ট্রাম্পের খড়্গের নিচে চীনের টিকটক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ আমি টিকটক ব্যবহার করি না। এটা কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের খুব প্রিয় একটি স্মার্টফোন অ্যাপ। ইউজাররা এ অ্যাপ ব্যবহার করে নাচ-গান করেন। মাঝ বয়সে এসে এ ধরনের অ্যাপের প্রতি আকর্ষণবোধ না করা অস্বাভাবিক নয়। যাই হোক, এই নির্দোষ অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
আদেশে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টিকটকের মার্কিন অংশ যদি কোনো মার্কিন কোম্পানি কিনে না নেয়, তবে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হবে। নির্বাহী আদেশে অবশ্য শুধু টিকটকের কথা বলা হয়নি, বলা হয়েছে চীনের আরেকটি বিখ্যাত অ্যাপ উইচ্যাটের কথাও। উইচ্যাটের জন্য একই কথা প্রযোজ্য। বলা বাহুল্য, এ দুটি চীনে তৈরি অথচ বিশ্বব্যাপী খুব জনপ্রিয় অ্যাপ।
টিকটক একটি ছোট ভিডিও-শেয়ারিং অ্যাপ। বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষ এ অ্যাপটি ব্যবহার করে। বাংলাদেশেও এটি জনপ্রিয়। যুক্তরাষ্ট্রে এ অ্যাপটির যাত্রা শুরু মাত্র বছর তিনেক আগে। ২০১৭ সালের আগস্টে টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটডান্স ১০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ছোট ভিডিও-শেয়ারিং অ্যাপ মিউজিক্যাল ডট এলওয়াই কিনে নেয়। এ অ্যাপের ভিত্তির ওপরই গড়ে ওঠে টিকটকের যুক্তরাষ্ট্র অংশটি। মাত্র তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১০ কোটিতে। প্রতি বছর দেশটিতে টিকটকের ব্যবহারকারী বাড়ার হার প্রায় চারশ শতাংশ। শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, চীনসহ গোটা বিশ্বেই টিকটক অসম্ভব জনপ্রিয় একটি অ্যাপ; বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে। এক হিসাব অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে টিকটক ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া স্মার্টফোন অ্যাপ। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত টিকটক বিশ্বব্যাপী ডাউনলোড হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি বার।
টিকটক নিষিদ্ধ করে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, জাতীয় নিরাপত্তার কথা। তিনি বলেন, টিকটক ব্যবহারকারীদের অবস্থান ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পেয়ে থাকে এবং এ তথ্য করপোরেট গোয়েন্দাগিরির কাজে লাগতে পারে; ব্যবহৃত হতে পারে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কাজে। অথচ একই কথা প্রযোজ্য মার্কিন সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমগুলোর জন্যও! প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, টিকটকের ভিডিওর মাধ্যমে নভেল করোনাভাইরাসের উৎস সম্পর্কে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ প্রচার করা হয়েছিল। এ ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ফেসবুক ও গুগলের ইউটিউবেও হরহামেশাই প্রচার হয়! এখন যদি একই যুক্তিতে এসব মার্কিন যোগাযোগমাধ্যমকে অন্য কোনো দেশ নিষিদ্ধ করে দেয়!! বিষয়টা নিয়ে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো চিন্তিত। ফেসবুকের মার্ক জুকারবার্গ পর্যন্ত এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, টিকটক নিষিদ্ধ হলে, তা খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
আসলে শুরুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি টিকটক নিষিদ্ধ করতেই চেয়েছিলেন। মাইক্রোসফটের টিকটকের মার্কিন অংশ কিনে নেওয়ার প্রস্তাব তিনি শুরুর দিকে নাকচ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরামর্শকরা তাকে এটা বোঝাতে সক্ষম হন যে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত তরুণ ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। কারণ রক্ষণশীল তরুণ ভোটারদের অনেকেই তার সমর্থক; একই সঙ্গে টিকটক ব্যবহারকারী। ট্রাম্প পরামর্শকদের কথা শুনলেন এবং মাইক্রোসফটের টিকটক ক্রয়ের বিষয়টিকে অনুমোদন দিলেন। কিন্তু পাশাপাশি তিনি এও জানিয়ে দিলেন যে, বিক্রয়ের অর্থের একটা অংশ মার্কিন ট্রেজারিতে জমা দিতে হবে! টিকটক বিক্রির একটা অংশ দাবি করে ট্রাম্প আরেকটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। এ নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। যে আইনের অধীনে তিনি অর্থ দাবি করেছেন, সে আইন প্রয়োগ করে এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের অর্থ নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
মাইক্রোসফটের সঙ্গে টিকটকের আলোচনা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ অসম আলোচনা থেকে মার্কিন কোম্পানিটি দারুণভাবে লাভবান হবে। টিকটকের যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অংশ কেনার আলোচনায় শেষ পর্যন্ত কী হয় সেটা দেখার বিষয়। ধারণা করা হচ্ছে, টিকটকের এ অংশটুকু মাইক্রোসফট কিনে নেবে ১০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলারে। অথচ টিকটকের হিসাবে এ অংশের বাজারমূল্য ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, দৃশ্যত টিকটকের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। হয়তো একে নিষিদ্ধ হতে হবে, নয়তো মাইক্রোসফটের কাছে বিক্রি হয়ে যেতে হবে। অথচ এ পরিস্থিতি এড়াতে অনেক আগে থেকেই টিকটক বিভিন্ন আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। যেমন- যুক্তরাষ্ট্রের ইউজারদের জন্য তারা যেসব সার্ভার ব্যবহার কর, সেগুলো সব যুক্তরাষ্ট্রেই স্থাপিত। টিকটক বার বার বলেছে যে, তারা একটি বৈশ্বিক কোম্পানি এবং রাজনীতির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইউজারদের ডেটা কখনও চীনা সরকারকে তারা সরবরাহ করেনি বা ভবিষ্যতেও করবে না। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। নিজের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প।