১২২ জন কারারক্ষী আক্রান্ত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ প্রাণঘাতী করোনার থাবায় ১২২ জন কারারক্ষী আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে অর্ধেকই সুস্থ হয়েছেন। কেউ আছেন আইসোলেশনে। করোনাভাইরাস বাংলাদেশে প্রবেশের পর সারা দেশের কারাগারগুলোতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়। দেশের একটি কারাগার সাময়িক লকডাউন করা হয়। এছাড়াত্ত নতুন হাজতিদের অন্য ওয়ার্ডে রাখার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেও করোনাভাইরাসে কারাগারের কারারক্ষী ও কয়েদি এবং হাজতি আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত দুইজন হাজতি এবং একজন কয়েদিসহ মোট ৩ জন করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালেই তারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। কারাগারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে যাতে না পড়ে এজন্য দর্শনার্থীদের সাক্ষাৎ বন্ধ রেখেছেন কারা কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হত্তয়া পর্যন্ত দর্শনার্থী সাক্ষাৎ বন্ধ থাকবে। যেসব হাজতি ও কয়েদি জ্বর বা করোনাভাইরাসের অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তাকে তাৎক্ষণিক আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা ত্ত আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে। এছাড়াও কারারক্ষীরা যাতে কারাগারে নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারে এজন্য কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য পিপিই’র ব্যবস্থা করেছেন। সরবরাহ করা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাস্ক। কারা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা কামাল পাশা গতকাল জানান, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস যাতে কারাগারে না ছড়িয়ে পড়ে সেইদিক বিবেচনা করে আমরা শুরু থেকে সতর্ক ছিলাম। কারাগারের মাত্র ৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা আবার কারাগারের ভেতরে ছিলেন না। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি আরও জানান, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ১২২ জন কারারক্ষী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকেই সুস্থ হয়ে কাজ যোগ দিয়েছেন। কেউ আইসোলেশনে আছেন। কারাগারে দর্শনার্থী সাক্ষাৎ বন্ধ রয়েছে। কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে যাতে করোনা ভাইরাস না ছড়িয়ে পড়ে শুরু থেকে সতর্ক ছিল কারা কর্তৃপক্ষ। কারণ কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ বন্দি রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সূত্র জানায়, কারাগারে প্রথম করোনা থাবা পড়ে এক কারারক্ষীর ত্তপর। এপ্রিলে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কারারক্ষী প্রথম করোনায় আক্রান্ত হন। ত্তই কারারক্ষী পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারের পাশে টিনশেডের কারারক্ষীদের জন্য নির্ধারিত বাসভবনে থাকতেন। তখন থেকেই আস্তে আস্তে অন্যান্য কারারক্ষীদের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আরেকজন বন্দি ও নয়জন কারারক্ষীর শরীরে সংক্রমণ ছড়ায়। এরপর পঞ্চগড় ও রংপুর কারাগারে একজন করে বন্দি করোনায় আক্রান্ত হন। দেশের কারাগারগুলোতে বন্দি ও কারারক্ষী মিলে ২৭৯ জন কোয়ারেন্টিনে ছিলেন বলে জানা গেছে।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বন্দিদের সঙ্গে তাদের স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ থাকবে। সাধারণত প্রতি সপ্তাহে একজন বন্দি পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। কিন্তু করোনা আসার পর থেকে বন্দিদের সাক্ষাৎ বন্ধ আছে। কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ১২২ জনের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ২৩ জন কারারক্ষী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। আক্রান্ত বেশ কয়েকজন আইসোলেশনে ছিলেন। এই ২৩ জন কারারক্ষী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা হাসপাতাল, সোহ্‌রাওয়ার্দী হাসপাতাল ও মিডফোর্ড হাসপাতালে বন্দিদের পাহারা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসকদের নির্দেশনা মোতাবেক সব নিয়মকানুন মেনে তারা আবার কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। এই ২৩ জন কারারক্ষী করোনাকে জয় করেছেন। কর্তৃপক্ষ তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
সূত্র জানায়, দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই প্রতিদিন কারাগারে জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। সবকিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারাগারে সবকিছু করা হচ্ছে। বর্তমানে ভার্চ্যুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বন্দিদের জামিন হচ্ছে। নতুন যারা বন্দি কারাগারে আসছেন তাদের একটি সেলে ১৪ দিন রাখা আইসোলেশন কার্যকর করা হচ্ছে। বন্দিরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বজনদের সঙ্গে নিয়ম অনুযায়ী কথা বলছেন। কারাগার সূত্রে জানা গেছে, করোনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশের কারাগারগুলোতে অল্প দোষে দোষী যেসব হাজতি ও কয়েদি ছিল তাদের মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে একটি প্রস্তাবনা কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। কিন্তু স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো গ্রীন সিগন্যাল না পাওয়ার কারণে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। সেটি আদৌ হবে কি-না তা নিয়ে সন্দিহান রয়েছে কারা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পরিস্থিতি দেখে তারা আরো অন্যান্য যে সব সিদ্ধান্ত আছে সেগুলো বাস্তবায়ন করবেন।