চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল সহসা হচ্ছে না: সময় চেয়েছে সিনোভ্যাক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥দেশে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অপেক্ষা বাড়ছে। চীনের টিকার ট্রায়াল সহসাই শুরু হচ্ছে না। চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাক টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের জন্য একটু সময় চেয়েছে। গত ২৪শে সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগযোগ করে চিঠি দিয়ে কোম্পানিটি সময় চায়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান মানবজমিনকে বলেন, চীনের কোম্পানি সিনোভ্যাক টিকার ট্রায়ালের বিষয়ে বৃহস্পতিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিঠি দিয়েছে। তারা একটু সময় চেয়েছে। আগামী অক্টোবরে তারা এখানে সার্ভে করবে। তারপর নভেম্বরে ট্রায়ালের চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছে। এজন্য তারা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছে।
এদিকে ভ্যাকসিন বা টিকা দেশে পৌঁছালেই পরীক্ষামূলক ট্রায়াল শুরু করবে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। গত ২৭শে আগস্ট বাংলাদেশ সরকার চীনের কোম্পানি সিনোভ্যাকের টিকা পরীক্ষার অনুমতি দেয়। আইসিডিডিআর,বি এই পরীক্ষা করবে। ট্রায়ালের প্রধান গবেষক ও আইসিডিডিআর,বি’র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. কে জামান এ বিষয়ে গতকাল মানবজমিনকে বলেন, এখনো ট্রায়ালের ভ্যাকসিন আসেনি। আমরা অপেক্ষায় আছি। রাজধানীর সাতটি হাসপাতালে ৪ হাজার ২০০ স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর চীনা টিকার পরীক্ষা হবে। আইসিডিডিআর,বি এরই মধ্যে প্রায় ২৫০ মাঠ গবেষক নিয়োগ দিয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ চলছে। আইসিডিডিআর,বি কর্তৃপক্ষ সাতটি হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরীক্ষার প্রাথমিক প্রস্তুতির ব্যাপারেও কথা বলে এসেছে। হাসপাতালগুলো হচ্ছে- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইউনিট-২ এবং বার্ন ইউনিট-১, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল এবং ঢাকা মহানগর হাসপাতাল। যদিও ইতিমধ্যে এই সাতটি হাসপাতালের দু’টি হাসপাতাল সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। আইসিডিডিআর,বি’র কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা হাসপাতাল বন্ধর বিষয়ে মিটিং করে পরে সিদ্ধান্ত নেবেন।
আইসিডিডিআর,বি’র সঙ্গে সিনোভ্যাকের চুক্তিতে বলা আছে, পরীক্ষায় নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হলে সিনোভ্যাক ১ লাখ ১০ হাজার টিকা বাংলাদেশকে বিনামূল্যে দেবে। এ ছাড়া টিকা তৈরির প্রযুক্তিও বাংলাদেশকে দেয়ার কথা আছে। সিনোভ্যাকের এই টিকার নাম ‘করোনাভ্যাক’। ইতিমধ্যে ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ায় করোনাভ্যাকের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আইসিডিডিআর,বি’র কর্মকর্তারা বলছেন, গবেষণাটির স্বতন্ত্র ডাটা এবং নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। দেশী এবং বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মনিটরিং বোর্ড থাকবে। যা বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের টিকার শেষ ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটি দক্ষিণ কোরীয় গবেষণা সংস্থা এলএসকে পরিচালনা করবে। জাতীয় পরামর্শক কমিটিকেও পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। ট্রায়ালের আপডেট ঔষধ প্রশাসন, বিএমআরসি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হবে। যেসব স্বেচ্ছাসেবক ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করবেন তাদের কোনো আর্থিক সহায়তা করা হবে না। তবে ট্রায়ালের সময় কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা দেয়া হবে। এই পরীক্ষার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সিনোভ্যাক তদন্তকারী ভ্যাকসিন সম্পর্কিত সমস্ত দায়বদ্ধতা গ্রহণ করবেন এবং বীমা সহ উপযুক্ত দায়বদ্ধতা নেবে।
বাংলাদেশে ট্রায়ালের পদ্ধতি: আইসিডিডিআর,বি’র কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে পরীক্ষা চালানো হয়েছে, সেই নিয়ম অনুসরণ করে বাংলাদেশের জন্য একটা পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। যাদের ওপর ট্রায়াল চালানো হবে, তাদের একদলকে দেয়া হবে করোনাভাইরাস প্রতিষেধক উপাদানসহ আসল টিকা। আরেকদলকে এমন কিছু দেয়া হবে, যাতে আসল টিকার কোনো উপাদান থাকবে না (যেটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় প্ল্যাসিবো বলা হয়)। কিন্তু কাউকেই জানানো হবে না কাদের আসল টিকা আর কাদের প্ল্যাসিবো দেয়া হচ্ছে। দু’টি দলকেই পর্যবেক্ষণে রাখা হবে ছয় মাস। এজন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি টেলিমেডিসিন ইউনিট ইতিমধ্যেই গঠন করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা তা চালু থাকবে। ট্রায়ালে অংশ নেয়া দুই দলের প্রত্যেকের সঙ্গে টেলিমিডিসিন ইউনিট নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে। তাদেরকেও বলা হবে, তাদের শরীরে ছোট-বড় কোনো সমস্যা দেখা দিলেই তা সেই ইউনিটকে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে পরামর্শ নিতে হবে। যাদের আসল টিকা দেয়া হবে এবং টিকার আসল উপাদান যাদের শরীরে প্রয়োগ করা হবে না-এই দুই দলের প্রত্যেকের শরীরে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে-সে সব তথ্য নিয়ে প্রত্যেক সপ্তাহে পর্যালোচনা করা হবে। এ ব্যাপারেও একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করবে। এই বিশেষজ্ঞ কমিটির পর্যালোচনা রিপোর্টের মাধ্যমে টিকার কার্যকারিতার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত আসবে। কর্মকর্তারা বলেছেন, টিকা প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর থেকে পর্যবেক্ষণের শেষ সময় পর্যন্ত এই পুরো সময়কে গুরুত্ব দিয়ে অনেকগুলো বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করবে। এই সময়ে অংশগ্রহণকারীদের শরীর নিরাপদে আছে কিনা- সেটাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নজরদারিতে রাখা হবে। এর পরে ছয় মাস তাদের পুরোপুরি পর্যবেক্ষণে রেখে তাদের শারীরিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হবে। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বুঝতে একটা লম্বা সময় প্রয়োজন হবে। কর্মকর্তারা বলেছেন, ট্রায়ালের পুরো কাজ করবে আইসিডিডিআর,বি। তাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা তারা নেবে। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চীন, রাশিয়া, ভারত ছাড়া অন্য দেশ থেকে টিকা আনার সম্ভাব্য বিকল্প পথ খুঁজে দেখছে। কোভ্যাক্সের (কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্লোবাল অ্যাকসেস) মাধ্যমে টিকা পাওয়ার প্রক্রিয়ায়ও বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে। অক্সফোর্ডের টিকা দেশে আনতে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে দেশের খ্যাতনামা বৃহৎ ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদানকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।প্রসঙ্গত, গত ১৮ই জুলাই চীনের তৈরি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)। এরপর অনেক দিন বিষয়টি ঝুলে থাকার পর গত ২৭শে আগস্ট সরকারের পক্ষ থেকে ট্রায়ালের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসে।