লকডাউন কার্যকরে কঠোর হচ্ছে যশোর জেলা প্রশাসন

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জোনভিত্তিক লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর হচ্ছে যশোর জেলা প্রশাসন। যেখানে করোনা রোগীর অবস্থান সেসব এলাকায় লকডাউন কার্যকরে জিরো টলারেন্সে থাকবে প্রশাসন। মঙ্গলবার যশোর সার্কিট হাউজে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ও প্রতিরোধে গঠিত জেলা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। যশোরের জেলা প্রশাসক ও কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আরিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এর বাইরেও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভা সূত্রে জানা যায়, ১৬ জুন জেলার ১৭টি এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করে ওই সব অঞ্চল লকডাউন ঘোষণা করা হয়। পর্যায়ক্রমে আরও কিছু ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই মুহূর্তে যশোর শহরের প্রায় অর্ধেক অংশ রেড জোনভুক্ত। এসব এলাকাকে লকডাউনের আওতায় আনা হলেও সিদ্ধান্ত মূলত কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। জনজীবন আগের মতোই স্বাভাবিকভাবে চলছে। অভিযোগ করা হয়, সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে একতরফাভাবে রেড জোন ঘোষণা করা হওয়ায় এবং এর সঙ্গে জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়দের সম্পৃক্ত না করায় ঘোষণা কার্যকর করা যায়নি। এ অবস্থায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে নানা সমালোচনা করে সংবাদ প্রকাশ হতে থাকে। এমনি পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ও প্রতিরোধে গঠিত যশোর জেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রেড জোনভুক্ত এলাকায় লকডাউন কার্যকর না হওয়ায় এ নিয়ে উপস্থিত সকলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় রেড জোনভুক্ত এলাকায় কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের ব্যাপারে সবাই একমত হন। তবে যে বাড়িতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি অবস্থান করছেন, সেটিকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট এলাকায় কড়াকড়ি লকডাউন কার্যকর করা হবে। এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। বেশি করে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের
জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শফিউল আরিফ বলেন, যশোরে উদ্বেগজনক হারে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করতে হবে। তিনি বলেন, লকডাউন কার্যকর করতে জনপ্রতিনিধিদের আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করা হবে। লকডাউন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের তা অবহিত করা হবে। জনপ্রতিনিধিরা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে লকডাউন কার্যকর ও সংশ্লিষ্ট এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখবেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকায় এই সংক্রান্ত সতর্কতা মাইকেও প্রচার করা হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, শহরের একটি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। ওই কিনিককে লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, যশোর শহরের বকচরে অবস্থিত ব্যব্যাধি হাসপাতাল ছাড়াও কেন্দ্রীয় বাসটারমিনালের কাছে অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতাল গ্রিন ড্রিম লিমিটেডকে (জিডিএল) করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হবে। ব্যব্যাধি হাসপাতালে থাকা করোনা রোগীদের জিডিএলে আনা হবে। এই সময়কালে ব্যব্যাধি হাসপাতালটির প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। এসব বিষয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, মঙ্গলবার সভায় লকডাউন কার্যকর হচ্ছে না কেন সে বিষয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। শহর এলাকায় সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের মাধ্যমে লকডাউন কার্যকর করা হবে। গোটা বিষয়টি দেখাশুনা করার জন্য একটি মনিটরিং টিম আগেই গঠন করা হয়েছে। এই টিমে একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন ডাক্তার, পৌরসভার একজন কর্মকর্তা, গণমাধ্যম প্রতিনিধি আছেন। তারা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি অফিসে বসে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে করোনা প্রতিরোধ কমিটি কাজ করবে। কয়টা বাড়ি লকডাউন করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত তারাই নেবেন। লকডাউন হয়ে যাওয়া এলাকায় বসবাসরত গরিবদের পৌরসভার প থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। পৌরসভার বাইরে যশোরের অন্যান্য এলাকাতেও একই নিয়মে লকডাউন বাস্তবায়ন হবে। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, করোনা সংক্রান্ত সেনা তৎপরতায় যশোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লে. কর্নেল নিয়ামুল হালিম খান, পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন, প্রেস কাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনসহ আরও অনেকে।