চৌগাছায় ভৈরব নদ খননের সুফল মিলছে, এবার কপোতাক্ষের দাবি

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোর চৌগাছার ওপর দিয়ে প্রবাহমান ভৈরব নদ খননের সুফল ভোগ করছেন নদ পাড়ের মানুষেরা। বর্ষা মৌসুম তাই নদের যত দূর চোখ যায় পানি থৈ থৈ করছে। এক সময়ের মরা খাল খননের পর এখন তার হারিয়ে যাওয়া যৌবন যেন কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছে। নদে দেখা মিলছে হরেক রকমের দেশি মাছ। ভৈরব নদের মত কপোতাক্ষ নদও খননের দাবি জানিয়েছেন সচেতনমহল। চৌগাছার হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর কপোতাক্ষ নদের ত্রিমোহনী হতে অর্থাৎ পানিগ্রাম রিসোর্ট সেন্টারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদ। যা হাকিমপুর ও পাতিবিলা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে চৌগাছা পৌরসভার পাঁচনামনা গ্রামের মাঝ দিয়ে পুনরায় কপোতাক্ষ নদে মিশেছে। অপর একটি শাখা বয়ে গেছে উপজেলার জগদীশপুর ও পাতিবিলা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে পাশর্^বর্তী ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার দিকে। এই ভৈরব নদ এক সময় অবৈধ দখল আর পলি জমার কারণে মরা খালে রুপ নেয়। বর্ষা কি খারা বছরের বার মাসই নদের বুকে চরেছে গরু ছাগল। দখলদাররা নদের বুকে তৈরি করেছিল বিশাল বিশাল পুকুর, আবার অনেকে নদকে বানিয়েছিল আবাদি জমি। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের শেষ দিকে সরকার ভৈরব নদকে অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধারের পর খনন করে। চৌগাছার তাহেরপুর থেকে উপজেলার মধ্যে প্রবাহমান নদের পুরো অংশ খনন করা হয়। নদ খননের পরপরই কখন ভারী কখনও মুষলধারে বৃষ্টির কারণে এখন নদে পানি জমে গোটা নদই পানিতে টুইটম্বুর। নদ খননের পর নদের পাড় নতুন মাটি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে। সেই মাটিতে স্থানীয়রা নানা ধরনের সবজির চাষ করেছেন। নদের পাড়ে সবুজের সমারোহ আর নদে থৈ থৈ পানি, এ যেন এক অন্যরকম পরিবেশ।
গতকাল চৌগাছা উপজেলার মুক্তদাহ, ভবানীপুর, ইছাপুর গ্রাম এলাকায় গিয়ে দেখা যায় স্থানীয়রা নদের পানিতে গোসল করছেন। শিশুরা নদের পানিতে সাঁতার কাটতে কাঁটতে চলে যাচ্ছে বহু দূরে। গৃহবধূরা নদের পানি কলস ভরে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। এক বছর আগেও এসব ছিল মানুষের কাছে স্বপ্ন। ভৈরব পাড়ের বাসিন্দাদের এখন আর পাট জাগ দিতে কোন পুকুর বা ডোবায় ছুটতে হয় না। নদে পাট জাগ দিয়ে তারা যেন হারানো সেই দিনে ফিরে গেছেন। নদ পাড়ের বাসিন্দা কবির হোসেন বাবলু জানান, ভৈরব নদে একসময় দেশী মাছের সমারোহ ছিল, সে সময়ে নদে দেখা যেত হরেক রকমের পাখপাখালি। নদ মরে যাওয়ার কারণে সেই দৃশ্য স্মৃতির পাতা থেকে হারিয়ে যায়। সম্প্রতি নদ খননের পর নদ যেন তার হারানো যৌবন ফিরে পেয়েছে। চৌগাছা উপজেলার নদের যে অংশটুকু পড়েছে সেখানে এখন পানি থৈ থৈ করছে। কৃষক নদে পাট জাগ দিয়ে স্বস্তি পেয়েছেন। পাট যেন সেই সোনালী রং ফিরে পেয়েছে। নদ পাড়ের মানুষ বলা চলে অন্তত দুই যুগ পর মাছ শিকার করতে পারছেন। নদের পানি নিয়ে অনেকেই গৃহস্থলির কাজও করছেন। যা সম্ভব হয়েছে নদটি খনন করার কারণে। এলাকার অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কিছু অসাধু ব্যক্তি নদে অবৈধভাবে পাটা দিয়ে মাছ শিকার করছেন। এই পাটা উচ্ছেদ করতে পারলে নদে দেশি মাছে ভরে যাবে এবং বছরের বার মাসই সাধারণ মানুষ মাছ শিকার করতে পারবে। যারা পাটা দিয়েছেন তারা ক্ষমতাধর বলে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। ভৈরব নদ খনন করার কারণে নদ পাড়ের মানুষ যে উপকৃত হয়েছেন তা গোটা উপজেলার মানুষ উপলদ্ধি করছেন। তাই এবারের খরা মৌসুমে চৌগাছার ওপর দিয়ে বয়ে চলা কপোতাক্ষ নদ অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করে খননের জোর দাবি জানিয়েছেন সচেতনমহল।