সুদিন ফিরতে পারে দার্জিলিংয়ের চা শিল্পে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নেপালে উৎপাদিত চায়ের সঙ্গে ভারতের দার্জিলিং চায়ের বিরোধ বেশ দীর্ঘদিনের। অনেকের ধারণা, দার্জিলিং চায়ের জগদ্বিখ্যাত সুনামে ভাগ বসিয়েছে নেপালের চা। এমনকি খোদ ভারতের বাজারে নেপালের চায়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। এদিকে মহামারীর কারণে এর আগে থেকেই নেপাল থেকে ভারতে চা রফতানি বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতি দার্জিলিংয়ের চা শিল্পের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর ইকোনমিক টাইমস।
এমনিতেই চলতি বছরে দার্জিলিং চা শিল্পের অবস্থা বেশ নড়বড়ে। আগে থেকে লোকসানে থাকা পানীয় পণ্যটির বাজারে নতুন সংকট তৈরি করেছে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। পণ্যটির রফতানি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় দেশীয় বাজারই ভরসা পণ্যটির। ফলে এ সময় নেপালের চায়ের অনুপস্থিতি দার্জিলিং চায়ের জন্য ব্যাপক সুযোগ এনে দিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অতুলনীয় স্বাদ ও অনন্য সুঘ্রাণের কারণে দার্জিলিং চায়ের খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে। পুরো পৃথিবীর অন্যতম দামি চায়ের স্বীকৃতি পেয়েছে পানীয় পণ্যটি। তবে ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে নেপালে উৎপাদিত চায়ের মান দার্জিলিং চায়ের অনেকটাই কাছাকাছি। এমনকি কোনটা দার্জিলিংয়ের চা আর কোনটা নেপালের চা, ভোক্তাদের পক্ষে তা নির্ণয় করা কঠিন। ফলে খুব দ্রুতই দার্জিলিং চায়ের জায়গা দখল করে নিতে শুরু করে নেপালের চা। দামও পৌঁছেছে দার্জিলিং চায়ের কাছাকাছি।
বিশেষ করে ২০১৭ সালের পর থেকে ভারতের বাজারে নেপালে উৎপাদিত চায়ের জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। ওই বছরের জুনে পাহাড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে দার্জিলিং চায়ের সংকট শুরু হয়। দার্জিলিংয়ে তখন চায়ের ভরা মৌসুম। শ্রমিকদের অনেকেই পাতা তোলা বন্ধ করে আন্দোলনে নেমে পড়েন। আন্দোলনের জেরে দার্জিলিং চায়ের উৎপাদন ও সরবরাহ রেকর্ড কমে যায়। এতে নেপাল থেকে চা আমদানি বাড়িয়ে দেন ইউরোপের আমদানিকারকরা। ফলে পশ্চিমা বাজারে নেপালি চায়ের অবস্থান শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এমনকি এ সময় ভারতেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে পণ্যটি।
বর্তমানে নেপালের চায়ের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার হয়ে উঠছে ভারত। তবে নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় লকডাউন ও সরকারি বিধিনিষেধের জেরে গত কয়েক মাস ধরে নেপাল থেকে চা ক্রয় বন্ধ রেখেছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি সীমান্ত নিয়ে দুদেশের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। যদিও নেপাল এরই মধ্যে চা রফতানি শুরুর অনুমতি চেয়েছে ভারতের কাছে। তবে দার্জিলিং টি ট্রিডারসরা এ বিষয়ে সরকারকে স্থিতিশীল থাকার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছে।
দার্জিলিং টি অ্যসোসিয়েশনের (ডিটিআই) সেক্রেটারি কৌশিক বসু বলেন, ভারতের সঙ্গে নেপালের ফ্রি ট্রেড চুক্তি রয়েছে, তাই আমরা দেশে নেপালের চায়ের প্রবেশ বন্ধ করতে বলতে পারি না। তবে আপাতত এ বিষয়ে সরকারকে স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখতে অনুরোধ করছি। নেপালের চা ভারতে প্রবেশ করলেও এটিকে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি ইন্ডিয়ার নির্ধারিত মানদণ্ডগুলো মেনে চলা উচিত।
লকডাউনে দার্জিলিংসহ গোটা ভারতের সব চা বাগান ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেশটিতে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বছরের শুরু থেকে জুন অবধি দার্জিলিং চায়ের উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেছে। এছাড়া এ সময়টাতেই পানীয় পণ্যটির বেশির ভাগ রফতানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে থাকে, যা এ বছর একেবারেই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ বিষয়ে কৌশিক বসু বলেন, দার্জিলিং চায়ের সবচেয়ে বড় ক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান। সব দেশেই নভেল করোনাভাইরাসের মারাত্মক সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। ফলে এসব দেশেও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা চরমে উঠেছে, যার প্রভাব পড়েছে দার্জিলিং চায়ের রফতানি খাতে। দার্জিলিংয়ে বছরে ৭৮ থেকে ৮০ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়, যা অর্ধেক বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়।
ভারতের যখন এ অবস্থা, তখন নেপালে পুরোদমে চায়ের উৎপাদন চলছে বলে দাবি করেছেন দার্জিলিংয়ের একজন চা ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, মহামারীর মধ্যেও নেপাল পণ্যটির উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। তাদের হাতে প্রচুর চা পাতা রয়েছে এবং তারা তা রফতানি করতে আগ্রহী।
কৌশিক বসু বলেন, নেপালের চায়ের ক্রয়-বিক্রয়ে নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে ডিটিএ। কারণ বাজারে বর্তমানে দার্জিলিং চায়ের সরবরাহ খুব কম। এ অবস্থায় নেপালের চা প্রবেশের অনুমতি পেলে সহজেই অভ্যন্তরীণ বাজার দখলে নিয়ে নেবে।