চৌগাছায় কাঁচামরিচ ২শ আর পেঁপের কেজি অর্ধশত টাকা

0

স্টাফ রিপোর্টার, চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় মহামারি করোনা ভাইরাস ও বৃষ্টিকে পুঁজি করে সব ধরনের সবজি বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বর্তমানে কাঁচা মরিচের ঝাঁঝে ক্রেতা সাধারণ দিশেহারা। ১০ টাকার পেঁপে বিক্রি হচ্ছে অর্ধশত টাকা কেজি দরে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর মুদি ব্যবসায়ীরা যে ভাবে চোখ বন্ধ করে ৫ টাকার মোমবাতি ১৫ টাকায় বিক্রি করেছেন অনুরুপভাবে বৃষ্টির অজুহাতে সবজি ব্যবসায়ীরা একই কায়দায় ইচ্ছেমত দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। বাজার মনিটরিং জোরদার করে এসব পণ্য ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার জোর দাবি জানিয়েছেন সচেতনমহল। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও পরবর্তীতে বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির যোগান কম উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা যে যেমন খুশি দাম হাঁকিয়ে বিক্রি করছেন। বিশেষ করে কাঁচা মরিচের গায়ে যেন হাত ছোঁয়ানো যাচ্ছে না। ১শ গ্রাম কাঁচা মরিচ ২০ টাকা অর্থাৎ ১ কেজির দাম ২শ টাকা। ক্রেতা সাধারণ ও কৃষকরা বলছেন, মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে সবজির বাজার আজ অস্থিতশীল। কৃষক ১ কেজি কাঁচামরিচ ১২০ থেকে দেড়শ টাকায় বিক্রি করলেও হাত ঘুরে তা একজন ক্রেতার প্যাকেটে পৌছাচ্ছে ২শ টাকায়। এ অবস্থায় বাজার মনিটরিং এর কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন এলাকার খেটে খাওয়া মানুষসহ সচেতনমহল। গতকাল শুক্রবার চৌগাছার প্রধান কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্য হাটের তুলনায় এদিন বাজারে সবজির যোগান তুলনামূলক কম। তারপরও প্রতিটি আড়তের সামনে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে হরেক রকমের সবজি। পাইকারি ব্যবসায়ীসহ খুচরা ব্যবসায়ীরা তাদের পছন্দের ও প্রয়োজনীয় সবজি কিনে ফিরছেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে। এ সময় দেখা যায় পাইকারি ও খুচরা বাজরে প্রতিটি সবজির দামের রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য। খুচরা ব্যবসায়ীরা যে দামে সবজি কিনছেন তার চেয়ে অনেক বেশি দরে তা সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছেন।
খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এক মাস আগে ১০ টাকা কেজির পেঁপে বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ১ কেজি কাঁচকলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। অনুরুপভাবে একটি লাউ ৩০ টাকা, বরবটির কেজি ৪৫ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, শশা ৩৫ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, বেগুন ৬৫ টাকা, সারোকচু ৫৫ টাকা, ভেন্ডি ৩০ টাকা, আলু ৩৫ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ টাকা, রশুন ৮০ টাকা, আমড়া ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক আটি পুঁইশাক ১৫ আর লাল শাক ৮ টাকা। অথচ একই পণ্য কৃষক এই দরের অর্ধেক বা অর্ধেকের কিছু বেশি দরে বিক্রি করেছেন। আর কয়েক হাত ঘোরার পর সাধারণ ক্রেতাকে ডবল দামে কিনতে হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে কৃষকের সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই একটানা বৃষ্টিতে আবারও সবজি ক্ষেতের বেশ ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে বাজারে মালামালের যোগান খুবই কম, তাই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজার করতে আসা কিন্ডার স্কুলের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত ৫ মাস কোন বেতন নেই, প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ চরম কষ্টে দিন পার করছি। এর মধ্যে সবজি ও কাঁচা মরিচের যে দাম তাতে বেঁচে থাকায় যেন দুরূহ হয়ে উঠেছে। ভ্যানচালক জাকির হোসেন বলেন, আয় রোজগার নেই বললেই চলে, এরপর বাজারে সব জিনিসের যে দাম তাতে কি ভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকবো। ক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, কোন না কোন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা হু হু করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। আম্পানের একদিন পর ৫ টাকার মোমবাতি ১৫ টাকায় কিনতে হয়েছে। আজ বৃষ্টির অজুহাতে ৩০ টাকার কাঁচা মরিচ ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বাজার মনিটরিং করে প্রতিটি পণ্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার জোর দাবি জানান ভুক্তভোগীসহ এলাকার সচেতনমহল।