যশোর থেকে হাতিয়ে নেয়া ১৩ লাখ টাকার প্রতারক চক্র দুই জেলা থেকে আটক

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ডলার প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে আটক করেছে যশোরের পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত উপকরণ উদ্ধার করা হয়। যশোরে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যসহ দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ওই চক্রটি অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে সোয়া ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সোমবার আটক প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে আদলতে সোপর্দ করা হয়। এর মধ্যে দু জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
ডিবি পুলিশ জানায়, ফরিদপুর ও গোপলগঞ্জের ভয়ঙ্কর একটি প্রতারক চক্র দেশের বিভিন্ন স্থানে তৎপর রয়েছে। এরা মূলত লোকজনকে ‘কুড়িয়ে পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রা’ কমদামে বিক্রির নামে কৌশলে সাদা কাগজের বান্ডিল গছিয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এভাবে তারা লোকজনের সাথে প্রতারণা করছে। এই চক্রের সদস্যদের আবার একেক জনের একেক ধরনের কাজ। প্রথমত যিনি ‘পার্টি’ সংগ্রহ করবেন তার সাংকেতিক নাম ঠ্যাস। এভাবে পর্যাক্রমে চক্রের সদস্যদের কাজের প্রকার ভেদে সাংকেতিক নাম ফেরিওয়ালা, দোস, বলদ ও মহাজন। সূত্র জানায়, এই প্রতারক চক্রের একজন ঠ্যাস সদস্য ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চৌধুরীকান্দা সদরদী গ্রামের জমির শেখের ছেলে কামাল শেখ (৪৫)। সে ফেরি করে মশারি বিক্রেতার পরিচয়ে যশোর সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের মৃত দলিল উদ্দিন শেখের ছেলে সাবেক সেনাসদস্য আবুল বাশারের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। আবুল বাশারের এলাকায় মুদি দোকান রয়েছে। একপর্যায়ে তাকে গোপনে একটি ডলার দিয়ে ভাঙ্গিয়ে দিতে বলে প্রতারক কামাল শেখ। তাকে এ সময় এ কথা বলা হয় যে, ‘তার পরিচিত একজন স্ইুপার অনেক ডলার কুড়িয়ে পেয়েছে। পুলিশের ভয়ে কাউকে এ কথা বলতে পারছে না। তিনি (আবুল বাশার) যদি ভাঙ্গিয়ে দিতে পারেন তাহলে সমান ভাগ পাবেন’। কামাল শেখের কাছ থেকে এ কথা শুনে তার দেয়া একটি ডলার ভাঙ্গাতে যান আবুল বাশার। তিনি এ সময় এটি আসল ডলার ভেবে লোভে পড়ে যান। এরপর প্রতারক চক্রের আরও কয়েকজন তাকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে, তাদের কাছে কুড়িয়ে পাওয়া অনেক ডলার রয়েছে। তাদের যদি ১০ লাখ টাকা দেয়া হয় তাহলে তারা বেশ কয়েক শ ডলার তাকে দেবে। ওই ডলার ভাঙ্গালে ২৪ লাখ টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু তারা অত্যন্ত গরীব লোক হওয়ায় ‘কুড়িয়ে পাওয়া’ ভয়ে ডলার ভাঙ্গাতে পারছে না। ফলে পাতা ফাঁদে পা দিয়ে গত ২৩ জুন দুপুরে আবুল বাশার তাদের ১০ লাখ টাকা দেন। তিনি পোস্ট অফিস থেকে ওই টাকা উত্তোলন করে শহরের জেস টাওয়ারের সামনে প্রতারক চক্রের হাতে তুলে দেন। এ সময় প্রতারক চক্রের সদস্যরা দু পাশে দুটি করে ডলার দিয়ে বাঁধা সাদা কাগজের ১৩ টি বান্ডিলের একটি ব্যাগ তার হাতে গছিয়ে দিয়ে সটকে পড়ে। ওই কাগজের বান্ডিলের ভেতর আবার সাবান ছিলো। পরে বাড়ি গিয়ে বান্ডিল খুলে আবুল বাশার দেখতে পান ভেতরে সাদা কাগজ ও সাবান রয়েছে। ফলে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। তিনি এ সময় বুঝতে পারেন প্রতারক চক্রের কবলে পড়েছেন। এরপর তিনি কোতয়ালি থানা ও ডিবি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন।
ডিবি পুলিশের ওসি মারুফ আহম্মদ জানান, আবুল বাশারের অভিযোগটি গত রবিবার কোতয়ালি থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। এরপর ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর সোমেন দাস, এস আই মফিজুল ইসলাম, এস আই অরুণ কুমার দাস ও সদর ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তুষার কুমার মন্ডল ডলার প্রতারক চক্রের সদস্যদের ধরতে অভিযানে নামেন। তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে তারা গত রবিবার গভীর রাতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চৌধুরীকান্দা সদরদী গ্রামে অভিযান চালিয়ে প্রথমে কামাল শেখকে আটক করেন। এরপর তার স্বীকারোক্তিতে প্রতারক চক্রের সদস্য একই গ্রামের জলিল মাতুব্বরের ছেলে সেন্টু মাতুব্বরকে আটক করেন। চক্রে তার সাংকেতিক নাম দোস। এরপর পুলিশ গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর উপজেলার লোহাইর গ্রামে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের আরেক সদস্য যিনি মহাজন হিসেবে পরিচিত তাকে আটক করেন। আটক এই প্রতারকের নাম ফরিদ শেখ (৫২)। তিনি ওই গ্রামের মৃত নুরুদ্দিন শেখের ছেলে। এস আই মফিজুল ইসলাম জানান, আটক ফরিদ শেখের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা এবং কামাল শেখ ও সেন্টু মাতুব্বরের কাছ থেকে ২০ হাজার ৫ শ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া তাদের কাছ পেপারযুক্ত ৪ টি ডলার, ২শ দিনার, গামছা দিয়ে পেঁচানো পেপার ও ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও জানান, আটক ৩ জনকে সোমবার যশোর আদালতে সোপর্দ করা হয়। এর মধ্যে কামাল শেখ ও সেন্টু মাতুব্বর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আকরাম হোসেন তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। ডিবি পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, একই চক্রের আরও কয়েকজন সদস্য ভেকুটিয়া গ্রামের আরেক ব্যক্তির কাছ থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করেননি।