গুরুত্ব বাড়ছে মোংলা বন্দরের, সক্ষমতা বাড়ালে আয় বাড়বে চারগুণ

0

মোংলা সংবাদদাতা॥ দেশে আমদানি রফতানির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে মোংলা বন্দর। সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নত এবং বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে আগামী দু’ বছরের মধ্যে এ বন্দরের আয় বাড়বে চারগুণ। বর্তমানে আমদানি করা গাড়ি খালাসের কাজে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দরকে বিশেষ প্রাধান্য দিচ্ছেন। এতে এই বন্দরের রাজস্ব আয়ও বাড়ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, পশুর নদীর নাব্য সংকট নিরসন ও জেটির সংখ্যা বাড়লে আগামীতে এই বন্দর আরও আধুনিক বন্দরে রূপ নেবে। বন্দর ব্যবহারে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকার সঙ্গে ৭০ কিলোমিটার দূরত্ব কম হওয়ায় এ বন্দরকে এখন বেছে নিচ্ছেন আমদানিকারকরা। ফলে আমদানি-রফতানিতে সচল হয়ে উঠছে মোংলা বন্দর। নির্মাণের পর ২০ বছর ধরে নানা কারণে মৃতপ্রায় হয়ে থাকা বন্দরটি সচল করতে ২০০৯ সালে পুরোদমে এর কার্যক্রম শুরু হয়। বন্দরটির গতিশীলতা বাড়াতে এরই মধ্যে ঢাকা-মোংলা চারলেন সড়কের কাজ চলছে। এদিকে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়ায় এবং পদ্মা সেতু রেলপথ প্রকল্পে খুলনা-মোংলা রেলপথ যুক্ত হওয়ায় এ বন্দরের বিপুল সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন এর ব্যবহারকারীরা।
বর্তমানে দেশের মোট আমদানি-রফতানির মাত্র ছয় থেকে আট ভাগ সম্পন্ন হচ্ছে এই বন্দর দিয়ে। তবে উন্নত সড়ক ব্যবস্থাপনা, মোংলাকেন্দ্রিক ইপিজেড নির্মাণ ও বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়ানো হলে সেটি ২০ ভাগে উন্নীত করা সম্ভব বলে মনে করেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। তিনি বলেন, এক সময় এই বন্দরে বছরে জাহাজ আসতো ১০০টি। আর এখন মাসেই আসে ৮০ থেকে ১০০টি জাহাজ। একইভাবে গত ১০ বছরে এই বন্দরে ৩০ ভাগ কার্গো ও ৪০ ভাগ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে। ভবিষ্যতে এর কার্যক্রম বাড়াতে হলে সক্ষমতা আরও কয়েকগুণ বাড়াতে হবে। সেই লক্ষ্যে বন্দরের মূল ৫টিসহ মোট ১৩ জেটির পাশাপাশি আরও ৯টি জেটি নির্মাণেরও পরিকল্পনা আছে বলেও চেয়ারম্যান জানান।
বন্দরের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমাদের ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ পশুর চ্যানেল আছে। এই চ্যানেলের নাব্য বৃদ্ধি করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আর পদ্মা সেতু রেলপথ মেগা প্রকল্পে মোংলা-খুলনা রেল সংযুক্ত হচ্ছে, পাশাপাশি পদ্মা সেতু যখন দু’বছরের মধ্যে নির্মাণ শেষ হবে, তখন মোংলা বন্দরের ব্যবহার চারগুণ বেড়ে যাবে।’ এদিকে বন্দরের সবচেয়ে বড় সমস্যা নাব্য সংকট। বর্তমানে পণ্যবাহী বড় জাহাজ আনলোড করতে হয় বন্দর চ্যানেলের অদূরে হারবাড়িয়া পয়েন্টে। বন্দর ব্যবহারকারী ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম ও এইচ এম দুলাল বলেন, হারবাড়িয়ার ৭, ৮, ৯ ও ১০ বয়ায় ড্রেজিং করা হলে এই বন্দরের গতিশীলতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
আর পশুর চ্যানেলের নাব্য বৃদ্ধি ও চারলেন মহাসড়ক নির্মাণ করে মোংলাকে আধুনিক বন্দর করতে পারলে দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলেও জানান এই ব্যবসায়ীরা। নাব্য সংকট নিরসনের বিষয়ে জানতে চাইলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মো. শতকত আলী বলেন, ‘আমাদের জেটি থেকে হারবাড়িয়া ১০ নম্বর বয়া পর্যন্ত (ইনারবার) ড্রেজিংয়ের জন্য অলরেডি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, প্রকল্পটির দরপত্রও গ্রহণ করা হয়েছে, এখন এর মূল্যায়নের কাজ চলছে। এ প্রকল্পটির কাজ শুরু হলে পশুর চ্যানেলে নাব্য সংকট পুরোপুরি দূর হবে বলে আশা করা যায়।’