সরকারের অনুদান প্যাকেজ চলছে যেভাবে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্থবিরতা মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত বিভিন্ন সহায়তার প্যাকেজ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে অনেক আগেই। কিছু কিছু ব্যক্তি-পর্যায়ের প্যাকেজ সহায়তা বিতরণ কর্মসূচি শেষ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। কিছু এখনও চলমান। তবে ব্যবসায়িক সহায়তা প্যাকেজ পুরোটাই বাংলাদেশ ব্যাংক বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে এ প্যাকেজ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় গতিও এসেছে। ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি খাতের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ক্ষতি কাটাতে ৭২ হাজার কোটি টাকারও বেশি আর্থিক প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনৈতিক খাত যে ক্ষতির শিকার হয়েছে তা কাটাতেই সরকার এই প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে, উৎসাহ জোগাতে, ক্ষতি কাটাতে সহায়তা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে যে আর্থিক প্যাকেজ বা বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে সেটিই আর্থিক প্রণোদনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসের আর্থিক ক্ষতি কাটাতে এই ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, সরকার ঘোষিত খাতভিত্তিক প্রণোদনার মধ্যে শিল্প ঋণের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা, রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ বাবদ পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এর পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষ ও কৃষকের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা, রফতানি উন্নয়ন ফান্ড ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, প্রি-শিপমেন্ট ঋণ বাবদ পাঁচ হাজার কোটি টাকা, গরিব মানুষের নগদ সহায়তায় ৭৬১ কোটি টাকা, অতিরিক্ত ৫০ লাখ পরিবারকে দশ টাকা কেজিতে চাল দেওয়ার জন্য ৮৭৫ কোটি টাকার বাইরেও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই প্রণোদনার সুবিধাভোগী হবেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, শিল্প-কারখানার মালিক ও কৃষক। তবে করোনার কারণে ক্ষতি কাটাতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার বেশিরভাগ সুবিধাভোগী হবেন ব্যবসায়ীরা। ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করেই সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলা সংক্রান্ত ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ শীর্ষক একটি বড় প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৮৫০ কোটি টাকার এই সহজ শর্তের ঋণ বাস্তবায়ন হলেও ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির বাকি টাকা সরকারি কোষাগার থেকেই জোগান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) আওতায় এবার এই প্রকল্পের জন্য ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাত থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পেতে পরিকল্পনা কমিশন দুটি শর্ত বেঁধে দিয়েছে। শর্ত দুটি হচ্ছে প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ অনুমোদিত বিনিয়োগ প্রকল্পের অনুমোদিত অঙ্গসংস্থান অনুযায়ী ব্যয় করতে হবে এবং টাকা খরচের ক্ষেত্রে সব ধরনের আর্থিক বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। জানা গেছে, করোনাকালে রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য স্বল্প সুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়ার ফলে মন্দার সময়ে শিল্প কারখানার মালিকরা অতিরিক্ত চাপ ছাড়াই তাদের কর্মী-শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ঋণ সহায়তা বাবদ এটি তাদের দেওয়া হচ্ছে। এটি পুরোপুরি অনুদান নয়। এছাড়াও মাঝারি-ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য যে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে সেটা দিয়ে আর্থিক ক্ষতি সামাল দিতে পারবেন এই ব্যবসায়ীরা। তারা মন্দা কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে পারবেন। এভাবে কৃষক, রফতানিকারকরা একইরকম সুবিধা পাচ্ছেন।
অপরদিকে করোনাকালে রোজার ঈদে দেশের প্রতিটি মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনকে ‘ঈদ উপহার’ হিসেবে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে দেওয়া হয়েছে প্রতিটি মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে। করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া দেশের নিম্ন আয়ের ৫০ লাখ পরিবারের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। পরিবারপ্রতি দেওয়া হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। এ খাতে সরকারের মোট ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। সারা দেশের নন-এমপিও কারিগরি, মাদ্রাসা ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫১ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষককে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা এবং ১০ হাজার ২০৪ জন কর্মচারীকে জনপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে সর্বমোট ২৮ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আর্থিক অনুদান হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। করোনাকালীন সংকটের জন্য প্রধানমন্ত্রী ১৩ হাজার ৯২৯টি কওমি মাদ্রাসার এতিম দুস্থদের জন্য ১৬ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীন নন-এমপিও ৮০ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষক এবং ২৫ হাজার ৩৮ জন কর্মচারীর অনুকূলে ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। সরকারের এসব অনুদান সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। দেশের ৬ হাজার ৯৫৯টি কওমি মাদ্রাসাকে ৮ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের সচিব আবদুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজের অর্থ ছাড় চলছে। ধাপে ধাপে এ অর্থ ছাড় করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্বিক সহযোগিতা করছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম জানিয়েছেন, করোনার কারণে স্থবির হয়ে যাওয়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা একযোগে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ঋণ সহায়তার প্যাকেজ কর্মসূচিটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। এই প্যাকেজের ফলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হয়েছেন।