অপরিশোধিত জ্বালানি তেল চাহিদা পতনের মধ্য দিয়ে পার হবে ২০২০ সাল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর সবচেয়ে বড় ধাক্কা যেন লেগেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল খাতে। বছরের শুরু থেকে একের পর এক দেশে লকডাউন কার্যকর হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়ে পরিবহন খাতসহ সামগ্রিক অর্থনীতি। কমতে শুরু করে জ্বালানি তেলের চাহিদা। এ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের রেকর্ড দরপতন ঘটায়। খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, চাহিদা বাড়ানো না গেলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের কাঙ্ক্ষিত মূল্যবৃদ্ধির সুফল ভোগ করা সম্ভব নয়। তবে এ সম্ভাবনাও সুদূরপরাহত। রুশ জ্বালানিমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক বলেছেন, বিশ্বজুড়ে চাহিদা পতনের মধ্য দিয়ে ২০২০ সাল পার করবে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল খাত। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
শুক্রবার জ্বালানি খাতের একটি অনলাইন সম্মেলনে অংশ নিয়ে রুশ জ্বালানিমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক বলেন, চলতি বছরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা আগের বছরের তুলনায় দৈনিক গড়ে ৯০ লাখ থেকে এক কোটি ব্যারেল কম থাকতে পারে। এর পেছনে প্রধানতম প্রভাবক হিসেবে ভূূমিকা রাখছে করোনা মহামারী।
আলেকজান্ডার নোভাকের এমন মন্তব্য জ্বালানি তেলের রফতানিকারকদের জোট অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজের (ওপেক) পূর্বাভাসকে সমর্থন করে। গত মাসে এক প্রতিবেদনে ওপেক জানিয়েছিল, ২০২০ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা আগের বছরের তুলনায় দৈনিক গড়ে ৯০ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল কমতে পারে। রুশ জ্বালানিমন্ত্রীও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা পতনের পরিমাণ কাছাকাছি উল্লেখ করেছেন।
বিশ্বজুড়ে চাহিদার এ মন্দাভাব স্বাভাবিকভাবে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণে প্রভাব ফেলবে। সম্মেলনে নোভাক বলেন, আগামী বছর নাগাদ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৬৫ ডলারে উন্নীত হতে পারে। তবে এর পেছনে অনেকগুলো যদি ও কিন্তু রয়েছে। প্রথমত, জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়াতে বৈশ্বিক চাহিদা বাড়ানো জরুরি। দ্বিতীয়ত, চাহিদায় মন্দা ভাব চলাকালে উত্তোলন ও সরবরাহে লাগাম টানা না গেলে জ্বালানি পণ্যটির দাম কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে উন্নীত করা সম্ভব হবে না। তৃতীয়ত, জ্বালানি তেলের বাজারে ভারসাম্য ফেরাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বর্তমানের তুলনায় আরো জোরদার করতে হবে।
মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নাগাদ আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৫ ডলারে উন্নীত হতে পারে। আর আগামী বছর আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের গড় দাম দাঁড়াতে পারে ব্যারেলপ্রতি ৫৯ ডলার ৪০ সেন্টে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আলেকজান্ডার নোভাক বলেন, এটা খুবই বাস্তব একটি প্রাক্কলন। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেল ৬৫ ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। তার আগে আমাদের জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা, উত্তোলন ও সরবরাহে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূর করতে হবে। তবে আমি মনে করি, চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের গড় দাম ৫০-৫৫ ডলারের মধ্যে অবস্থান করার সম্ভাবনা রয়েছে।
চলতি বছরজুড়ে বৈশ্বিক চাহিদায় পতন বজায় থাকা নিয়ে রুশ জ্বালানিমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর পরই আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের এক দফা দরপতন ঘটেছে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আগের দিনের তুলনায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। দিন শেষে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড বিক্রি হয়েছে ৪২ ডলার ৬৬ সেন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় ব্যারেলে ১ ডলার ৪১ সেন্ট কম। গতকাল দিনের মধ্যভাগেও জ্বালানি পণ্যটির একই দামে বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম আগের দিনের তুলনায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। দিন শেষে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই বিক্রি হয়েছে ৩৯ ডলার ৭৭ সেন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় ব্যারেলে ১ ডলার ৬০ সেন্ট কম। গতকাল দিনের মধ্যভাগে জ্বালানি পণ্যটির দাম আরো কমে ব্যারেলপ্রতি ৩৯ ডলার ৫১ সেন্টে নেমে এসেছে।
গত এক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডব্লিউটিআইয়ের দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম কমেছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।