বিস্ফোরক রেখে চট্টগ্রাম বন্দরে ঝুঁকি এড়ানোর চেষ্টা!

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক মজুদ রয়েছে । যা যে কোন সময় ঘটাতে পারে লেবাননের বৈরুত বিষ্ফোরণের মতো ঘটনা। আর এই ঝুঁকি এড়ানোর চেষ্টা চলছে বাইরে বিস্ফোরক ও দাহ্য পদার্থ খালাস বন্ধ রেখে। বলা হচ্ছে-বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক এই চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক। তিনি বলেন, লেবাননের বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের মতো ঘটনা এড়াতে উচ্চমাত্রার দাহ্য ও বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ খালাস না করার জন্য চিঠি দিয়েছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর।
পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে দেশের সব সমুদ্র, বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে অননুমোদিত স্থানে বিস্ফোরক, প্রথম শ্রেণির পেট্রোলিয়াম, প্রজ্জ্বলনীয় ও রাসায়নিক পদার্থ মজুদ না করার চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, বিস্ফোরক খালাসের পর সরাসরি মজুদে চলে যাবে। কোনোভাবেই বন্দরের ভেতরে কিংবা অননুমোদিত স্থানে খালাস করা যাবে না। বিস্ফোরক আমদানির প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই যেন এর অপব্যবহার না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এটি একটি সতর্কতামুলক পদক্ষেপ।
পরিদপ্তরের চিঠিতে যেসব পদার্থের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে ইমালশান সিসমিক, পাওয়ারজেল সিসিমিক, সিসিমিক ডেটোনেটর, চার্জেস ডেটোনেটর, ইলেকট্রিক ডেটোনেটর ও টিএনটি এবং অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, সোডিয়াম নাইট্রেট, সালফার, পটাশিয়াম ক্লোরেট এবং ফসফরাসসহ ২১ ধরনের প্রথম শ্রেণির পেট্রোলিয়াম ও প্রজ্বলনীয় পদার্থ। এই চিঠি পাওয়ার পরই মূলত নড়েচড়ে বসে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, বৈরুত বিস্ফোরণের পর বিস্ফোরক পরিদপ্তরের চিঠি পেয়ে এখন বন্দরের অভ্যন্তরে বিস্ফোরক ও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ মজুদ থাকা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। মূলত এই শঙ্কা থেকেই চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে উচ্চমাত্রার দাহ্য ও বিস্ফোরণ জাতীয় পদার্থ খালাস না করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, উচ্চমাত্রার দাহ্য ও বিস্ফোরক বহনকারী কনটেইনার জেটিতে খালাসের পর সরাসরি চলে যাবে বাইরে। সেখানে আমদানিকারকের নির্ধারিত স্থানে খালাস হবে। বন্দরের বিদ্যমান আইন ও বিস্ফোরক আইন, পরিবেশ আইন দেখব আমরা। তারপর এই সিদ্ধান্তটা চূড়ান্তভাবে নেব। আর এই পদক্ষেপকে হাস্যকর মনে করছে বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও একাধিক কর্মকর্তা।
ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের মতে, বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালের ৩নং শেডে মজুদ রয়েছে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ। যা যেকোন সময় লেবাননের বৈরুতের মতো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। গত ১৫ই জুলাই এই শেডে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সৃষ্টি হয়। যা চট্টগ্রাম শহরের তিন কিলোমিটার দুরত্বেও দৃষ্টিগোচর হয়। আর এই অগ্নিকান্ড সৃষ্টির কারণ কি তাও এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি বন্দরের গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি। প্রাথমিকভাবে মজুদ রাসায়নিক থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু তদন্ত কমিটি এর কোনো সত্যতা পায়নি। সংস্কার কাজের সময় আগুনের স্ফূলিঙ্গ থেকেই এর সূত্রপাত হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালন কর্মকর্তা মো. জাফর আলম। তিনি জানান, গত ৬ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প ও শিল্পকারখানার জন্য প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া নাইট্রেটসহ বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক আমদানি করা হয়েছে। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের বিধিমালার আওতায় এসব রাসায়নিক আমদানি করা হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, পটাসিয়াম ক্লোরেট, রেড ফসফরাস, সালফার, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, পটাসিয়াম নাইট্রেট, সোডিয়াম নাইট্রেট ও নাইট্রো সেলুলোজ। জাফর আলম জানান, বিস্ফোরক তৈরির উপাদান অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আলাদা বিধিমালার আওতায় আমদানি হয়। অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ফুয়েল বিস্ফোরক তৈরিতে এবং মেডিকেলে নাইট্রাস অক্সাইড উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড এবং বেসরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠানের এই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আমদানির লাইসেন্স রয়েছে। আর এসব দাহ্য ও বিস্ফোরক দ্রব্য রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ৩নং শেডে। তবে কী পরিমাণ উচ্চমাত্রার দাহ্য ও বিস্ফোরক আছে সেটা জানাতে পারেননি, বলছেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবুও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের চিঠি পেয়ে বন্দরের অভ্যন্তরে আর কোনো কনটেইনার থেকে দাহ্য পদার্থ ও বিস্ফোরক খালাস করার না চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান জাফর আলম।