সরকারি প্রণোদনার সুযোগ পাচ্ছেন না গদখালীর ফুল চাষিরা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের প্রভাব ও সুপার সাইকোন আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত যশোরের ঝিকরগাঝার গদখালীর ফুল চাষিরা সরকারি প্রণোদনা থেকে একেবারেই বঞ্চিত হয়েছেন। বিগত ৬ মাস ধরে ক্ষতিগ্রস্ত ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা প্রণোদনার অর্থের জন্য বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। যেকারণে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন এ অঞ্চলের শ শ ফুল চাষি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৪ শতাংশ হারে ঋণ প্রণোদনা সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। প্রণোদনার সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক শস্য ও ফসল খাতে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কৃষি ঋণ প্রদানের ঘোষণা দেয়। এছাড়াও ফুল ও ফল চাষ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি খাতে ৪ শতাংশ সুদে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা স্কিম গঠন করা হয়। গত ৬ মাস আগে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও যশোরের গদখালীর ফুল চাষিদের জন্য সরকারি এ সহযোগিতার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। গদখালীর ফুল চাষিরা জানান, করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত কয়েক মাস ধরে ফুল চাষাবাদ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতিতে ফুল বিক্রি করতে না পারায় অর্থের অভাবে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ফুলের শেডগুলো আজো পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। ফুলচাষের মৌসুম এলেও টাকার অভাবে নতুনভাবে চাষাবাদ শুরু করতে না পারায় ফুল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। বাংলাদেশ ফাওয়ার সোসাইটি সূত্র মতে, যশোরের ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার ৭৫টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় হরেক রকমের ফুল। ঝিকরগাছার পানিসারা-গদখালী গ্রামগুলোর রাস্তার দুই পাশে দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে সারাবছরই লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার হয়ে থাকে। শ শ হেক্টর জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, কসমস, ডেইজ জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ হয়েছে এখানে। এসব ফুল চাষে প্রচুর অর্থেও প্রয়োজন হলেও কৃষকরা তা যোগান দিতে পারছেন না।
ফুল চাষি ইসমাইল হোসেন জানান, সরকার করোনা পরিস্থিতিতে দেশের কৃষি অর্থনীতিকে সচল রাখতে সরকার নানা উদ্যোগের কথা বলছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সরকারের প্রণোদনা সহযোগিতার কথাও বলা হচ্ছে। অথচ আমরা ফুল চাষিরা এর সামান্যতম কোনো সুযোগ পায়নি। অথচ এই গদখালীর ফুল চাষিরা সারাবছরই দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে আসছে। বাংলাদেশ ফাওয়ার সোসাইটি সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, আমরা বড় ধরনের আশা করছিলাম যে সরকার হয়তো আমাদের ফুল সেক্টরের জন্য প্রণোদনা সহযোগিতা প্রদান করবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সরকারের বিভিন্ন মহলেও যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো পক্ষই সাড়া দেয়নি। তিনি বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোতে যোগাযোগ করলে তারা বলছেন টাকা ছাড় না দেওয়ায় প্রণোদনার কোনো অর্থ প্রদান করা সম্ভব নয়। যেকারণে অনেক ফুল চাষিরা এখন বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু সেখানেও কোনো সাড়া মিলছেনা। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস, টানা বৃষ্টিপাত ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের থাবায় থমকে গেছে গদখালী এলাকা। গত পাঁচ মাসে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের ৫০০ কোটি টাকার বেশি তি হয়েছে। হতাশায় ভেঙে পড়েছেন ফুল চাষের ওপর নির্ভর এলাকার হাজার হাজার মানুষ। এ অবস্থায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ফুল চাষিদের বড় প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতার।