির দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির অজুহাতে ব্যবসায়ীরা লাগামহীন সবজির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে নি¤œ আয়ের মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। অন্যান্য বছরে এ সময়ে যশোরের বাজারগুলোতে আগাম জাতের নানা ধরনের শীতের সবজিতে ভরে যেতো। সবজির আমদানি বেশি থাকায় দামও কম থাকতো। কিন্তু এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। আশ্বিনের বৃষ্টির কারণে কৃষকের ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে নানা জাতের সবজি। যেকারণে এর প্রভাব পড়ছে খুচরা ও পাইকারি বাজারে। চাষিরা বলছেন, টানা বৃষ্টিতে সবজির তে নষ্ট হওয়ায় লোকসানে পড়েছেন তারা। এতে ক্রেতাদের সবজি কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ।
যশোর সদর উপজেলার চূড়ামনকাঠি, সাতমাইল, তীরের হাট, খাজুরা, নোঙরপুর এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে আবাদ করা হয়েছে নানা জাতের সবজি চাষ। সামনে শীত মৌসুমকে টার্গেট করে কৃষকরা শিম, বরবটি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাল শাক, সবুজ শাক, বেগুন, পটলসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে এসব সবজি। আব্দুলপুর মাঠের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, তারা এবছর খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। অন্যান্য বছরে এ সময়ে ক্ষেত থেকে প্রচুর পরিমাণ সবজি তুলে তারা বাজারে তুলতেন। বাজারে নিত্য নতুন সবজি পেয়ে ক্রেতারাও বেশ খুশি হতেন। কিন্তু এবার বৃষ্টির কারণে সবজির উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় মাঠের মাঠ আগাম জাতের শিম আবাদ রয়েছে। এসব শিমের ফুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টিতে। যেকারণে এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ২০ কেজি শিম পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়ছে। একই কথা বলেন, কৃষক গোলাম মাওলা। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় পটল গাছ মরে যাচ্ছে। লালশাক, সবুজ শাকের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া শিমের ফুল ঝরে যাওয়ায় গাছে ফল দাড়াচ্ছে না। তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে আমাদের চরম ক্ষতি হয়ে যাবে। নোঙরপুর মাঠে কথা হয় সবজি চাষি রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণে সবজি েেতর ব্যাপক তি হয়েছে। সদ্য বীজ বপন করা মুলা, পালংশাক, ফুলকপি বাধাঁকপি ও লাল এবং সবুজ শাকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আলু রোপণের জন্য তৈরি করা জমিতে পানি জমে যাওয়ায় সময় মতো আলু রোপণ করা যাচ্ছে না। বৃষ্টির কারণে সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গত কয়েকদিনে যশোরের পাইকারি ও খুচরা বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। কোনো কোনো সবজির দাম ৩০ টাকা বেড়েছে। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। শাঁক প্রতি আঁটিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। লাউ ও কুমড়োতে প্রতি পিস বেড়েছে ১৫ টাকা। যশোর চূড়ামনকাঠি সবজি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে তি হওয়ায় সবজির ফলন কমেছে। দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। আড়তে যা আসছে অনেকটাই কাড়াকাড়ি করে কিনতে হচ্ছে। আড়তে দাম বেশি পড়ছে ফলে বেশি দামে বিক্রিও করতে হচ্ছে। আবুল কালাম আজাদ নামে একজন সবজি ব্যবসায়ী বলেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম কিছুটা উর্ধ্বমুখী এটি ঠিক। তবে খুচরা বাজারে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বৃষ্টির অজুহাতে প্রতিটি সবজির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। বাজার তদারকির অভাবে এসব দাম বাড়ছে বলে তিনি দাবি করেন। শনিবার যশোর বড় বাজারের সবজির দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি সবজির দাম আকাশছোঁয়া। প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ টাকা, লাউ প্রতিপিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, ফুলকপি ১০০ টাকা, কাঁচকলা ৬০ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা, ডাটা শাক ২৫ টাকা, কচুরমুখি ৪০ টাকা, মেচড়ী ১৬০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সবজি ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, গত প্রায় একমাস ধরে যশোরে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যেকারণে সবজি উৎপাদন কমে গেছে। আর এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। তবে ক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে সব ধরনের সবজির উৎপাদন যে কম হচ্ছে এটি ঠিক নয়। বৃষ্টির অজুহাতে ব্যবসায়ীরা গড় হিসেবে সকল সবজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যার খেসারত দিচ্ছেন ক্রেতারা। আর এর বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে নি¤œ আয়ের মানুষের জীবন-যাত্রার ওপর। উলেখ্য, এবার যশোরে এবার ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদ হয়েছে। সামনে শীতকালকে সামনে রেখে সবজি আবাদ আরও বাড়বে বলে কৃষি বিভাগ দাবি করেছে।