মহেশপুরের পল্লীতে বেগুনি রঙের ধান চাষ, উৎসুক মানুষের ভিড়

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্ট,ু মহেশপুর (ঝিনাইদহ) থেকে ফিরে ॥ ধানের গাছ এমনকি সেই গাছের ধান ও চাল যদি বেগুনি রঙের হয় তাহলে তো অবাক হওয়ার কথা। কারণ সকলেই সবুজ রঙের ধানের গাছ সোনালী রঙের ধান আর সাদা চাল দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন এক জাতের ধান চাষ করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার এক কৃষক। দূর-দূরান্তের মানুষ প্রতিদিনই আসছেন বাহারী রঙের এই ধান ক্ষেত দেখতে, এমনকি ক্ষেত থেকে ধান গাছ চুরির ঘটনাও ঘটছে। মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামের মৃত রুম্মত আলীর ছেলে কৃষক সাহেব আলী। কৃষিকাজ করেই মূলত চলে তার সংসার। চলতি বোরো মৌসুমে তিনি এক বিঘার কিছু বেশি জমিতে নতুন জাত ও নতুন রঙের ধান চাষ করে এলাকায় রীতিমত হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন। সম্পূর্ণ বেগুনি রঙের এই ধান এলাকায় প্রথম চাষ হচ্ছে। কৃষক সাহেব আলীর মত ওই গ্রামের আরও দুই কৃষক লোকমান হোসেন এক বিঘা ও শিক্ষক হাফিজুর রহমান দুই বিঘা জমিতে একই জাতের ধান চাষ করেছেন। তবে সাহেব আলীর ধান পাকা সড়কের পাশে হওয়ায় সেখানে প্রতিদিনই ভিড় করছেন মানুষ। গতকাল সরেজমিন গেলে দেখা যায়, ওই ধান ক্ষেতে মহর আলী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি কাজ করছেন। তার কাছ থেকে জমির মূল মালিকের ঠিকানা নিয়ে যাওয়া হয় আদমপুর গ্রামে। কথা হয় কৃষক সাহেব আলীর সাথে। তিনি বলেন, গত বছর গ্রামের শিক্ষক হাফিজুর রহমান ঝিনাইদহ থেকে ১ কেজি ধানের বীজ ১ হাজার টাকায় কিনে আনেন। এরপর ওই ধান ১০ কাঠা জমিতে লাগান। সেখানে সাড়ে ১২ মণ ধান পান তিনি। ধানের রং বেগুনি দেখতে এবং চিকন, দামও ভাল। তাই চলতি মৌসুমে তিনি ওই শিক্ষকের কাছ থেকে ৫ কেজি ধান আড়াই ’শ টাকা দিয়ে কিনে পাতো (বীজতলা) দেন। চারা হওয়ার পর ১ বিঘা ৫ কাঠা জমিতে একটি একটি করে চারা রোপন করা হয়। এখন ধানে থোড় এসেছে, আর কয়েকদিন পরেই শীষ বের হবে। স্থানীয়রা এই ধানের নাম দিয়েছেন ডায়াবেটিস ধান। কারণ এই ধানের ভাত খেলে ডায়াবেটিস রোগ ভাল হয় দাবি ওই কৃষকের। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর কোন ভিত্তি নেই।
কৃষক সাহেব আলী জানান, গ্রামে মোট তিনজন কৃষক এই বেগুনি রঙের ধানের চাষ করেছেন। এই ধানের প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে ধানের গাছ, ধান ও চাল সবই বেগুনি রঙের। ছোট বেলা থেকে সবাই সবুজ রঙের ধান গাছ দেখে অভ্যস্ত, সে কারণে বেগুনি রঙের ধান দেখে অনেকে থমকে যান অনেক কিছুই জিজ্ঞাসা করেন। তবে রাতের আঁধারে ধান ক্ষেত থেকে চারা উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যে কারণে ধান ক্ষেত মাঝে মাঝে ফাঁকা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এই ধানের চাল চিকন, ভাত খেতেও সুস্বাধু। সে কারণে এলাকাতে বেগুনি রঙের এই ধান চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর এই ধান চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করছেন। মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান আলী বলেন, গত বছরে গ্রামের একজন শিক্ষক ওই নতুন জাতের ধান চাষ করেন। তার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে এ বছর আরও দুই কৃষক বেগুনি ধানের চাষ করেছেন। হাইব্রিড জাত হলেও মূলত বেগুনি ধান বলে পরিচিত। হাইব্রিড অন্য জাতের ধানের চেয়ে বেগুনি রঙের ধানের ফলন কম, সে কারণে কৃষককে এই ধান চাষে সেভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে না। তবে ভিন্ন রঙের হওয়ায় অনেকে শখের বশে এই ধান চাষ করেছেন।