সুন্দরবন অঞ্চলের আত্মসর্পণকৃত বনদস্যুদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে নানা প্রতিবন্ধকতা

0

মনিরুল হায়দার ইকবাল, মোংলা॥ দীর্ঘ সময় সুন্দরবনে দস্যুতার সাথে জড়িত সুন্দরবন অঞ্চলের মোংলা ও রামপালসহ আশপাশ এলাকার বেশ কয়েকজন সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। দস্যুতা ছেড়ে অস্ত্র-গুলি সরকারের কাছে জমা দিয়ে আলোর পথে এসেছেন তারা। কিন্তু আলোর পথে ফিরে আসা এসকল মানুষ গুলো বাস্তব জীবনে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মূখিন হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩১মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও র‌্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)’র তৎকালীন প্রধান বেনজীর আহমেদ’র হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন ‘মাষ্টার বাহিনী’। ওই বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন রামপালের সোহাগ আকঁন। সাবেক এ বনদস্যু স্বাভাবিক জীবন যাপনে অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে পার করছেন। সৎ উপায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গিয়ে তাকে হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিপক্ষরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তার সাবেক পরিচয় সামনে এনে সুবিধা নেয়ার চেষ্টাও করে থাকেন।
আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সোহাগ আকঁন জানান, দস্যু জীবনে থাকা অবস্থায় নানা অজুহাতে তার অর্থ কড়ি লুটে খেয়েছে এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল। আর দস্যুতা ছাড়ার পর তিনি বৈধ উপায়ে মোংলার শেষ প্রান্ত রামপালের পেড়িখালী ইউনিয়নের বড় কাটালির পূর্ব বিল এলাকায় মৎস্য ঘের করে জীবিকা নির্বাহের জন্য পুঁজি বিনোয়োগ করেন। এতে এলাকার প্রভাবশালী ওই চক্রটি জুলুম বানিজ্যে ও স্বার্থ হাসিলে ব্যঘাত ঘটায় তাকে ব্যবসা পরিচালনা করতে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে। তিনি বলেন, সমবায় ভিত্তিক প্রায় আড়াই শ’ বিঘার জমি নিয়ে নানা অজুহাতে বিরোধ তৈরী করে প্রতিপক্ষরা নিজেদের দখলে নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে দ’পক্ষের মধ্যে চলছে টান টান চরম উত্তেজনা।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, সাবেক সাংসদ ও বর্তমান খুলনার সিটি মেয়র তালুকদার আঃ খালেক বিরোধপূর্ণ এ জমির মালিকানার বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে ব্যবস্থা নিতে রামপাল থানাকে নির্দেশ দেন। কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রতিপক্ষরা সোহাগ আকঁনদের সমবায় ঘেরের অংশের জমি জোর করে দখলে রেখেছে। এ ছাড়া এ ঘটনাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে সোহাগসহ জমির মালিকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার ও মিথ্যা মামলা আর অভিযোগ দিয়ে হয়রানী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। স্থানীয় ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগের পেড়িখালী ইউপি সভাপতি হাওলাদার মোঃ দেলোয়ার হোসেন এসব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পরও প্রভাবশালী কুচক্রী মহল সোহাগ আকন ও নিরীহ জমির মালিকদের নানাভাবে হয়রানী করছে। এলাকাবাসী জানান, সুন্দরবনে দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পর সোহাগ আকঁন সমাজ সেবায় জড়িয়ে পড়েছেন। কর্মহীন,দিন মজুর সহ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তার এ ভাল মানুষিকতার কর্মকান্ডকে প্রভাবশালী মহল ভাল চোখে দেখতে পারছেন না।
বিবাদমান চিংড়ি ঘের প্রসঙ্গে রামপাল থানার ওসি মোঃ দেলোয়ার হোসেন খান জানান, ঘেরের বিরোধ মিমাংসার জন্য ২/১ দিনের মধ্যে দু’পক্ষকে নিয়েই তিনি বৈঠকে বসবেন। এদিকে শুধু সোহাগ আকঁন নয়, আত্মসমর্পণ করা ‘দাদা ভাই বাহিনীর’ সদস্য মোংলা উপজেলার বাসিন্দা মোঃ পলাশ, রামপালের বাসিন্দা মোঃ রেজা, ‘বড়ভাই বাহিনীর’ রফিক শেখ, রিপন শেখ, অলিয়ার রহমান, মাওলা ফকির, ‘শান্ত বাহিনীর’ খোরশেদ শেখ, ‘মাষ্টার বাহিনীর’সুলতান হোসেন একই ধরনের অভিযোগ করেন। তারা বলেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার প্রাণপন চেষ্টা চালালেও সমাজের এক শ্রেণীর লোক তাদের ভাল চোখে দেখছেন না। প্রভাবশালী এসব লোক তাদের স্বার্থে আঘাত আসায় আত্মসমর্পণ করাদের পদে পদে হেনস্তা করছে। এবিষয়ে র‌্যাব-৬’র অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল রওসোনুল ফিরোজ বলেন, আত্মসমর্পণকৃত সাবেক বনদস্যুদের ও তাদের পরিবারের খোজ খবর র‌্যাব-৬’র পক্ষ থেকে নিয়মিত রাখা হয়। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও তাদেরকে র‌্যাবের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রীসহ ত্রান বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া সামাজিকভাবে তারা যাতে হয়রানীর শিকার না হয়, এবিষয়ে নজরদারি রয়েছে। এসকল অভিযোগের বিষয়ে খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দেন তিনি।