যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩ কিশোর খুন # আহতদের অভিযোগ আনসারদের প্রতি # মুখ খোলেননি কেউ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের পুলেরহাটস্থ শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) গতকাল বৃহস্পতিবার ৩ বন্দি নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয় আরও ১০ বন্দি। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এ ঘটনাকে শিশু-কিশোরদের দুই পক্ষের আধিপত্যের দ্বন্দ্ব বলে জানিয়েছে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত বন্দিরা দাবি করেছে, সংঘর্ষের পর আনসার সদস্যদের পিটুনিতেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে দুপুরে সংঘটিত সংঘর্ষের হতাহতদের রাতে হাসপাতালে আনা নিয়ে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।
নিহত বন্দিরা হচ্ছে-খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮) (বন্দি নম্বর-১১৮৫৩), বগুড়ার শেরপুর থানার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) (বন্দি নম্বর-৭৫২৪) ও বগুড়ার শিবগঞ্জ থানার তালিপপুর পূর্বপাড়ার নান্নু পরামানিকের ছেলে নাঈম হাসান (১৭) (বন্দি নম্বর-১১৯০৭)। এদের মধ্যে নাঈম হাসানকে সন্ধ্যা ৬টা ৩৮ মিনিটে, পারভেজ হাসান রাব্বিকে রাত সাড়ে ৭টা ও রাসেল ওরফে সুজনকে রাত ৮টায় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক অমিয় তাদের মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক অমিয় দাস এ প্রতিনিধিকে জানান, প্রত্যেককে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিলো। তবে প্রতিবারই হাসপাতালে লাশ রেখে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের লোকজন গাড়িসহ হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ দাবি করেন, কুরবানির ঈদের পর গত ৩ আগস্ট বন্দি রবিউল ও পাভেলের মধ্যে মারামারি হয়। এ সময় এই দুজনসহ তাদের গ্রুপের বন্দিদের যার যার ইউনিটে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো। এরই জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই গ্রুপের মধ্যে ফের মারামারি হয়। বিষয়টি দেখতে পেয়ে শিশু উন্নয়নের কর্মকর্তারা এ সময় বকাঝকা করে যার যার ইউনিটে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু পরে বিকেলে আবারও তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় কর্মকর্তাদের অনেকে কেন্দ্রে ছিলেন না। পরে তিনি জানতে পারেন, মারামারিতে ১০জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই তিনজনই মারা গেছে। আর আহত বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আনসার সদস্যরা পিটিয়ে হত্যা করেছেন একথা সত্য নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একটি সূত্র জানায়, বিকেলে দ্বিতীয় দফা মারামারির পর কেন্দ্রে কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা সংশ্লিষ্ট বন্দিদের ভবনের ছাদে নিয়ে মারপিট করেন। এ ঘটনায় ১০ জন আহত হলে বিষয়টি ধাপাচাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ৩ বন্দির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় অবস্থা বেগতিক দেখে তাদের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম পিপিএম জানান, পুলেরহাটস্থ শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) বন্দিদের দুটি গ্রুপ রয়েছে। এর একটি গ্রুপের নেতৃত্বে বন্দি পাভেল ও অপর গ্রুপের নেতৃত্বে বন্দি রবিউল। এই দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে মারামারি হয়। এ ঘটনায় ৩ বন্দি নিহত হয়। হাসপাতালে কর্তব্যরত কোতয়ালি থানা পুলিশের এসআই সেনেন্দার আবু জাফর জানান, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে যারা লাশ নিয়ে এসেছেন তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন যে, নিহতদের মধ্যে নাঈম হাসান ধর্ষণ ও পারভেজ হাসান রাব্বি হত্যা মামলার আসামি ছিলো। তবে অপর নিহত রাসেল ওরফে সুজন কী মামলায় আটক ছিলো তা জানতে পারেননি বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে নিহত তিনজনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে বলে প্রত্যদর্শীরা জানিয়েছেন। এদিকে আহতের মধ্যে জাভেদ (১৭) নামে এক বন্দিকে রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তার পিতার নাম ইকরামুল হক। এছাড়া রাতে আরমান, মোস্তফা কামাল হৃদয় ও লিমন খান নামে আহত আরও বন্দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটানোর চিহ্ন রয়েছে। আহতরা দাবি করে, শিক্ষকদের ইন্ধনে জুনিয়ররা ও আনসার সদস্যরা তাদের পিটিয়েছে। এদিকে রাত ১০টার দিকে পুলিশের হল্লা গাড়ি বলে পরিচিত বড় গাড়ি ও সাদা ও কালো কাচে দুইটি অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করে কেন্দ্রে। কেন প্রবেশ করে তা ওই মুহূর্তে জানা যায়নি। এদিকে ঘটনার পর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে যান যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান ও পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন। রাত পোনে ১১ টায় এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত তারা কেন্দ্রের ভিতরে ছিলেন। এবং এসময় পর্যন্ত শিশু কেন্দ্রের কেউ অথবা প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে চাননি।