করোনা টেস্ট নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নের মুখে পড়বে দেশ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাভাইরাসের টেস্ট নিয়ে প্রতারণা এবং টেস্টের মান নিয়ে উদ্বেগ থাকায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে বাংলাদেশে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, করোনাভাইরাস টেস্টের মান যদি উন্নত না হয় তাহলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বেকায়দায় পড়তে পারে। বেশ কয়েকটি েেত্র দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ রয়েছে। এছাড়া এমন ঘটনাও ঘটেছে দেশে কোভিড-১৯ টেস্টের ফল নেগেটিভ হলেও বিদেশে যাওয়ার পর সেই ফল পজিটিভ হয়েছে। এসব নানা ঘটনার কারণে দেশের করোনাভাইরাস টেস্টের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। সম্প্রতি কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে বিমান চলাচলের উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ যোগ হয়েছে ইতালি।
বাংলাদেশ বিমানের সেই ফাইটে ২২৫ জন যাত্রীর মধ্যে ২১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এ বিষয়টিকে ভাইরাল বোমা নিষ্ক্রিয় করার সাথে তুলনা করেছেন ইতালির স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা। এর আগে বাংলাদেশ থেকে জাপানে চার্টার্ড ফাইটের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে জাপানে যাওয়া একটি ফাইটে চারজন যাত্রী কোভিড১৯ পজিটিভ হয়েছিল। যদিও বাংলাদেশ থেকে জাপানে রওনা দেবার আগে তাদের কাছে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ ছিল। ঢাকা থেকে চীনের গুয়াংজু যাতায়াতকারী চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের ফাইট সাসপেন্ড করা হয়েছে জুন মাসের ২২ তারিখে। চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের একটি ফাইটে ঢাকা থেকে গুয়াংজু যাবার পর ১৭ জন যাত্রীর দেহে করোন াভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দণি কোরিয়া কয়েকটি দেশ থেকে আগত যাত্রীদের েেত্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। যেসব দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার বেশি হচ্ছে তাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দণি কোরিয়া। মে মাসের ২৭ তারিখ থেকে জুনের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দণি কোরিয়াতে ৬৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ২৩ জন বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে গিয়েছিল।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ভুক্ত দেশগুলো বিমান চলাচল খুলে দিলেও বাংলাদেশ এই তালিকায় নেই। অবশ্য রাশিয়া এবং আমেরিকাও এই তালিকায় নেই, তবে তা মূলত উচ্চ সংক্রমণের কারণে। সিঙ্গাপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক পীযুষ সরকার বলেন, টেস্টের মান রা করা বেশ জরুরি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একবার বিশ্বাস হারিয়ে গেলে সেটি ফিরে পাওয়া বেশ কঠিন। সিঙ্গাপুরে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সেবা দিতে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ সোসাইটি একটি মেডিকেল টিম গঠন করেছে। সে টিমের সদস্য ডা. পীযুষ সরকার। তিনি বলেন, এখানে দুটো বিষয় জড়িত আছে। একটি হচ্ছে, টেস্ট নিয়ে প্রতারণা। অর্থাৎ টেস্ট না করেই রিপোর্ট দেয়া পুরোপুরি প্রতারণা। আরেকটি হচ্ছে, টেস্টের মান রা করা। টেস্টের মান ভালো না হলে সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র জানা সম্ভব নয়। ফলে সংক্রমণ বাড়তেই থাকবে। চিকিৎসক পীযুষ সরকার বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর নানা দেশ বিদেশীদের আগমনের েেত্র এখন বেশ সতর্ক। টেস্টের েেত্র উচ্চমান বজায় রাখার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশকে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এর ব্যতিক্রম হলে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশকে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। “এটা অবধারিত যে সবাই আপনাকে ব্যান করে দেবে। কোন দেশ তো খাল কেটে কুমির আনবে না,” বলেন চিকিৎসক পীযুষ সরকার। টেস্টের েেত্র প্রতারণা এবং মান নিয়ে সংশয় আছে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. বে-নজির আহমেদ বলেন, পজিটিভ ব্যক্তিকে যদি নেগেটিভ দেখানো হয়, তাহলে সংক্রমণের বিস্তার রোধ করা রীতিমতো অসম্ভব হয়ে উঠবে। বাংলাদেশে টেস্ট নিয়ে যদি প্রতারণা হয় এবং টেস্টের মান বৃদ্ধি না করা হয়, তাহলে কি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের জন্য দরজা বন্ধ হয়ে যাবার আশংকা তৈরি হবে? এমন প্রশ্নে বে-নজির আহমেদ বলেন, “অবশ্যই আশংকা তৈরি হচ্ছে। ইতালি খুব স্ট্রং একটা কমেন্ট করেছে। মনে হচ্ছে, বিমানটা করোনার বোমা নিয়ে এসেছে। এ রকম একটা কমেন্ট। এটা তো ইন্টারন্যাশনালি প্রচার হবে। ” “আপনি জানেন, বাংলাদেশে যত অ্যাম্বেসি আছে, যতো বিদেশি নাগরিক ছিলেন, তারা কিন্তু ধীরে-ধীরে সবাই চলে গিয়েছেন। এটা হলো আগে থেকেই কিছুটা আস্থার সংকট ছিল।” বে-নজির আহমেদ বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিদেশ থেকে যাদের বাংলাদেশে আসা দরকার, তাদের অনেকেই আসার জন্য ভরসা পাবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে দেখাতে হবে যে স্বাস্থ্যখাতে এখানে বড় ধরণের সংস্কার হয়েছে। “কোন দেশে কী ঘটে সেটা কারো কাছে অজানা নয়,” বলেন বে-নজির আহমেদ। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, টেস্ট নিয়ে প্রতারণা বন্ধ এবং টেস্টের মান নিশ্চিত করার জন্য তারা বদ্ধপরিকর। টেস্ট নিয়ে প্রতারণা বন্ধ করার জন্যই উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল এবং জিকেজি নামের আরো একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, কোন একজন ব্যক্তি বিদেশে যাবার তিন-চারদিন আগে যদি টেস্ট করান তাহলে বিদেশে পৌঁছানো পর্যন্ত তিনি সংক্রমিত হতে পারেন। কারণ একজন ব্যক্তি যে কোন সময় সংক্রমিত হতে পারেন। এমনকি বিদেশে যাবার সময় বিমানে সংক্রমণ হতে পারে বলে বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করছেন। সেেেত্র টেস্টের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা যুক্তিযুক্ত হবে না বলে তারা মনে করেন। বিবিসি