শ্যামনগর শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন কেনায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

0

শেখ আব্দুল হাকিম,শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা ॥ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন কেনায় ৩০ লাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শিার মান বাড়াতে ২০১৯ -২০ অর্থ বছরে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে স্লিপ খাতে বরাদ্দের টাকা হতে ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন কেনা অত্যাবশ্যক। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা অফিসার স্ব স্ব শিা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেবেন। সেখান থেকে প্রধান শিক্ষক, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতিসহ সংশিষ্টরা বাজার যাচাই করে হাজিরা মেশিন কিনে ভাউচার উপজেলা শিা অফিসে জমা দেবেন। কিন্তু শি অফিসারের দুর্নীতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। তিনি নিজের অ্যাকাউন্টে সমুদয় টাকা জমা রেখে নিজেই হাজিরা মেশিন কেনায় দুর্নীতি করায় শিা অফিসারের ওপর বিদ্যালয়ের শিকরা ুব্ধ হয়েছেন। তারা এর প্রতিকার চান।
শ্যামনগর শিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দণি ছোট কুপট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক সিরাজুল ইসলাম জানান, উপজেলায় ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১৫১টি স্কুলে স্লিপ খাতে বরাদ্দ ছিল ৫০ হাজার টাকা । বাকি ৪০টি স্কুল সিএফএস এর আওতাধীন ছিল। শিা অধিদপ্তরের নির্দেশ মোতাবেক ওই স্লিপের বরাদ্দ ৫০ হাজার টাকা স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু উপজেলা শিা অফিসার পরিপত্রের নির্দেশনা না মেনে সমুদয় টাকা নিজ অ্যাকাউন্টে জমা রাখেন যা বিধিবহির্ভূত। পশ্চিম শ্রীফলকাটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক হোসেন আলীসহ কয়েক জন শিক জানান, স্লিপের বরাদ্দ ৫০ হাজার টাকা থেকে শিা অফিসার তাদের সাথে আলোচনা ছাড়াই ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন কেনা বাবদ ২৫ হাজার টাকাসহ ভ্যাটের ২ হাজার ৫ শ টাকা কেটে নিয়ে স্ব স্ব বিদ্যালয় অ্যাকাউন্টে ২২ হাজার ৫শ টাকা জমা দেন। যা স্কুলের অ্যাকাউন্ট চেক করলে প্রমাণ মিলবে। শিকরা আরও বলেন, ‘জেডকেটিকো মডেল নং কে৫০এ’ নামীয় ডিজিটাল হাজিরা মেশিন নিম্নমানের। মেশিনটির বর্তমান বাজার মূল্য ৬ হাজার ৮ শ টাকা। অথচ উপজেলা শিা অফিসার কিছু শিকদের যোগসাজশে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনা থেকে প্রায় ৩০ লাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তারা আরও জানান, শিা অফিসার নিজের দুর্নীতি ঢাকতে সহকারী শিা অফিসার আজহারুল ইসলামকে দিয়ে মনগড়া প্রত্যায়ন তৈরি করে বদলির ভয় দেখিয়ে শিকদের সই করিয়ে নেন। সহকারী শিা অফিসার এখানে ্যান্ত হননি, তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিকদের স্ট্যাম্প করে দিতে চাপও সৃষ্টি করেন। হায়বাতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক মিজানুর রহমান জানান, উপজেলায় কয়েকটি বিদ্যালয় স্লিপের আওতাধীন নয়। আমরা সাতীরা জেলা শিা অফিস থেকে ৪৫ হাজার টাকার চেক নিয়ে নিজেরাই বাজার থেকে ৭ হাজার টাকা মূল্যে হাজিরা মেশিন কিনি। সহকারী শিা অফিসার আজহারুল ইসলামকে প্রত্যায়নের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্লিপের টাকা ও হাজিরা মেশিন বাবদ শিকদের কাছ থেকে কোন প্রত্যায়ন নেয়া হয়নি বা স্ট্যাম্পের কথাও বলেনি বলে জানান। উপজেলা শিা অফিসার আক্তারুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি স্লিপের বরাদ্দের টাকা নিজ অ্যাকাউন্টে রাখার বিষয় সত্যতা স্বীকার করে এ প্রতিবেদককে বলেন, হাজিরা মেশিন বাজার মূল্য ৬ হাজার ৮ শ টাকা ঠিকই। কিন্তু ‘জেডকেটিকো মডেল নং কে৫০এ’ মেশিনটি তিন বছরের সার্ভিস দেয়া শর্তে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এ বিষয় ঢাকা আগরগাঁ ‘জেডকেটিকো মডেল নং কে৫০এ’ পাইকারি বিক্রেতা স্টোর ম্যানেজার শওকাত হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে (০১৭০৯৯৯৫৪৬৭,০৯৬৭৮০০২০০৩)কথা হলে তিনি জানান, উল্লিখিত ডিজিটাল মেশিনের মূল্য ৬ হাজার ৮শ টাকা। তবে বেশি নিলে নির্ধারিত মূল্য থেকে বিশেষ ছাড় দেয়া হবে। মেশিনটির ওয়ারেন্টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, মেশিনের ওয়ারেন্টি এক বছর তো থাকছে প্রয়োজনে ওয়ারেন্টির সময় বাড়ানো যাবে বলে তিনি জানান। এদিকে শ্যামনগর উপজেলা ভৈরবনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক জানান, গত বছর বরাদ্দকৃত স্লিপের ৫০ হাজার টাকা থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন বাবদ উপজেলা শিা অফিসার আক্তারুজ্জামান ২৫ হাজার টাকা কর্তন করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনও পর্যন্ত বিদ্যালয়ে আমরা কোনপ্রকার ডিজিটাল হাজিরা মেশিন পাইনি। সাতীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার বলেন, ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিনের বাজার মূল্য ৬ হাজার ৮ শ টাকা। অথচ তিন বছরের ফ্রি সার্ভিসিংয়ের দোহাই দিয়ে শিা অফিসার বিদ্যালয়ে বরাদ্দের স্লিপের টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা কর্তন করেছেন। এটা অত্যান্ত দুঃখজনক। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।