যশোরে হাসপাতালে করোনা উপসর্গে আরও একজনের মৃত্যু : আক্রান্ত ৬

0

বিএম আসাদ ॥ করোনার উপসর্গ নিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে গতকাল আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। মোংলা ট্যুরিস্ট পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শকসহ মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬ জন। আক্রান্তদের ভেতর ৩ জনের বাড়ি ভিন্ন জেলায়।
যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জিয়াউর রহমান (৩৭) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগের উপসর্গ নিয়ে তিনি পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। করোনার উপসর্গ থাকায় ওয়ার্ডের চিকিৎসকগণ সেখান থেকে তাকে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করেন। এরপর কাল বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। জিয়াউর রহমান যশোরের শার্শা উপজেলার বেনীপুড়ি গ্রামের আশরাফ আলীর পুত্র। এর আগেরদিন সদর উপজেলার নওদাগা গ্রামের সাধু বিশ্বাস (৩০) ও শহরের ঝুমঝুমপুরের আশরাফ আলীর (৫৭) মৃত্যু হয়। তাদের মৃত্যুর পর আইসোলেশন ওয়ার্ডের ওই বেডগুলোতে রোগী রাখা হচ্ছে না। জীবাণুমুক্তকরণের জন্য বেডগুলো খালি রাখা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
এদিকে, যশোর সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যানে কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্তের তালিকায় ব্যাপক গরমিল ছিলো। দুটি ল্যাব থেকে এদিন মোট ১৮টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এর ভেতর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে রিপোর্ট আসে ১৩টি। এর ভেতর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল একটি। হাসপতাালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার দেহে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। ২০ বছর বয়স্ক ওই যুবকের বাড়ি যশোর শহরের নাজির শংকরপুরে। তিনি প্রাণ কোম্পানিতে চাকরি করেন। ১৫ জুন রাতে তাকে হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে করোনার উপসর্গ থাকায় কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্দেহজনকভাবে আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করেন। ১৬ জুন তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগ্রহকৃত নমুনা যবিপ্রবি’র ল্যাবে পরীক্ষায় ওই যুবকের শরীরে করোনা পজেটিভ বলে রিপোর্ট আসে। যবিপ্রবি থেকে পাঠানো ১৩টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট ছাড়াও খুলনা মেডিকেল কলেজের ল্যাব থেকে ৫টি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। ওই ৫টি রিপোর্টই ছিল করোনা পজেটিভ বা করোনায় আক্রান্ত। রিপোর্টগুলো ছিল গোলমেলে। এর মধ্যে দুই জনের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। ঠিকানাও ছিল ভুল। তাদের খোঁজ করতে যশোর পুলিশ সুপারের কাছে গতকাল সিভিল সার্জন অফিস থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পরে অবশ্য ঠিকানা মিলেছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজের ল্যাব থেকে পাঠানো রিপোর্ট যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে একজন যুবক (আইসোলেশনে) আক্রান্ত হলেও যশোর সদরে আক্রান্ত দেখানো হয়েছে ২ জন। আক্রান্ত রুনা পারভীন (৪৫) নামে ওই নারীকে যশোর রোড কোতয়ালি ঠিকানা দিয়ে যশোর সদর উপজেলার আক্রান্তের সংখ্যা ২ জন দেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে জানা যায় তার বাড়ি খুলনা জিলা স্কুলের সামনে। খুলনা ফুলতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তিনি করোনা সন্দেহে পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছিলেন। যশোরের তালিকা হতে বাদ দেয়ার পর যশোর সদর উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ জন। অনুরূপভাবে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয় অমল কুমার ঘোষ (৬০) নামে এক ব্যক্তির। তার ঠিকানা দেয়া হয় অভয়নগর যশোর বলে। কিন্তু তার বাড়ি কুমিল্লার নবীনগরে। এলাকায় বেড়াতে এসে করোনা সন্দেহে তিনি পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছিলেন। অমল কুমার ঘোষ এ প্রতিবেদকের কাছে মোবাইল ফোনে তার প্রকৃত ঠিকানা দিয়ে কথা বলেছেন। যশোর সিভিল সার্জন অফিস গতকাল তাদের সন্ধ্যান পায়নি। সন্ধ্যান না পেয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত ওই রোগী উদ্ধারের জন্য যশোর পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি দিয়েছেন। পরে পুলিশ তাদের ঠিকানা পেয়েছেন বলে জানা গেছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হতে ৩৪ বছর বয়স্ক এক নারীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তার বাড়ি ঠিকানা নড়াইলে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ তালিকায় ঠিকানা দেয়া হয়েছে অভয়নগর নওয়াপাড়া বলে। তিনি ঢাকা সিএমএইচএ ভর্তি রয়েছেন। অভয়নগর রাজঘাটের ৪০ বছর বয়স্ক এক ব্যবসায়ী আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। এ উপজেলায় গতকাল ৩ জন আক্রান্ত দেখানো হলেও পরবর্তীতে বাড়ির প্রকৃত ঠিকানা জানার পর নিয়ম অনুযায়ী স্ব-স্ব জেলার তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে বলে সিভিল সার্জন জানিয়েছেন।
যশোর সদর ও অভয়নগর উপজেলা ছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মেহেদী হাসান (২৬) নামে এক পুলিশ অফিসার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার বাড়ি বেনাপোলে। তিনি খুলনার মোংলা ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই)। দু’মাস আগে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তিনি নিজ বাড়িতে রয়েছেন।