হিলি স্থলবন্দরে রাজস্ব ঘাটতি ৮২ কোটি টাকা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে রাজস্ব আহরণে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২ কোটি ৪ লাখ ৬ হাজার টাকা। এ সময় বন্দর থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ১৮৯ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার টাকা। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বন্দর দিয়ে আড়াই মাস আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব কমেছে বলে জানিয়েছে কাস্টমস।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা, এর বিপরীতে এ সময় আদায় হয় ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এভাবে আগস্টে ১৭ কোটি ৩১ লাখের বিপরীতে ৯ কোটি ৩১ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১১ কোটি ৯৪ লাখের বিপরীতে ১৪ কোটি ১৬ লাখ, অক্টোবরে ১৬ কোটি ২৩ লাখের বিপরীতে ১১ কোটি ৭৯ লাখ, নভেম্বরে ২৪ কোটি ৩৯ লাখের বিপরীতে ১৮ কোটি ২৬ লাখ, ডিসেম্বরে ৩৬ কোটি ৩৪ লাখের বিপরীতে ২৪ কোটি ৫১ লাখ, জানুয়ারিতে ২৪ কোটি ২১ লাখের বিপরীতে ২৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ২৭ কোটি ৭২ লাখের বিপরীতে ২১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, মার্চে ৩০ কোটি ২০ লাখের বিপরীতে ১৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা আদায় হয়।
অন্যদিকে মার্চের শেষের দিক থেকে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এ সময় বন্দরের রাজস্ব আহরণও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে এপ্রিলে ২৯ কোটি ৭২ লাখের বিপরীতে ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা আদায় হয়। আর মে মাসে ২৯ কোটি ৬০ লাখের বিপরীতে কোনো রাজস্ব আহরণ হয়নি। তবে জুনে ১৬ কোটি ৭৯ লাখের বিপরীতে ৩৫ কোটি ৩ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণ হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, হিলি স্থলবন্দর থেকে আগে লক্ষ্যমাত্রার বেশি রাজস্ব আহরণ সম্ভব হলেও বর্তমানে হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে আমরা ব্যবসায়ীরা মনে করি, আমাদের এখানে একটি বৈষম্য করা হয়। একই ধরনের পণ্য বেনাপোল বন্দর দিয়ে যে মূল্যে ও যে কোডে আমদানি ও শুল্কায়ন করা হয়, ওই একই পণ্য হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা হয় মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা জটিলতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে।
এছাড়া আগে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর পরিমাণে মোটরসাইকেলের পার্টস আমদানি হতো। যাকে ঘিরে হিলি স্থলবন্দরে অনেক পার্টসের দোকান গড়ে উঠেছে। পুরো উত্তরবঙ্গে এ স্থান থেকে এসব পার্টস সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে এসব পণ্য বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হচ্ছে। হিলিসহ এই এলাকার ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে পণ্য কিনে এনে ব্যবসা করছেন।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, রাজস্ব কম আহরণের পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ আড়াই মাস হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ ছিল। যার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এছাড়া হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কিছু বৈষম্য রয়েছে। এ কারণে অনেক পণ্য হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করার ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয় না। যদি বেনাপোলসহ অন্যান্য বন্দরের সঙ্গে এ বন্দরের বৈষম্য দূর করা হয় তাহলে রাজস্ব আহরণে কোনো ঘাটতি থাকবে না। বরং আরো বাড়তি হবে বলে মনে করছি।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার আব্দুল হান্নান বলেন, হিলি স্থলবন্দরে রাজস্ব ঘাটতির মূল কারণ হচ্ছে বৈশ্বিক করোনা মহামারী। গত ২৬ মার্চ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত দীর্ঘ আড়াই মাস হিলি স্থল শুল্কস্টেশন দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ ছিল। অথচ এই বন্ধের সময়টা ছিল হিলি স্থলবন্দরের রাজস্ব আহরণের পিক আওয়ার। এর মধ্যে ঈদ ছিল। এই ঈদ সামনে রেখে যে সময়টা বন্ধ ছিল, ওই সময় ন্যূনতম ৯০ থেকে ১০০ কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব হতো। কিন্তু বন্ধ থাকার কারণে ওই কাঙ্ক্ষিত রাজস্বটা পাইনি, যার কারণে বন্দরের রাজস্ব আয়ে ঘাটতি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, গত ৮ জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি শুরু হয়েছে। বন্দর দিয়ে মসলাজাতীয় পণ্যের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এ সময় থেকে অর্থবছরের বাকি দিনগুলোয় বন্দর থেকে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব হয়েছে। অথচ এ সময় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছর শুরু হয়েছে। আর আমদানির ধারাও অব্যাহত রয়েছে। আশা করা যায় কোরবানির ঈদ পর্যন্ত মসলাজাতীয় পণ্যের আমদানি অব্যাহত থাকবে।