যশোরে ব্যাংকার পুলিশ আনসার ছাত্রী ও গৃহিনীর শরীরে করোনা : একদিনে আরও ২৩ জন সহ মোট আক্রান্ত ৩৬৫

0

বিএম আসাদ ॥ যশোরে থামছে না করোনাভাইরাসের বিস্তার। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন। গতকাল কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে আরও ২৩ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছে ৩শ’ ৬৫ জন। আক্রান্তদের ভেতর পুলিশ অফিসার, আনসার সদস্য, পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা, ব্যাংকার, কাজী, কারারক্ষী, স্বাস্থ্যকর্মী, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি, পরিবহন শ্রমিক ও গৃহিনী রয়েছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে গত সোমবার রাতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। একজন হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে পালিয়ে গেছে।
যশোর সিভিল সার্জন অফিরেস এমওসিএস ডা. রেহনেওয়াজ জানিয়েছেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গতকাল ১শ’ ৯টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এর ভেতর ২৩ জন নতুন রোগী কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে। ৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন পুরাতন ফলোআপ নমুনা পরীক্ষা করে। এছাড়া ৬টি রিপোর্ট পরীক্ষায় কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। নতুন করে যে ২৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে পরিসংখ্যানে যশোর সদর উপজেলা ও শহরে সবচেয়ে বেশি। এ উপজেলায় ১২ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। যশোরের অভয়নগরে ৪ জন, বাঘারপাড়ায় ১ জন, চৌগাছায় ১ জন, কেশবপুরে ১ জন, মনিরামপুরে ২ জন ও শার্শা উপজেলায় ২ জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়।
সূত্র জানিয়েছে, আক্রান্তরা হচ্ছেন- যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্মী শহরতলীর বিরামপুরের সাথী খান (২৭), একই গ্রামের গৃহিনী নুসরাত (১৮), শহরের ঘোপ এলাকার বৃদ্ধা শামসুন্নাহার (৭২), যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী তহীদের স্ত্রী খুলনা দিঘলিয়ার সেনহাটী গ্রামের সুমাইয়া (২২), বারান্দিপাড়ার জনি (২৪), শংকরপুরের কাজী আজম হোসেন (৪১) তার বোন ফারিহা (১৮), র‌্যাব-৬ যশোরের সদস্য বর্তমানে খুলনা র‌্যাব হেড কোয়ার্টারে অবস্থানরত ওহিদুজ্জামান (৪৬), কেশবপুরের ওষুধ কোম্পানি স্কয়ার ফার্মার মেডিকেল প্রতিনিধি শহরের ঝুমঝুমপুরের ইকবাল হোসেন (২৮), ঝুমঝুমপুরের নজরুল ইসলাম (৫০), শহরের বেজপাড়ার ব্যবসায়ী শ্যামল পাল (৬৮), ঘুরুলিয়ার গৃহবধূ আখি বিশ্বাস (২২), ভায়না গ্রামের পরিবহন শ্রমিক জাহাঙ্গীর আজম (৩৫), কেশবপুর পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা খুলনা ওহাব সড়কের মেহেরুন্নেছা (৩৫), মনিরামপুরের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের গাড়ীচালক আব্দুস সোবহান (৫৫), অভয়নগর নওয়াপাড়া জুট মিলের শ্রমিক মোফাজ্জল হোসেন (৫২), চৌগাছা কুঠিপাড়ার শাহীন আলম (৪০), শার্শা থানার এসআই গোলাম নবীর হোসেন (৪৪), শার্শার কাজিরবাদ গ্রামের জয় (২০), অভয়নগর নওয়াপাড়া সোনালী ব্যাংক নওয়াপাড়া শাখার কর্মরত চেঙ্গুটিয়ার এনায়েত হোসেন (৩০), একই ব্যাংক কর্মরত ব্যাংকার নওয়াপাড়ার আসিফুল আজম (৩৫), যশোর শহরের পুরাতন কসবার রেজাউল ইসলাম (৩৫), নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী জেএম মেহেদী হোসেন (৩৯) একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন। জানা গেছে, করোনার উপসর্গ নিয়ে নিজ বাসভবনে এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যশোর শহরের কারবালা সরকারি মহিলা কলেজ রোডের বাসিন্দা বিশিষ্ট ঠিকাদার খালেকুজ্জামান হবি মারা গেছেন। নিজে অসুস্থ থাকাকালে তার অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়। তখন একই সাথে হৃদ রোগে আক্রান্ত হন এবং সোমবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। ডায়াবেটিস রোগেও ভুগছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর পর রাতে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন ওই বাসায় যান। এ সময় মরদেহ তার পৈত্রিক নিবাস কিশোরগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন তাদের সতর্কতার সাথে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এর আগে যশোরের অভয়নগরে কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে শিল্পপতি আমির হোসেন ও আনিছুর রহমান নামে দু’জন মারা যান। সরকারিভাবে তাদের দু’ব্যক্তির মৃত্যু জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কোভিড-১৯ এ মৃত্যু তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল আনছার আলী (৫৫) নামে এক ব্যক্তি পালিয়ে গেছেন। তার বাড়ি শহরের বারান্দীপাড়ায়। গত ২০ জুন করোনার উপসর্গ নিয়ে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের হার দ্রুত বিস্তার ঘটছে। কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাচ্ছে না। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ কি হবে, এর শেষ কোথায় তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাগণ।